বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ডেস্ক : ২০২৪ সালে প্রযুক্তি খাতের সবচেয়ে বড় আলোচনার বিষয় হতে যাচ্ছে নতুন সব এআই মডেলের ঢেউ, অগমেন্টেড রিয়ালিটির জগতে অ্যাপলের প্রবেশ ও অনলাইন নিরাপত্তা ব্যবস্থা।
বিভিন্ন দেশের আসন্ন নির্বাচনকে সামনে রেখে সাইবার নিরাপত্তা এবং গুজব মোকাবেলায় সামাজিক মাধ্যমের সক্ষমতার ওপরেও নজর থাকবে অনেকের।
২০২৪ সালে প্রযুক্তি খাতের সম্ভাব্য বড় বড় ঘটনা নিয়ে বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ব্রিটিশ দৈনিক ইন্ডিপেন্ডেন্ট।
জেনারেটিভ এআই মডেলের পরবর্তী ঢেউ
২০২৩ সালে চ্যাটজিপিটি ও গুগল বার্ডের মতো জেনারেটিভ এআই মডেল দৈনন্দিন জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে। তবে, আগামী বছরে এসব মডেলের পরবর্তী প্রজন্ম বাজারে আসার সঙ্গে সঙ্গে এআই মডেলের ব্যবহার আরও বাড়বে।
অনেক বিশেষজ্ঞ ইতোমধ্যেই অনুমান করছেন পরবর্তী প্রজন্মের এসব মডেল বর্তমানে বাজারে থাকা এআই মডেলগুলোর তুলনায় যথেষ্ট শক্তিশালী হতে যাচ্ছে, যার অর্থ নতুন মডেলগুলো আরও জটিল সব কাজ করে দিতে পারবে।
বিভিন্ন কাজে সহায়তা করার ক্ষেত্রে এর উপযোগিতা আরও বাড়বে। আর এর ফলে শিক্ষা ক্ষেত্রে ও চাকরির বাজারে এসব মডেলের প্রভাবকে ঘিরে সৃষ্ট উদ্বেগও বাড়বে।
বিশ্বজুড়ে এর প্রতিক্রিয়া হিসেবে পেশাদার ক্ষেত্রে কীভাবে এবং কখন এআই ব্যবহার করা যাবে সে বিষয়ে হতে যাচ্ছে তুমুল কাটাছেঁড়া। এই জনপ্রিয় ও অতি দ্রুত প্রসারণশীল শীল্পকে কীভাবে নিয়ন্ত্রণে রাখা যায় সে বিষয়ে বিশ্বের অনেক দেশ এরইমধ্যে আলোচনা শুরু করেছে।
অ্যাপলের ‘ভিশন প্রো’ ও মিক্সড রিয়ালিটির মূলধারায় প্রবেশ
ভার্চুয়াল ও মিক্সড রিয়ালিটি বেশ কয়েক বছর ধরেই বাজারে রয়েছে, ‘প্লেস্টেশন ভিআর’ ও মেটা’র ‘কোয়েস্ট’ হেডসেটের মতো নানা মাত্রার সাফল্য নিয়ে।
তবে, ২০২৪ সালে অ্যাপলের মিক্সড রিয়ালিটি হেডসেট ‘ভিশন প্রো’-এর হাত ধরে এ প্রযুক্তি প্রথমবারের মতো মূলধারায় প্রবেশ করতে চলেছে। যদিও এর পক্ষে বিপক্ষে অনেক যুক্তি রয়েছে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে ইন্ডিপেন্ডেন্ট।
এ ডিভাইসটি চালু করলে ব্যবহারকারীরা বাস্তব জগতের ওপরেই বিভিন্ন অ্যাপ্লিকেশন দেখতে পাবেন এবং হাতের অঙ্গভঙ্গির সাহায্যে সেগুলো ব্যবহার করতে পারবেন।
অ্যাপলের এ প্রযুক্তির বেশ কিছু দিক নতুন নয়। তবে, বিশেষজ্ঞরা অনুমান করছেন অ্যাপলের প্রযুক্তির পরিচিতি ও যে কোনো প্রযুক্তির ক্ষেত্রে জনসাধারণের দৃষ্টি আকর্ষণের ক্ষমতা ভার্চুয়াল ও মিক্সড রিয়ালিটির ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে উঠতে পারে।
তবে, বেশ ধীরে সুস্থে বাজারে আসতে চলেছে ‘ভিশন প্রো’। এখন পর্যন্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেই কেবল উন্মোচনের বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া গেছে। অবশ্য গ্রাহকরা পছন্দ করলে ডিভাইসটি আরও বাজারে দেখা যেতে পারে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে ইন্ডিপেন্ডেন্ট।
চলমান সাইবার নিরাপত্তা উদ্বেগ
যুক্তরাজ্যসহ বিশ্বের বিভিন্ন রাষ্ট্রকে এরইমধ্যে সতর্ক করা হয়েছে, তারা সাইবার স্পেসে রাষ্ট্র সমর্থিত হ্যাকারদের ক্রমবর্ধমান হুমকির সম্মুখিন হতে পারেন। বিশেষ করে ইউক্রেইন ও গাজায় চলমান সংঘাতের ফলে বিশ্বব্যাপী অস্থিশীলতা এ আগুনে আরও ঘি ঢালবে।
ব্রিটিশ সাইবার নিরাপত্তা সংস্থা ‘ন্যাশনাল সাইবার সিকিউরিটি সেন্টার (এনসিএসসি) তাদের ২০২৩ সালের বার্ষিক পর্যালোচনায় র্যানসমওয়্যার আক্রমণের ক্রমবর্ধমান হুমকির বিষয়ে সতর্ক করেছে। পাশাপাশি, সাইবার স্পেসের ওপরে এআইয়ের প্রভাব, বিশেষ করে অপরাধীদের আরও বিশ্বাসযোগ্য স্ক্যাম বা সোশাল ইঞ্জিনিয়ারিং তৈরিতে সহায়তা করার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে সংস্থটি।
যুক্তরাজ্য বড় পরিসরের র্যানসমওয়্যার আক্রমণের জন্য অপ্রস্তুত, এবং তাদের পরিকল্পনায় বড় পরিবর্তন না করা হলে দেশটি আক্রমণের ফলে স্থবির হয়ে যেতে পারে বলে দাবি করেছে ব্রিটিশ সংসদের একটি যৌথ কমিটি।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট, এবং সম্ভবত যুক্তরাজ্যসহ ২০২৪ সালে বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশে বড় নির্বাচন হওয়া কথা থাকায় শক্তিশালী সাইবার নিরাপত্তা অনেকের মূল লক্ষ্য থাকবে।
নির্বাচন ও গুজব
সাইবার নিরাপত্তার প্রযুক্তি জগতের অন্যতম বড় আলোচনার বিষয় হতে পারে ২০২৪ সালে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া অনেকগুলো নির্বাচন।
এর আগে সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার করে ভোটারদের প্রভাবিত করার বিষয়টি আবারও তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে দেখা হবে। বিশেষ করে ইলন মাস্কের ‘এক্স’-এর মালিকানা ও প্ল্যাটফর্মটিতে ব্যবহারকারীদের অপরিশুদ্ধ ও মুক্ত্য বক্তব্য প্রকাশের অনুমতি দেওয়ায় এ নজরদারি আরও বাড়বে।
এআইয়ের উত্থান এক্ষেত্রেও একটি বড় ভূমিকা পালন করবে। এরইমধ্যেই বেশ কয়েকজন বিশিষ্ট রাজনীতিবিদের ‘ডিপফেইক’ অনলাইনে প্রচারিত হয়েছে। এআই দ্বারা তৈরি ভুল তথ্যের ছড়াছড়ি মোকাবেলার বিষয়টি এরইমধ্যেই যুক্তরাজ্যে আলোচনা হচ্ছে।
২০২৪ সালে যুক্তরাজ্যের নির্বাচনের আগে ডিপফেইকগুলোর প্রচার মোকাবেলায় ‘শক্তিশালী পদক্ষেপ’ আশা করছেন বলে এ মাসের শুরুতে সংসদ সদস্যদের উদ্দেশ্যে বলেছেন ব্রিটিশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক মন্ত্রী মিশেল ডোনিল্যান।
যুক্তরাজ্যভিত্তিক ফ্যাক্ট-চেকিং দাতব্য সংস্থা ‘ফুল ফ্যাক্ট’ সতর্ক করেছে, এআই দিয়ে তৈরি কনটেন্টের ফলে অনলাইনে দেখা যে কোনো কিছুর ওপরে জনসাধারণের আস্থা কমছে। পাশাপাশি, জাল কনটেন্ট শনাক্তে সহায়তা করার জন্য জনগণের মিডিয়া স্বাক্ষরতা বাড়াতে ব্রিটিশ সরকারকে আরও তাহবিল দেওয়ার আহ্ববান জানিয়েছে সংস্থাটি।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।