লাইফস্টাইল ডেস্ক : দেশের ২৭টি জেলায় রাসেলস ভাইপারের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। এ নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়েছে ভীষণভাবে। কিন্তু আতঙ্ক দিয়ে তো আর নিষ্কৃতি মেলে না।
শুধু রাসেলস ভাইপার কেন, বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় ছড়িয়ে আছে গোখরা, কেউটেসহ নানা জাতের বিষধর সাপ। প্রায়শই মানুষ এসব সাপ দ্বারা আক্রান্ত হয়। সাপ কামড়ালেই মানুষ এক রকম আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে। ফলে চিকিৎসা ব্যাহত হয়। ভুক্তভোগীদের একটি বড় অংশই আবার চিকিৎসক বা হাসপাতালের শরণ না নিয়ে ওঝা বা সাপুড়েদের শরণাপন্ন হন। ফলে নিষ্কৃতি তো দূর, সংকট বাড়ে।
এ জন্য জানা প্রয়োজন যে, সাপ কামড়ালে আসলে কী করা উচিত। আর কী করা উচিত নয়। এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের আওতায় অসংক্রামক ব্যাধি নিয়ন্ত্রণ প্রকল্পের অধীনে একটি প্রশিক্ষণ কর্মশালা ও গবেষণা হয়। এতে সাপের কামড়ের পর করণীয় সম্পর্কে বিস্তারিত বলা হয়েছে।
সাপে কাটলে যা করবেন
* যেকোনো সাপ কামড়ানোর পর ভুক্তভোগীকে রক্ষায় বেশ কিছু পদক্ষেপ নিতে হবে। মূলত ভুক্তভোগীকে আশ্বস্ত করা এবং তাকে সম্ভাব্য ক্ষতি থেকে রক্ষার উদ্দেশ্যেই তাৎক্ষণিকভাবে কিছু পদক্ষেপ নিতে হবে। এর মধ্যে রয়েছে—
* শুরুতেই ভুক্তভোগীকে আশ্বস্ত করতে হবে যে, সাপের কামড় মানেই মৃত্যু নয়। প্রকৃতিতে থাকা অধিকাংশ সাপেরই বিষ নেই। আর যেগুলো বিষধর বলে পরিচিত, সেগুলোও সব সময় কামড়ের সাথে যথেষ্ট বিষ ঢালতে পারে না। আর বিষ যেমন আছে, তার চিকিৎসায় অ্যান্টিডটও আছে।
* কামড়ের স্থান থেকে বিষ যেন শরীরের অন্য অংশে ছড়াতে না পারে তার ব্যবস্থা নিতে হবে।
* সাপের কামড়ের পর ভুক্তভোগীকে স্থির করতে হবে। নড়াচড়া করা যাবে না। যত নড়াচড়া করবে শরীরের রক্তের সাথে ওই বিষ তত মিশে যাবে।
* পায়ে কামড় দিলে বসে পড়তে হবে।
* হাত বা অন্য কোনো অংশে কামড়ালে সে অংশ নড়ানো যাবে না।
* সবচেয়ে ভালো হয়, হাড় ভাঙলে যেভাবে দুপাশে সহায়ক হিসেবে কাঠ বা অন্য কিছু দিয়ে বেঁধে ফেলা হয়, ঠিক সেভাবে আক্রান্ত স্থানকে মাঝে রেখে বেঁধে ফেললে। এ ক্ষেত্রে ক্ষতস্থানটি অবশ্যই পরিষ্কার করে নিতে হবে। ক্ষতস্থানের ওপর তো বটেই সাথে এর আশপাশের অংশও ব্যান্ডেজ করে ফেলতে হবে।
* চিকিৎসকের কাছে বা হাসপাতালে পৌঁছানোর আগে এই ব্যান্ডেজ কোনোভাবেই খোলা যাবে না।
* হাতে পায়ে চুড়ি, আংটি, নুপূর, বা আঁটসাটো পোশাক থাকলে খুলে নিন।
* আক্রান্ত ব্যক্তিকে কাত করে লম্বাভাবে শুইয়ে দিন।
* শ্বাস নিতে কষ্ট হলে মুখে কৃত্রিম শ্বাস দেওয়ার চেষ্টা করুন।
* সাপ মারা বা… তাকে ধরার জন্য অযথা সময় নষ্ট করবেন না।
* সাপটিকে যদি মেরে ফেলা হয়, তাহলে আক্রান্ত ব্যক্তিকে হাসপাতালে নেওয়ার সময় সাপটিও সাথে নিন।
সাপে কামড়ালে যা করবেন না
* ক্ষতস্থান অতিরিক্ত শক্ত করে বাঁধবেন না।
* ক্ষতস্থান কেটে বিষ বের করার চেষ্টা করবেন না।
* সাপুড়ে বা ওঝাদের ডেকে অযথা সময় নষ্ট করবেন না।
* বমি হলে, মুখ দিয়ে ফেনা বের হলে বা কথা বলতে কষ্ট হলে মুখ দিয়ে কিছু দিতে যাবেন না।
* কোনো রাসায়নিক ব্যবহার করে বা অন্য কোনোভাবে ক্ষতস্থানের মুখ বন্ধের চেষ্টা করবেন না।
* কোনো ধরনের পাথর, লালা, পটাসিয়াম পারম্যাঙ্গানেট, কাদা, গোবর, কোনো ধরনের বীজ বা ভেষজ ওষুধ প্রয়োগ করতে যাবেন না। সাপের কামড়ের নিদানে এগুলো কিছু করতে পারে না।
* অ্যালকোহল বা এ ধরনের কোনো কিছু প্রয়োগ করবেন না।
* অ্যাসপিরিন বা কোনো ব্যাথানাশক ওষুধ দেবেন না।
* তেল, ঘি, মরিচ ইত্যাদি গৃহস্থালি দ্রব্যাদি অনেক সময় প্রয়োগ করতে দেখা যায়। এগুলো কুসংস্কার মাত্র।
* আতঙ্কগ্রস্ত হবেন না। ভুক্তভোগীকে আশ্বস্ত করুন বরং।
* চিকিৎসা সেবা নিতে দেরি হয় এমন যেকোনো কাজ থেকে বিরত থাকুন।
সাপে কাটা রোগীদের ক্ষেত্রে ‘রুল অব ১০০’–কে খুবই গুরুত্ব দেন এ সম্পর্কিত বিশেষজ্ঞরা। এই রুল অব হান্ড্রেড হচ্ছে—সাপে কামড়ানোর ১০০ মিনিটের মধ্যে যথাযথ পরীক্ষার পর চিকিৎসকের পরামর্শক্রমে ১০০ মিলিমিটার অ্যান্টিভেনম ভুক্তভোগীর শরীরে প্রবেশ করাতে পারলে রোগীর বেঁচে যাওয়ার সম্ভাবনা প্রায় শতভাগ। তাই করণীয়র দিকে মনোযোগ দিন। অহেতুক আতঙ্কিত না হয়ে এবং অতি অবশ্যই ওঝা বা সাপুড়ের মতো ভুল পথে হেঁটে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া এবং নিকটস্থ হাসপাতালে রোগীকে নেওয়ার ব্যবস্থা করুন। তাহলেই সাপে কাটা রোগীকে বাঁচানো যাবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।