বিজ্ঞান ও প্রযক্তি ডেস্ক : কথা বলার জন্য বর্তমানে জনপ্রিয় অ্যাপ হলো ইমো। বিশেষ করে প্রবাসীদের কাছে অ্যাপটি সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়। বিদেশ থেকে পরিবারের সঙ্গে কথা বলতে এখন ফোনের ব্যবহার কমে গেছে। প্রবাসীরা পরিবার বা স্বজনের সঙ্গে ইন্টারনেট ব্যবহার করে ইমোতে কথা বলেন বেশি। তাই প্রতারক চক্র ইমো ব্যবহারকারী প্রবাসীদের টার্গেট করছে। যে কারণে প্রবাসীরা সবচেয়ে বেশি হ্যাকিং ও প্রতারণার শিকার হচ্ছেন।
ইতোমধ্যে প্রবাসী ও তাদের স্বজনদের প্রতারণার ফাঁদে ফেলে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে প্রতারক চক্র। তবে একটু সচেতন হলে এই প্রতারণার হাত থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব।
ইমো কী, কেন জনপ্রিয়
ইমো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক কোম্পানি পেজবাইটস ইনকরপোরেশনের মালিকানাধীন একটি কমিউনিকেশন প্ল্যাটফর্ম। এই অ্যাপ ব্যবহার করে ইন্টারনেটের মাধ্যমে বিশ্বের যেকোনও প্রান্তে অভিডিও-ভিডিও কল করা যায়। ইমোর জনপ্রিয়তার অন্যতম কারণ হলো ধীরগতির ইন্টারনেটেও নিরবচ্ছিন্ন কথা বলা যায়। ফলে ইন্টারনেট খরচও কম হয়। অন্যান্য অ্যাপের তুলনায় ইমো প্রায় ২০ থেকে ৩০ শতাংশ পর্যন্ত ডাটা সাশ্রয় করে থাকে। বিশ্বের ১৫০টিরও বেশি দেশে ৬২টি ভাষায় ২০ কোটিরও বেশি মানুষ ইমো ব্যবহার করে।
দেশের প্রত্যন্ত এলাকায় প্রবাসীদের স্বজনরাও কম গতির ইন্টারনেট ব্যবহার করে ইমোতে ছবি, ভয়েস মেসেজ, টেক্সট মেসেজ, ভিডিও শেয়ার করতে পারছে। এতেও দুই প্রান্তে উচ্চগতির ইন্টারনেট সংযোগের প্রয়োজন হয় না। অন্যদিকে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোয় হোয়াটস অ্যাপে অডিও-ভিডিও কল করার সুযোগ না থাকায় ইমোই তাদের একমাত্র ভরসা।
ইমোতে যেভাবে প্রতারণা হয়
প্রতারক চক্রের মূল টার্গেট প্রবাসী, তাদের পরিবার ও আত্মীয়স্বজন। প্রথমে প্রতারক চক্র ইমো ব্যবহারকারীকে পুরস্কার ও লটারিতে টাকা পাওয়ার তথ্য সরবরাহ করে। সেই টাকা পেতে ‘ইমো অ্যাকাউন্ট ভেরিফিকেশন’ করতে হবে, জানিয়ে মোবাইলে ভেরিফিকেশন কোড চায় চক্রটি। উপহার বা টাকা পাওয়ার লোভে ব্যবহারকারীরা গোপন কোড দিয়ে দেয় প্রতারক চক্রকে।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ইমোতে হ্যাকিংয়ের চেয়ে প্রতারণার শিকার হয় বেশির ভাগ মানুষ। পুরস্কার, লটারি জেতা বা অন্য কোনও আর্থিক সুবিধা পাওয়ার আশায় তারা প্রতারক চক্রের হাতে পাসওয়ার্ড পরিবর্তন কোড বা অ্যাকাউন্টে প্রবেশ করার জন্য ভেরিফিকেশন কোড দিয়ে দেয়। কোড পেলে প্রতারক চক্র নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেয় ইমো অ্যাকাউন্ট। এরপর তাদের বন্ধুতালিকায় থাকা ব্যক্তিদের কাছ থেকে নানা অজুহাতে টাকা চেয়ে মেসেজ দেয় প্রতারক চক্র। তখন ব্যবহারকারী ভাবে যে তার ইমো অ্যাকাউন্ট হ্যাক হয়েছে। বাস্তবতা হচ্ছে, লোভে পড়ে ব্যবহারকারী ভেরিফিকেশন কোড দিয়েই সহায়তা করেছে প্রতারক চক্রকে।
ইমো অ্যাকাউন্টের সুরক্ষায় কী করবেন
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নিজের লোভকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। ব্যক্তিগত তথ্য গোপন রাখতে হবে। তাহলেই এ ধরনের প্রতারণা থেকে সুরক্ষিত থাকা সম্ভব। প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধ বেশি কার্যকর। অ্যাকাউন্ট হ্যাক বা প্রতারণার শিকার হওয়া প্রতিরোধ করতে ব্যবহারকারীকে সর্বদা সতর্ক থাকতে হবে।
ইমো সিকিউরিটি টিমের সিনিয়র টিম সুপারভাইজার মো. হাফিজুর রাহমান বলেন, বৈশ্বিক কমিউনিকেশন প্ল্যাটফর্ম ইমো ব্যবহারকারীদের মধ্যে যোগাযোগের ক্ষেত্রে নিরাপদ ও স্বাচ্ছন্দ্যদায়ক পরিবেশ নিশ্চিত করতে কাজ করে যাচ্ছে। দায়িত্বশীল ব্র্যান্ড হিসেবে ইমো সব ধরনের হ্যাকিং ও জালিয়াতির বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করে আসছে। ভবিষ্যতেও ইমো ধারাবাহিকভাবে এ ধরনের উদ্যোগ নেবে।
তিনি আরও বলেন, ইমো চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত এআই (আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স) প্রযুক্তির মাধ্যমে ৭৮ হাজার ৪০০ বার সম্ভাব্য হ্যাক হওয়া অ্যাকাউন্ট স্বয়ংক্রিয়ভাবে লগআউট করে। এ সময় বাংলাদেশের ব্যবহারকারীদের ৫ হাজার ৩০০ চুরি যাওয়া অ্যাকাউন্ট পুনরুদ্ধার করা সম্ভব হয়।
অনেকেই অভিযোগ করেন, তার ইমো অ্যাকাউন্টে একটি কল এলো, তিনি সেই অপরিচিত নম্বরে কথা বলার পরই তার অ্যাকাউন্ট হ্যাক হয়েছে।
তবে ইমোর সিকিউরিটি টিম বলছে, ইমো অ্যাকাউন্ট কেবল কলের মাধ্যমেই হ্যাক করা সম্ভব নয়। দেখা যাচ্ছে, কল চলাকালীন প্রতারক চক্র ব্যবহারকারীর অ্যাকাউন্ট পাসওয়ার্ড চেঞ্জ করার চেষ্টা করে। তখন ব্যবহারকারীর কাছে অ্যাকাউন্ট পাসওয়ার্ড চেঞ্জ বা লগইন করার ভেরিফিকেশন কোড যাচ্ছে, যা তিনি কলে থাকা অবস্থায় প্রতারক চক্রকে দিয়ে দিচ্ছেন। প্রতারক চক্র ইমো ব্যবহারকারীকে বলছে, এটি উপহার পাওয়ার জন্য। আসলে এটির মাধ্যমেই ব্যবহারকারী তার অ্যাকাউন্টটি হারিয়ে ফেলছেন। ফলে ভেরিফিকেশন কোড দেওয়ার কারণেই অ্যাকাউন্টের নিয়ন্ত্রণ হারান, কলের কারণে নয়।
ইমো ব্যবহারকারীদের জন্য সিকিউরিটি টিমের পরামর্শ
ইন্টারনেটে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কখনোই ব্যক্তিগত তথ্য পোস্ট করা যাবে না। হ্যাকাররা ফেসবুক বা অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে তথ্য সংগ্রহ করতে পারে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কখনোই ফোন নম্বর, আইডি, ঠিকানা, ইমেইল, পাসওয়ার্ডের মতো ব্যক্তিগত তথ্য প্রকাশ করা যাবে না।
অপরিচিত কারও কাছ থেকে ফোন বা মেসেজ এলে সাবধান থাকতে হবে। পুরস্কার বা লটারি জেতার মতো চটকদার বিষয়গুলো বিশ্বাস করা যাবে না। কাউকে সন্দেহজনক মনে হলে তার ফোন ধরা বা মেসেজের উত্তর দেওয়া যাবে না।
ইমোতে কখনও যদি পরিচিত কারও কাছ থেকেও টাকা বা ব্যক্তিগত তথ্য চেয়ে মেসেজ আসে, তা বিশ্বাস করা যাবে না। যিনি পাঠিয়েছেন, তার নম্বরে সরাসরি ফোন করে নিশ্চিত হতে হবে যে তিনি তা পাঠিয়েছেন কি না। প্রয়োজনে ইমোতে ভিডিও কলে কথা বলে চেহারা দেখে নিতে হবে।
ইমো অ্যাকাউন্ট ভেরিফিকেশন কোড কখনও কাউকে দেওয়া যাবে না। ভেরিফিকেশন কোড আপনি যাকে দেবেন, সে-ই আপনার অ্যাকাউন্ট তার নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নিতে পারবে।
ইমো মেসেজে অপরিচিত নম্বর থেকে আসা কোনও লিংকে ক্লিক করা যাবে না। পরিচিত মানুষের কাছ থেকেও সন্দেহজনক যেকোনও লিঙ্কে ক্লিক করা থেকে বিরত থাকতে হবে। আনভেরিফাইড লিঙ্কে ক্লিক করার মাধ্যমে ডিভাইসে ক্ষতিকর সফটওয়্যার ডাউনলোড হয়ে যেতে পারে।
অন্য কারও মোবাইলে নিজের ইমো অ্যাকাউন্ট লগইন করা যাবে না। যদিও কখনও করার প্রয়োজন হয়, তাহলে ব্যবহার শেষে লগ আউট করতে হবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।