লাইফস্টাইল ডেস্ক : পান্তাভাত, একসময় খেটে খাওয়া মানুষের খুব সাধারণ খাবার হিসাবেই পরিচিত ছিল। রাতের বেচে যাওয়া ভাত সারারাত পানিতে ভিজিয়ে রেখে সকালে তার সঙ্গে সামান্য লবণ, কাঁচা মরিচ, কাঁচা পেঁয়াজ, কখনো লেবু, বাসি তরকারি মেখে খাওয়া হয় এই পান্তাভাত। গ্রামেগঞ্জে এখনও সাধারণ মানুষের সকালবেলার প্রথম খাবার সেটাই। কিন্তু এখন শহরবাসীর জীবনেও ঢুকে পড়েছে এই ভাত। নববর্ষের উৎসব তো বটেই হালে পান্তাভাতের গুণাগুণ শুনে অনেকেই নিয়ম করেই খাচ্ছেন পান্তা।
পান্তা ভাতের পুষ্টিগুণ নিয়ে গবেষণা শুরু হয়েছে ২০১৯ সাল থেকে। বিভিন্ন গবেষণায় উঠে এসেছে, পানিতে ভেজা পান্তাভাতের শর্ট-চেইন ফ্যাটি অ্যাসিড রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে কাজ করে। সেইসঙ্গে এ ভাতে থাকে প্রচুর পকার্বোহাইড্রেট। ফ্যাটি অ্যাসিড এবং কার্বোহাইড্রেটের অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটারি বৈশিষ্ট্য আমাদের শরীরে শক্তি বৃদ্ধি করে। সারারাত ফার্মেন্টেশনের কারণে ভিটামিন বি টুয়েলভের মাত্রা বেড়ে যায় এই ভাতে। যে কারণে দূর হয় ক্লান্তি ও অনিদ্রা। চলুন আজ জেনে নেই ভাত এবং পান্তা ভাতের আরো কিছু তথ্য।
* ভাত কার্বোহাইড্রেট প্রধান একটি খাদ্য। কার্বোহাইড্রেটের প্রধান ভাগ তিনটি। শর্করা বা সুগার, শ্বেতসার বা স্টার্চ এবং সেলুলোজ বা খাদ্য ফাইবার। ভাতসহ নানা ধরনের খাদ্যশস্যে সব থেকে বেশি থাকে শ্বেতসার জাতীয় কার্বোহাইড্রেট এবং অবশ্যই সেলুলোজ।
* পূর্ণবয়স্ক মানুষের দেহে প্রায় ৫০০ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট সঞ্চিত থাকে। দেহে ঘাটতি দেখা দিলে এই সঞ্চয় থেকে পূরণের চেষ্টা করা হয়। আমাদের দেহের চালিকাশক্তি ৬০ থেকে ৭০ শতাংশই আসে কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাদ্য উপাদান থেকে।
* ভাত শুধু সহজপাচ্য খাদ্য তাই নয়, দেহের পক্ষে প্রচন্ড উপকারীও। ১০০ গ্রাম ঢেঁকি ছাঁটা চাল থেকে শক্তি পাওয়া যায় ৩৪৯ কিলো ক্যালরি। কলে ছাঁটা চাল থেকে ৩৪৫ কিলো ক্যালরি। কার্বোহাইড্রেট মেলে যথাক্রমে ৭৯ এবং ৭৭.৪ গ্রাম, প্রোটিন যথাক্রমে ৬.৪ এবং ৮.৬ গ্রাম, ফ্যাট ০.৪ এবং ০.৬ গ্রাম। এছাড়া নানা ধরনের ভিটামিন এবং মিনারেলস ভাতে প্রচুর পরিমাণে থাকে।
* সাধারণ ভাতকে পানিতে ভিজিয়ে ফার্মেনটেড করে তৈরি হয় পান্তাভাত। এর ফলে এর পুষ্টি গুণ অনেক বেড়ে যায়। যেমন ১০০ গ্রাম সাধারণ ভাতে যেখানে ৩.৪ মিলিগ্রাম আয়রন থাকে, সেখানে পান্তাভাতে থাকে ৭৩.৯১ মিলিগ্রাম আয়রন,মানে প্রায় ২১ গুণ বেশি।
* রক্তচাপের রোগীদের ক্ষেত্রে এটি বেশ কার্যকরী। সাধারণ ভাতের তুলনায় এতে সোডিয়ামের পরিমাণ কম। অন্যদিকে পটাশিয়ামের পরিমাণ যথেষ্ট বেশি।পান্তা ভাত ন্যাচারাল ল্যাক্সেটিভ হিসেবে কাজ করে। ফলে এই ভাত খেলে কোষ্ঠকাঠিন্যও কমে।
* ভাত পান্তা করার পুরো প্রক্রিয়া চলাকালীন ক্যালসিয়াম, আয়রন এবং ম্যাগনেসিয়ামের মতো বিভিন্ন পুষ্টি বৃদ্ধি পায়। ১২ ঘণ্টা ধরে ভাত পান্তা করলে এর আয়রনের পরিমাণ নিয়মিত রান্না করা ভাতের তুলনায় ২১ গুণ বেড়ে যায়।
* সোডিয়ামের পরিমাণ কিছুটা কমলেও বেড়ে যায় বিভিন্ন মাইক্রো নিউট্রিয়েন্টস এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের পরিমাণও।
* গরম ভাতের তুলনায় পান্তা ভাতে কার্বোহাইড্রেট এবং ফ্যাটের পরিমাণ কম থাকে।
* প্রোবায়োটিক্সে ভরপুর পান্তা ভাত। এটি হজমশক্তি রক্ষায় সাহায্য করে। সেই সঙ্গে পান্তা সারাদিন কাজ করার জন্য শক্তি যোগাতে সাহায্য করে।
* পান্তা ভাত পানি দিয়ে ভেজানো ভাত বলে এই খাবারর সঙ্গে আমরা প্রচুর পানিও পেয়ে যাই। ফলে গরমে এই ভাত খেলে শরীরে পানিশূণ্যতা দেখা দেয় না। যে কারণে আমাদের ত্বকও সজীব এবং সতেজ দেখায়।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।