আখতারুনাহার আলো : আমাদের দেশে দিন দিন কিডনি রোগের প্রাদুর্ভাব বাড়ছে। এর কারণ হিসাবে দেখা যায়-খাদ্যে ভেজাল, আবহাওয়া এবং মানুষের সচেতনতার অভাব।
আমাদের দেহের পেছনে দুই দিকে দুটি কিডনি থাকে। কিডনির কাজ হলো রক্তকে ছেঁকে বর্জ্য পদার্থগুলোকে প্রস্রাবের সঙ্গে বের করে দেওয়া ও শুদ্ধ রক্তকে শিরায় ফেরত পাঠানো। কিডনির সমস্যা হলে রক্তের ধৌতক্রিয়া বন্ধ হয়ে যায় ও দূষিত পদার্থগুলো বের হতে পারে না। ফলে কিডনি তার কার্যক্ষমতা হারাতে থাকে। তখন রক্তে ক্রিয়েটিনিনের পরিমাণ বেড়ে যায়।
যে কোনো কারণেই কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হলে খাবারের দিকে মনোযোগ দিতে হবে, তাহলে বহুদিন কিডনি ভালো রাখা সম্ভব। এ কারণে কয়েকটি খাবার হিসাব করে খেতে হবে। আবার কোনো কোনো খাবার বর্জন করলে ভালো হয়। প্রথমেই আসি প্রোটিন বা আমিষযুক্ত খাবারের প্রসঙ্গে। প্রোটিন আমাদের শরীরে যেমন প্রয়োজন, তেমনি বেশি প্রোটিনও ক্ষতিকর। ক্রিয়েটিনিয়েন ওপর ভিত্তি করে প্রোটিনের চাহিদা নির্ণয় করা হয়। যেখানে স্বাভাবিক সুস্থ লোকের প্রোটিন প্রয়োজন প্রতি কেজি দৈহিক ওজনের জন্য ১ গ্রাম। সেখানে রোগের ধরন অনুযায়ী প্রোটিন দিতে হবে প্রতি কেজি ওজনের জন্য ০.৫ গ্রাম। ডায়ালাইসিস রোগীদের ক্ষেত্রে দিতে হবে ১.২-২ গ্রাম প্রোটিন প্রতি কেজি ওজনের ক্ষেত্রে। প্রোটিন পাওয়া যাবে সব রকমের ডাল, সিমের বিচি, ছোলা, বাদাম, মাছ-মাংস, ডিম, দুধ থেকে। যদি প্রাণিজ আমিষ খেতেই হয়, তাহলে উদ্ভিজ আমিষ বা প্রোটিন বাদ দিলে সমতা বজায় থাকবে। যেমন-ডাল, সিমের বিচি, ঢ্যাঁড়ষ, সব ধরনের সবজির বিচি, দানা শস্য যেমন-তিল-সরিষা ইত্যাদি।
এর পরে ফসফরাস ও অক্সালিক এসিড যুক্ত খাবার বাদ দিলে ভালো হয়। ফসফরাসযুক্ত খাবার হলো-আটা, চিড়া, গমের সুজি, ওটস, ভুট্টা, মাগুর মাছ, শিং মাছ, বড় চিংড়ি, শোল মাছ, ফেসা মাছ, বাটা মাছ, ফলি মাছ, বেলে, কৈ, টেংরা, পুঁটি, পাবদা, বাইম, ইলিশ, কোরাল, নারিকেল, গুঁড়া দুধ, পনির, কলিজা, ডাল, গরু ও খাসির মাংস, বরবটি, সাজনা, ছোলা, ডাব, সবুজ আঙুর, বেদানা, সরিষা, জিরা, মিষ্টি কুমড়ার বিচি, বাদাম, তিল, পোস্তা, রূপচাঁদা, লইট্টা, সয়াবিন। অক্সালিক এসিডযুক্ত খাবার-তিল, নটে শাক, পালং শাক, পুঁই শাক, কলার মোছা, কাঁচা কলা, কোকো, বাদাম, আখরোট, কাজু বাদাম, আতাফল, টমেটো, আঙুর, কচু, ডুমুর, আমলকী, কফি, চা, গাজর, চকলেট, তাল, গমের ভুসি। সাধারণের ধারণা কিডনি অসুখ মানেই পটাশিয়ামযুক্ত খাবার বাদ দিতে হবে। তবে কোনো কোনো ক্ষেত্রে রোগীদের পটাশিয়াম কমে যেতে দেখা যায়। সে ক্ষেত্রে তাদের খাবারে অবশ্যই পটাশিয়ামযুক্ত খাবার যোগ করতে হবে। অর্থাৎ অবস্থা বুঝে পটাশিয়াম বর্জন করা বা গ্রহণ করতে হবে।
পটাশিয়ামযুক্ত খাবার-সব ধরনের ডাল, বেল, সরিষা, মালটা, বরবটি, কচু, ধনে, হলুদ, চা পাতা, কফি, ব্যাম্বো শুট, জিরা, আতাফল, হাঁসের মাংস, চেরিফল, মিষ্টি আলু, তরমুজ, মিষ্টি কুমড়ার বিচি, সয়াবিন, পাকা কলা, ফুলকপি, সব ধরনের শাক, লেবু, কাঁচামরিচ, বাদাম, তেঁতুল, কচু, সরিষার শাক, কিশমিশ, খেজুর ইত্যাদি। ফলের মধ্যে আপেল, আনারস, পেয়ারা ও পাকা পেঁপেতে পটাশিয়াম কম থাকে।
এদিকে কিডনি রোগীদের রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ কম থাকতে দেখা যায়। এর প্রধান কারণ লৌহযুক্ত খাবার কম খাওয়া এবং লৌহ শোষণ কম হওয়া। এজন্য তাদের প্রাণিজ উৎসের চাইতে উদ্ভিজ উৎস থেকে লৌহ গ্রহণ করতে হবে। লৌহযুক্ত খাবার হলো-লেটুস পাতা, পেঁয়াজ কলি, গুড়, কচুর শাক, কাঁচা টমেটো, করলা, শসা, লেবু, ডাঁটা, ডেউয়া, আনারস, আমরা, বেল, কাঁচকি মাছ, মুড়ি, ডিমের কুসুম, মাংস, কলিজা ইত্যাদি।
লেখক: চিফ নিউট্রিশন অফিসার ও বিভাগীয় প্রধান (অব.), বারডেম। সভাপতি, ডায়াবেটিস নিউট্রিশনিস্ট সোসাইটি অব বাংলাদেশ, পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টার, শ্যামলী ও অ্যাডভান্স হাসপাতাল, ঢাকা।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।