লাইফস্টাইল ডেস্ক : উদ্ভিদ উদ্যানে সড়কের দুই পাশে অশোকতরুতে ফুলের সম্ভার। তীক্ষ কণ্ঠে আওয়াজ হলো : ‘চেক’। সড়ক ছেড়ে বাগানে নেমে আমরা চেক করলাম। দেখলাম, একাশিয়াগাছের খাড়া কাণ্ডে স্থির বসে আছে একটি সুদর্শন পুরুষ কাঠকুড়ালি।
সকালের রোদে তার সোনালি পালক আলো ছড়াচ্ছে। তার মাথায় ক্যাথলিক কার্ডিনালের লাল টুপি। কাঠকুড়ালি ও ক্যাথলিক, উভয় সমাজেই লাল টুপি থাকে শুধু পুরুষের শিরে। আমরা এগিয়ে যেতেই কাঠকুড়ালি বলল, ‘চেক’।
আমরা একটু সরে এসে চারদিক চেক করলাম। আমাদের ধারণা, তার সঙ্গিনী কাছেই আছে। আমাদের কাছে যেতে দেখে সে ‘চেক’ বলে সঙ্গিনীকে সতর্ক করছে। আমাদের অনুমান সঠিক।
পাশেই ঘোড়ানিমগাছের কাণ্ডে সদ্য কাটা একটি কোটরের মুখে অনড় বসে আছে তার স্ত্রী। স্ত্রীর পালকে সোনালি ছটার বদলে সবুজ আভা এবং প্রত্যাশিতভাবে মাথায় কালো টুপি।
সুকুমার এ পাখির পোশাকি নাম ‘দাগিগলা কাঠকুড়ালি’, আদি ও অকৃত্রিম বাংলাদেশি পাখি। পঞ্চগড়ের শালবন থেকে ইনানির পাহাড়ি বনে এবং বাংলার সব গ্রামগঞ্জ ও শহরতলিতে ওরা ভালোই টিকে আছে। তবে নিভৃতচারী বলে এ পাখি হয়তো আজও আপনার চোখে পড়েনি।
ভারত উপমহাদেশটিই কিন্তু এ পাখির মূল ঘাঁটি। ভারতের পশ্চিমে কোথাও এ পাখি নেই এবং বাংলাদেশের পুবে মিয়ানমার, থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ায় এর সংখ্যা ক্রমে কমে শূন্য হয়েছে। উপমহাদেশের পাখি বলেই এ কাঠঠোকরা বিশ্বে পরিচিত। জার্মান, সুইডিশ, ফিনিশ, সার্বিয়ান ইত্যাদি ভাষায় এর নামই ‘ভারতী কাঠঠোকরা’। আপনি হয়তো জানেন যে অস্ট্রেলিয়া ছাড়া বৃক্ষসমৃদ্ধ সব মহাদেশেই কাঠঠোকরা আছে। বৃক্ষের জন্য বিখ্যাত না হলেও বাংলাদেশই কিন্তু বহু কাঠঠোকরার স্থায়ী ঠিকানা। বিশ্বের ২৫৬ প্রজাতির কাঠঠোকরার মধ্যে ২১টি, অর্থাৎ প্রায় ১০ শতাংশ বাস করে এই ক্ষুদ্র দেশটিতে।
উদ্যানে আমরা নিশ্চল দাঁড়িয়ে আছি; কাঠকুড়ালি দুটিও মূর্তির মতো অনড় রয়েছে। কিন্তু আমরা আছি সমান্তরাল জমিনে, আর ওরা রয়েছে গাছের খাড়া কাণ্ডে। কী করে ওরা গাছ আঁকড়ে ধরে ওভাবে এতক্ষণ থাকতে পারে! দেখে মনে হয় যেন ওদের পায়ের নিচে আঠা রয়েছে। আসলে বড়শির মতো বাঁকানো নখরগুলো বাকলের ফাটলে গেঁথে দিয়েই ওরা ওভাবে থাকে। পা দিয়ে কাঠকুড়ালি বাকল টেনে ধরে আর পুচ্ছ দিয়ে ঠেকা দেয়। তাই পেনসিলের মতো শক্ত ওদের পুচ্ছ। দুই পায়ে টান আর পুচ্ছে ঠেলা দিয়েই ওরা গাছের কাণ্ডে ওভাবে আটকে থাকে। এভাবেই ওরা মাধ্যাকর্ষণকে হার মানিয়ে ছোট ছোট লাফ দিয়ে গাছের সারা গায়ে পোকামাকড় তালাশ করে বেড়ায়।
বাটালির মতো চঞ্চু দিয়ে ওরা দুজন কোটর গড়েছে ঘোড়ানিমগাছে। কোটরের পরিপাটি প্রবেশপথটি দেখে মনে হয় ভেতরে আঁতুড়ঘরটিও এরই মধ্যে প্রস্তুত হয়ে গেছে। এখন সময় ডিম দেওয়ার। আমরা জানি, ডিমে তা দেওয়া আর ছানা পালনের কাজটি ওরা করবে খুবই দ্রুতগতিতে। এক মাসের মধ্যেই ছানাপোনা নিয়ে কাঠকুড়ালিরা কোটর ছেড়ে যাবে। এ কোটরের দিকে নিশ্চয়ই নজর রেখেছে উদ্যানের দোয়েল ও শালিকেরা। ওদের প্রজননের জন্যও তো কোটর চাই। কিন্তু কোটর গড়ার মতো চঞ্চু তো ওদের নেই। কাঠকুড়ালির পরিত্যক্ত কোটরই ওদের ভরসা। কাঠকুড়ালিরা তো খুশি মনে নতুন কোটর কাটে প্রতিবছর। সূত্র : কালের কণ্ঠ
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।