একই অফিসে দীর্ঘ সময় কাজ করতে করতে অনেক সময়ই সহকর্মীর সঙ্গে গড়ে ওঠে সখ্যতা, যা একসময় ভালোবাসায় রূপ নিতে পারে। যদিও এটি একেবারে অস্বাভাবিক নয়, তবুও এই ধরনের সম্পর্ক শুরুর আগে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ভেবে দেখা প্রয়োজন। কারণ একটি সিদ্ধান্ত আপনার ব্যক্তিগত জীবন যেমন পাল্টে দিতে পারে, তেমনি প্রভাব ফেলতে পারে পেশাগত জীবনেও।
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের বোস্টনে জনপ্রিয় ব্যান্ড কোল্ডপ্লের কনসার্টে অন্তরঙ্গ অবস্থায় ক্যামেরায় ধরা পড়েছেন সফটওয়্যার সংস্থা অ্যাস্ট্রোনোমার প্রধান নির্বাহী অ্যান্ডি বায়রন ও প্রতিষ্ঠানটির এইচআর প্রধান ক্রিস্টিন ক্যাবট। বিষয়টি নিয়ে শুধু নেটদুনিয়াই নয়, উত্তাল হয়ে উঠেছে কর্পোরেট জগতও।
এই ঘটনা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে—একই প্রতিষ্ঠানে কর্মরত দুই সহকর্মীর মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক নৈতিকতার কোন সীমা পর্যন্ত গ্রহণযোগ্য? যেখানে প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী ও মানবসম্পদ বিভাগের প্রধানই জড়িত, সেখানে ক্ষমতার ভারসাম্য রক্ষা ও পেশাগত স্বচ্ছতা নিয়ে যথেষ্ট উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন অনেকে।
বিশেষত, দুইজনেরই আলাদা পরিবার থাকার বিষয়টি সামনে আসায় বিষয়টি আরও স্পর্শকাতর হয়ে দাঁড়িয়েছে। কর্মস্থলে এই ধরনের সম্পর্ক কর্মদক্ষতা, সিদ্ধান্ত গ্রহণের স্বচ্ছতা এবং সহকর্মীদের প্রতি সম্মান বজায় রাখার ক্ষেত্রেও প্রশ্ন তুলছে।
প্রতিষ্ঠানে প্রেম: নীতিমালায় কী বলা হয়?
বহু আন্তর্জাতিক কোম্পানিতেই কর্মস্থলে রোমান্টিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে স্পষ্ট নীতিমালা থাকে। কোনো কর্মী যদি তার ঊর্ধ্বতন বা অধীনস্থ কারও সঙ্গে সম্পর্কে জড়ান, তাহলে তা অফিসিয়ালি জানানো বাধ্যতামূলক। এর উদ্দেশ্য হলো—কোনো প্রকার পক্ষপাত বা স্বার্থের দ্বন্দ্ব এড়ানো।
নৈতিকতা ও পেশাগত ভারসাম্য
বিশেষজ্ঞদের মতে, সহকর্মীর সঙ্গে সম্পর্ক নিষিদ্ধ না হলেও এটি অবশ্যই নৈতিক ও পেশাগত দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার্য। প্রতিষ্ঠান যেন কারও ব্যক্তিগত সম্পর্কের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সেটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
সামাজিক প্রতিক্রিয়া
এই ঘটনার পর, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নানান প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে। কেউ বলছেন—প্রেম ব্যক্তিগত বিষয়, আবার কেউ মন্তব্য করছেন—যখন সম্পর্ক দুইজন কর্তাব্যক্তির মধ্যে হয়, তখন প্রতিষ্ঠান ও কর্মীদের প্রতি দায়বদ্ধতা বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়ায়।
যদিও অফিসে সম্পর্ক বা ভালোবাসা একেবারে অনুচিত নয়, তবে তা যেন দায়িত্বহীন, পক্ষপাতমূলক বা গোপনীয়তায় মোড়ানো না হয়। নৈতিকতা, স্বচ্ছতা এবং সম্মান রক্ষাই হওয়া উচিত যে কোনো কর্পোরেট সম্পর্কের মূল ভিত্তি।
অফিসে বসের সঙ্গে প্রেম হয়, কখনও আবার সহকর্মীর প্রেমে পড়েন লোকজন। অনেক সময় বিবাহিত সহকর্মীদের মধ্যেও মন দেওয়া-নেওয়া হয়ে থাকে। অনেক সম্পর্ক দীর্ঘ দিন টেকে, অনেক সম্পর্কই আবার পরিণতি পায় না। জেনে নিন, অফিসে কারও প্রেমে পড়লে কোন নিয়মগুলো ভুলে গেলে নিজেই পরে বিপাকে পড়বেন।
১. সবার আগে যে অফিসে কাজ করছেন, সেখানে সহকর্মীর মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক মেনে নেওয়া হয় কি না, সেই বিষয়ে ভালো করে খোঁজখবর নিয়ে নিন। সহকর্মীকে প্রেমপ্রস্তাব দিতে গিয়ে যেন চাকরি হারাতে না হয়।
২. বসের প্রেমে না পড়াই ভালো। বসের সঙ্গে সম্পর্কে জড়ালে সেই সম্পর্ক টিকিয়ে রাখা মুশকিল হয়। আবার প্রেম ভাঙলে অফিসে কাজ করতে গিয়ে সমস্যায় পড়তে হতে পারে।
৩. ধরুন, সহকর্মীকে প্রেমপ্রস্তাব দেওয়ার পর তিনি তাতে সায় দিলেন না। তা হলে কিন্তু তার উপর অতিরিক্ত চাপ তৈরি না করাই ভালো। কথাটা যাতে আপনাদের দু’জনের মধ্যেই থাকে, সে বিষয়টি নিশ্চিত করুন। নইলে অফিসে আপনার টিকে থাকা মুশকিল হয়ে যেতে পারে।
৪. অফিসে প্রেম হলেও সঙ্গীর সঙ্গে অফিসে সহকর্মীর মতোই ব্যবহার করুন। নিজেদের মধ্যেকার মনোমালিন্যের প্রভাব যাতে অফিসের কাজে না পড়ে, যে বিষয়ে সতর্ক থাকুন। ঝগড়া হলেও তা অফিসের বাইরে মিটিয়ে নিন। আপনাদের প্রেম যেন অন্যদের চর্চার বিষয় না হয়ে দাঁড়ায়, সে বিষয়ে সতর্ক থাকুন।
৫. তাড়াহুড়া নয়। প্রেমের বিষয়ে ভেবেচিন্তে আগোনোই ভালো। ভালো সহকর্মী বলে তিনি ভালো প্রেমিক কিংবা প্রেমিকা হবেন, এমনটা কিন্তু নয়। তাই একে অপরের সঙ্গে বাইরে সময় কাটান। তার পরেই সিদ্ধান্ত নিন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।