জুমবাংলা ডেস্ক : দফায় দফয়া গো-খাদ্যের দাম বাড়ায় বিপাকে পড়েছেন পটুয়াখালীর খামারিরা। ছয় মাস আগে যে গমের ভুসি ৮০০ টাকা ছিল তা এখন ১ হাজার ৭০০ টাকায় কিনতে হচ্ছে। এ কারণে অনেকে পরিমাণ মতো খাদ্যের যোগান দিতে না পেরে গবাদিপশুর খাবার কমিয়ে দিয়েছেন।
আর এ গো-খাদ্যের দাম বাড়ার পেছনে আমদানিকারক ও মিলারদের কারসাজি এবং সরকারের মনিটরিংয়ের অভাবকে দায়ী করছেন সংশ্লিষ্টরা।
পটুয়াখালী শহরের সবুজবাগ এলাকার ডেইরি খামারি কামাল হোসেন প্রায় ১৫ বছর ধরে উন্নতজাতের গবাদি পশুপালন করে দুধ উৎপাদন করে আসছেন। খামারটি এতদিন ভালো চললেও সম্প্রতি আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন তিনি। এর প্রধান কারণ গবাদি পশুর দানাদার খাবারের উচ্চমূল্য। যে কারণে বাধ্য হয়ে গরুকে এখন কম খাবার দিতে হচ্ছে তাকে।
খামারের দায়িত্বে নিয়োজিত শাহিন মিয়া বলেন, এখন আর গরু পালার কোনো সুযোগ নেই। গত ছয়মাস আগে যে গমের ভুসি কিনেছি আটশো টাকায়, এখন তা কিনতে হচ্ছে ১ হাজার ৭০০ টাকায়। আগে যে ভুট্টার গুড়া কিনেছি ১ হাজার ২০০ টাকায় এখন তা নিতে হচ্ছে ১ হাজার ৯০০ টাকায়। ৪০ কেজির মুগের ভুসি আগে ১ হাজার ৩০০ টাকায় কিনলেও এখন কিনতে হচ্ছে সাড়ে আঠারশো টাকায়। আর সয়ামিলের দাম এত বেশি যে আমরা এখন গরুকে তা খাওয়াচ্ছি না।
তার অভিযোগ, খাবারের দাম বাড়লেও সিন্ডিকেটের কারণে বাজারে দুধের দাম কমিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এখন আমাদের ফার্ম অনেক লসে আছে, মালিকপক্ষের টিকে থাকায় এখন দুষ্কর।
জানা গেলো, পটুয়াখালীসহ দক্ষিণাঞ্চলে উন্নত জাতের ঘাস চাষের বিষয়টি এখনো খুব একটা বাণিজ্যিকভাবে ছড়ায়নি। যে কারণে এ অঞ্চলের খামারিরা খড় ও দানাদার খাবার খাইয়েই গবাদি পশু পালন করে থাকেন। তবে দানাদার খাবারের বাজার টানা ঊর্ধ্বমুখী থাকায় অনেকেই খামার বন্ধ করতে বাধ্য হচ্ছেন। অনেকে আবার গরু বিক্রি করে খামার ছোট করছেন।
পটুয়াখালী শহরের বহালগাছিয়া এলাকায় জিন্দেগী ডেইরির মালিক সালাম বলেন, তার খামারে পাঁচটি দুখের গাভী ছিল। তবে গো-খাদ্যের দামের কারণে তিনি তার সবকয়টি গরু বিক্রি করে দিয়েছেন। এখন সেডটি ফাঁকা পড়ে রয়েছে।
পটুয়াখালী জেলা ডেইরি ফার্মাস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি কামাল হোনেন বলেন, বাজার নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়েছে। কোথাও কোনো তদারকি কিংবা মনিটরিং নেই। হঠাৎ করেই দাম বাড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু দাম কমার কোনো লক্ষণ নেই। এমন পরিস্থিতি চলতে থাকলে আমাদের শতশত খামারিকে পথে বসতে হবে। এই পরিস্থিতিতে আমরা সরকারের কার্যকর পদক্ষেপ প্রত্যাশা করছি।
পটুয়াখালী শহরের পুরার বাজার এলাকার গো-খাদ্য বিক্রেতা আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের অজুহাতে যখন গমের দাম বাড়লো সেই থেকে গমের ভুসির দাম অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পেল। এছাড়া যখনই সয়াবিন তেলের দাম বাড়লো সেসময় থেকে সয়ামিলের ভুসির দামও বাড়ানো হয়েছে।
তিনি বলেন, আমাদের এই অঞ্চলে খুব বেশি ভুট্টার আবাদ হয় না। এ কারণে যেসব এলাকায় ভুট্টা উৎপাদন হয় সেসব এলাকা থেকে সরাসরি বিভিন্ন ফিড উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ভুট্টা কিনে নিচ্ছে, এতেকরে ভুট্টার বাজারও নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়েছে।
পটুয়াখালী জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. আনোয়ার হোসেন বলেন, সারাবিশ্বেই খাবারের মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে কীভাবে খামারিদের টিকিয়ে রাখা যায় সে বিষয়ে আমরা কাজ করছি। এজন্য খামারিদের উন্নত জাতের ঘাস চাষের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া সরকার একটি প্রকল্পের মাধ্যমে খামারিদের ঘাস চাষে সহযোগিতাও করবে। পাশাপাশি যেসব খামারি আগামী কোরবানি উপলক্ষে গরু মোটাতাজা করছেন তাদের জন্য ইউরিয়ার মোলাসেস তৈরির পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
এদিকে, গবাদিপশুর খাবারের পাশাপাশি মুরগি ও মাছের খাবারেরও দাম বেড়েছে। এক্ষেত্রে বাজার নিয়ন্ত্রণে এখনই উদ্যোগ না নিলে মাছ-মাংসের বাজারেও এর প্রভাব পড়বে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।