বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ডেস্ক : শহরের যানজট এড়াতে ড্রোনে করে অফিস বা বিভিন্ন জায়গায় যাওয়া সম্ভব হতে পারে—এমন ভিডিও আমরা অনেকেই দেখেছি। কিন্তু এখনো সেটি বাস্তব হয়নি। গত বছর প্যারিস অলিম্পিকে এমন ড্রোন ব্যবহার হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু শেষ মুহূর্তে অনুমোদন দেওয়া হয়নি।
অন্যদিকে ২০১২ সাল থেকেই বিভিন্ন বাণিজ্য মেলায় এয়ার ক্যাবের বিভিন্ন কনসেপ্ট ও মডেল প্রদর্শিত হচ্ছে। এর মধ্যে কিছু ক্যাব শিগগিরই যাত্রী বহনের অনুমতি পেতে যাচ্ছে। তাহলে অদূর ভবিষ্যতে কি আকাশে এয়ার ক্যাব দেখা যাবে, নাকি সেগুলো শুধুই স্বপ্ন?
জেডইডব্লিউ অর্থনৈতিক গবেষণা কেন্দ্রের আনা স্ট্রাওবিঙ্গার বলেন, ‘প্রথমে এটা শুধু সেই ধনী ব্যক্তিদের জন্য হবে, যারা উচ্চ ভাড়াটা মেটাতে ইচ্ছুক হবেন।’
এয়ার ক্যাবের অনুমতি দেওয়া প্রথম শহর হওয়ার কথা ছিল প্যারিসের।
অলিম্পিক গেমসের সময় সেগুলো চলার কথা ছিল। কিন্তু অলিম্পিক শুরুর আগে তার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়।
এদিকে সম্ভাব্য ক্রেতাদের দেখাতে ভার্সাইয়ে ভলোকপ্টার ওড়ানোর অনুমতি দেওয়া হয়েছে। নির্মাতারা এয়ার ক্যাবকে টেকসই ও সস্তা বলে তুলে ধরতে পারে, কিন্তু এগুলো আসলে পরিবেশ বা অর্থনীতি—কোনো বিবেচনায়ই যুক্তিসংগত নয়।
স্ট্রাওবিঙ্গার বলেন, ‘একটু ভালোভাবে দেখলে পরিষ্কার বোঝা যায়, কাউকে আকাশে তুলতে বৈদ্যুতিক গাড়ি চালানোর চেয়ে বেশি শক্তির প্রয়োজন হয়।’
এয়ার ক্যাব বর্তমানে অনেক বেশি শক্তি খরচ করে। এ ছাড়া সাবওয়ে, গাড়ি বা বাসের মতো গণপরিবহনের চেয়ে বেশি গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন করে। ওপরে ওঠা ও নামার সময় এয়ার ক্যাবের অনেক শক্তির প্রয়োজন হয়। এ ছাড়া ক্যাবে উঠতে ও নামার পর সেখান থেকে গন্তব্যে যেতেও আপনাকে কিছু পথ পাড়ি দিতে হবে এবং এর জন্য আরো শক্তির প্রয়োজন হবে।
তাই এয়ার ক্যাবের পরিবর্তে ইলেকট্রিক গাড়ি বা গণপরিবহন ব্যবহারের সুযোগ থাকলে এয়ার ক্যাব এখনো এনার্জি-এফিশিয়েন্ট মাধ্যম নয়। ইলেকট্রিক গাড়িতে যে লিথিয়াম-আয়ন ব্যাটারি ব্যবহৃত হয় এয়ার ক্যাবেও তা ব্যবহার হচ্ছে।
স্ট্রাওবিঙ্গার জানান, ‘এই মুহূর্তে বাজারে তেমন ব্যাটারি নেই, যেটা যেসব অঙ্গীকার করা হচ্ছে সেগুলো পূরণের জন্য প্রয়োজন হবে। এয়ার ক্যাব ধারণার সাফল্যের জন্য ব্যাটারি ইস্যুটা গুরুত্বপূর্ণ।’
এভিয়েশন সেফটি কনসালট্যান্ট টমাস ফ্রিজাখার বলেন, ‘আমি এই মুহূর্তে ইলেকট্রিক ফ্লাইট নিয়ে ভাবতে চাইছি না। কারণ পাওয়ার গ্রিড সমস্যার সঙ্গে আমরা সবাই পরিচিত। সে কারণে আমি এখন একটি পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র ফের চালু করতে চাইব না।’
গত বছরের এপ্রিল মাসে চীনের এহাং কম্পানি দুই আসনবিশিষ্ট যাত্রীবাহী ড্রোন উৎপাদনের অনুমোদন পায়, যা বিশ্বে প্রথম। একেকটি ড্রোনের দাম প্রায় তিন লাখ ইউরো। কিন্তু পাইলট নেই, ব্যাটারিতে আগুন ধরে গেলে কী হবে? প্যারাসুট কিভাবে ব্যবহার করতে হয়? নানা কারণে অনেক মানুষ ড্রোনে উঠতে রাজি নয়।
ফ্রিজাখার বলেন, ‘বর্তমানে কতগুলো শহরে চালক ছাড়া সাবওয়ে চলছে? খুব কম। তা ছাড়া সামাজিকভাবে গ্রহণযোগ্য হয়ে ওঠারও বিষয় আছে।’
স্বয়ংক্রিয় ফ্লাইটের বিষয়টি ইউরোপের চেয়ে এশিয়ায় বেশি গ্রহণযোগ্য। পাইলট না থাকলে ভাড়া অনেক কমবে। কিন্তু তার পরও সবার পক্ষে কি ড্রোনে চড়া সম্ভব হবে? জার্মান এয়ারোস্পেস সেন্টারের বিয়াংকা শুশার্ড্ট বলেন, ‘বাজারের জন্য একটা হিসাব করে আমাদের মনে হয়েছে, কিলোমিটার প্রতি চার ইউরো একটা ম্যাজিক লিমিট। অর্থাৎ নির্মাতারা যদি কিলোমিটার প্রতি ফ্লাইটের ভাড়া চার ইউরোর কম রাখতে পারে, তাহলে হয়তো এয়ার ক্যাবের বিষয়টি গণমানুষের পর্যায়ে পৌঁছতে পারবে।’
স্ট্রাওবিঙ্গার মনে করেন, ‘ট্যাক্সি ভাড়ার সমপর্যায়ে পৌঁছনো সম্ভব হলেও সেটা সাধারণ মানুষ ব্যবহার করতে সক্ষম—এমন গণপরিবহনের মধ্যে পড়বে না।’
তাহলে এয়ার ক্যাব কোথায় বেশি ব্যবহার হতে পারে? সাউদিয়া এয়ারলাইনস প্রায় ১০০ ‘লিলিয়াম জেট’ কিনতে আগ্রহী। এগুলো দিয়ে তারা হজযাত্রীদের মক্কা ও জেদ্দার মধ্যে আনা-নেওয়া এবং অন্যদের পর্যটন গন্তব্যে নিয়ে যেতে চায়।
অন্য উপায় হতে পারে, এগুলোকে গণপরিবহনের সঙ্গে যুক্ত করে দেওয়া বা এয়ারপোর্ট শাটল হিসেবে ব্যবহার করা। এ ছাড়া ড্রোনে চড়ে কাজে যাওয়া বা প্রত্যন্ত এলাকায় উদ্ধারকাজেও ব্যবহার করা যেতে পারে।
শহর এলাকায় আকাশপথে চলাচল নিয়ে গবেষণায় সহায়তা করে কিছু সরকার। যদিও জার্মানির লিলিয়াম কম্পানি বর্তমানে দেউলিয়া হয়ে গেছে। নতুন অর্থায়নের খোঁজে আছে তারা। সূত্র : ডয়চে ভেলে
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।