বিজ্ঞান ও প্রযক্তি ডেস্ক : মানুষের মধ্যে বর্তমানে যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম মোবাইল ফোন। আর এই মোবাইল ফোন হারিয়ে গেলে বা ছিনতাই হলে পড়তে হয় বিপাকে। এ থেকে উত্তরণের জন্য মানুষ নতুন মোবাইল ফোন নেয়। কিন্তু প্রশ্ন হলো এই হারানো বা ছিনতাই হওয়া মোবাইল ফোনগুলো যায় কোথায়?
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এ ধরনের হারানো বা ছিনতাই হওয়া ফোনগুলো উদ্ধার করা না গেলে তিনভাবে ব্যবহার হয়। তারা বলছেন, এই মোবাইল ফোনগুলোর আইএমই নম্বর পরিবর্তন করে বা না করেও অন্য কোনো ব্যক্তির কাছে বিক্রি করা হয়। তা না হলে মোবাইলের পার্স খুলে পার্সের দোকানে খুচরা যন্ত্রাংশর হিসেবে বিক্রি করা হয় এবং সর্বশেষ কিছু সংখ্যক দেশের বাইরে চলে যায়।
গত ১২ ডিসেম্বর রাজধানীর পরীবাগ ও হাতিরপুল এলাকায় অভিযান চালিয়ে চোরাই আইফোন ক্রয়-বিক্রয় চক্রের ৭ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা-উত্তরা বিভাগের একটি টিম। সে সময় পুলিশ ৪৫টি আইফোন, একটি মোবাইল ফোন, একটি ল্যাপটপ, ২১টি আইফোনের বডি, ৯৭টি মাদারবোর্ড ও এক রোল সিলভার কালার ফয়েল পেপার উদ্ধার করা হয়।
ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার এবং গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ সে সময় বলেন, গ্রেপ্তাররা চোরাই মোবাইল ফোন বিশেষ করে চোরাই আইফোন ক্রয়-বিক্রয় চক্রের সক্রিয় সদস্য। তারা দীর্ঘদিন যাবত চোরাই আইফোন ক্রয়-বিক্রয়, লক খোলা ও পার্স আলাদা করে বিক্রি করে আসছে।
তিনি আরো বলেন, ফোন চুরির পর এই চক্র তা কিনত। পরে সেটা আবার বড় পার্টির কাছে বিক্রি করত। আইফোনে গতিপ্রকৃতি ও লোকেশন বোঝা যাওয়ায় বড় পার্টির সদস্যরা সিলভার কালারের ফয়েল পেপারে মুড়িয়ে রাখত। এরপর তারা আইফোনগুলো ল্যাপটপে ফ্লাশ দিয়ে সকল ডাটা মুছে ফেলে মার্কেটে বিভিন্ন পার্টির কাছে বিক্রি করে দিতো।
এদিকে আইএমইআই পরিবর্তন করতে না পারায় ও আইফোনের খুচরা পার্টসের চাহিদা অনেক বেশি হওয়ায় এ চক্রটি আইফোনের যন্ত্রাংশ খুলে মোবাইল সার্ভিসিংয়ের বিভিন্ন দোকানে বিক্রি করে দিত। এ ছাড়া আরেকটা চক্র আছে, যারা ভালো দামি কোনো আইফোন পেলে সেগুলো বাইরের দেশে পাচার করে দেয়।
পুলিশ ও সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মোবাইল ফোন হারিয়ে বা ছিনতাই হলে সেখানে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্ট বা ছবি বা অন্যান্য বিষয় থাকে, যা বেহাত হলে সমস্যায় পড়তে হয়। এ ছাড়া অপরাধীরা দেখা যায় ওইসব তথ্য দিয়ে ব্ল্যাক মেইলও করে থাকেন। আর সে কারণে গত ৫ ডিসেম্বর পুলিশ সদর দপ্তরে অতিরিক্ত আইজিপি (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস) মো. আতিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে মাসিক অপরাধ পর্যালোচনা সভায় হারানো মোবাইল ফোন উদ্ধারে তৎপরতা বাড়ানোর জন্য মাঠপর্যায়ের পুলিশ কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেন। আগে মোবাইল ফোন উদ্ধারে তৎপরতা তেমন দেখা না গেলেও এখন পুলিশ মোবাইল ফোন উদ্ধারে বেশ তৎপর।
গত ১২ ডিসেম্বর চাঁদপুর জেলা পুলিশ ৩১টি মোবাইল ফোন উদ্ধার করে তার মালিকদের কাছে হস্তান্তর করে। এরপর ১৫ ডিসেম্বর রাজধানীর পল্টনে বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামের ১ নম্বর গেটের সামনে অভিযান চালিয়ে ২০টি চোরাই মোবাইল ফোনসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে এগুলো ফেরত দেওয়ার জন্য ডিএমপির অনলাইন পোর্টালে আইএমইআই নম্বর মিলিয়ে যার যার ফোন সংগ্রহের জন্য বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়।
পুলিশের পাশাপাশি র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নও (র্যাব) অপরাধ দমনে কাজ করে থাকে। তারাও বিভিন্ন সময়ে চোরাই মোবাইল উদ্ধার করেন। বাহিনীর মুখপাত্র আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক খন্দকার আল মঈন বলেন, চুরি বা ছিনতাই হওয়া কমদামি মোবাইল ফোনগুলো বিভিন্ন মার্কেটে সেকেন্ড হ্যান্ড ফোন হিসেবে বিক্রি করে দেয়। আবার কিছু আছে দামি মোবাইল হলে সেগুলো ফরমেট করে আইএমই নম্বর পরিবর্তন করে বিক্রি করে দেয়। আর যেগুলো মোডিফাই করা যায় না সেগুলো স্পেয়ার পার্স খুলে তা বিক্রি করে।
তিনি আরো বলেন, চোরাই ফোন উদ্ধার র্যাবের দায়িত্ব না। তবে তারা অভিযোগের প্রেক্ষিতে বিভিন্ন সময়ে ম্যাজিস্ট্রেটের মাধ্যমে অভিযান পরিচালনা করেন। অনিবন্ধিত ফোন বিক্রি হয় কিনা সেটা দেখার দায়িত্ব বিটিআরসির। তারা এ ধরনের ফোন ব্যবহার রোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা বলেন, অল্পদামে লোভনীয় অফার পেয়ে চোরাই আইফোন কিংবা কোনো মোবাইল ফোন কেনা যাবে না। আইফোনসহ বিভিন্ন মোবাইল ফোন কেনার ক্ষেত্রে সতর্কতার সাথে অফিসিয়াল ফোন দেখে কিনতে হবে। বিক্রেতা বা সরবরাহকারী অবৈধ বা ভুয়া কিনা তা যাচাই করে দেখতে হবে। আইফোন ক্রয় করার সময় প্রয়োজনীয় কাগজপত্র যাচাই করে কিনতে হবে। এ ছাড়া মোবাইল ফোন হারানো গেলে অথবা চুরি বা ছিনতাই হলে সাথে সাথে নিকটস্থ থানা পুলিশকে অবহিত করার অনুরোধ করেন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।