জুমবাংলা ডেস্ক : জলদস্যুদের কবলে পড়া বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহকে সোমালিয়ার গারাকাড উপকূল সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। আজ শুক্রবার বিকেলের দিকে জাহাজটির নোঙর তোলা হয়।
বাংলাদেশ মার্চেন্ট মেরিন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশন জানিয়েছে, সোমালিয়ার স্থানীয় প্রশাসনের নির্দেশে জিম্মি জাহাজটিকে আগের অবস্থান থেকে সরিয়ে ৪০ নটিক্যাল মাইল দূরে নিয়ে নোঙর করা হয়েছে।
এর আগে বৃহস্পতিবার বেলা ১টার পর নৌ পরিবহন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কমোডর মোহাম্মদ মাকসুদ আলম ইনডিপেনডেন্ট টেলিভিশনকে জানান, এমভি আবদুল্লাহ সোমালিয়ার গারাকাড উপকূল থেকে ২০ নটিক্যাল মাইল দূরে নোঙর করেছে।
এরপর বৃহস্পতিবার দুপুরে সোমালিয়ার গারকাড উপকূল থেকে প্রায় ৭ নটিক্যাল মাইল দূর সমুদ্রে নোঙর করানো হয় এমভি আবদুল্লাহকে। এসময় জলদস্যুরা জাহাজটিকে দ্বিতীয় পক্ষের কাছে হস্তান্তর করে। এর আগে ইউরোপীয় ও ভারতীয় দুটি যুদ্ধজাহাজ এমভি আবদুল্লাহকে অনুসরণ করলে জলদস্যুরা নাবিকদের মাথায় অস্ত্র তাক করে। এসময় কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলিও ছোড়ে তারা। তাই জিম্মিদের ক্ষতির আশঙ্কায় পিছু হটে যুদ্ধজাহাজ দুটি।
জাহাজটিতে জিম্মি এক নাবিক জানিয়েছেন, নোঙর করার পর নাবিকদের প্রথমবারের মতো কেবিনে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়। এছাড়া একসঙ্গে ইফতার ও নামাজ পড়ার সুযোগও দিয়েছে জলদস্যুরা। পরিবারের সঙ্গে কথা বলার অনুমতিও পেয়েছেন বেশিরভাগ নাবিক।
ওই নাবিক বলেন, ‘গতকাল একটা নেভি জাহাজ আসছিল। আজও একটা নেভি জাহাজ আসছে। মোট দুটি জাহাজ মিলে আমাদের রেসকিউ করতে চেয়েছিল। কিন্তু এটা সম্ভব নয়। কারণ তারা তখন আমাদের জিম্মি করে রাখে, মাথায় বড় বড় অস্ত্র তাক করে। দুটি বড় বড় ফ্রিগেট আসছিল। সব ইকুইপমেন্ট নিয়ে। কিন্তু তারা (জলদস্যুরা) এসবে ভয় পায় না। কারণ তারা আমাদের জিম্মি করে রাখে। আমাদের মাথায় গুলি ধরে রাখে। আমাদের তারা রেস্ট্রিকটেড করে রাখে। তবে এখন পর্যন্ত হার্ট (আঘাত) করেনি। সবাই একটা রুমে (ব্রিজে) ঘুমাচ্ছি। একটা ওয়াশরুম ব্যবহার করছি। এভাবে আমাদের অভ্যাস নেই। যখন ঘুমাতে যাই, দেখা যায় বড় বড় অস্ত্র তাক করে আছে। এভাবে কী ঘুম আসে? যা হওয়ার হচ্ছে আরকি।’
এদিকে, নাবিকদের জিম্মি দশার পাশাপাশি শঙ্কার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে পানি ও খাবারের সংকট। তাদের সঙ্গে প্রতিবেলায় ভাগ বসাচ্ছে অন্তত ৩০ জন জলদস্যু।
ওই নাবিক আরও বলেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ এখনো খাবার আছে। তারা (জলদস্যুরা) আমাদের সঙ্গে খাচ্ছে। পানি ব্যবহার করছে। তাই আমাদের এ খাওয়া কতদিন যায় বলা যাচ্ছে না। ১০-১৫ দিন বড়জোর যেতে পারে। এরপর যখন খাবার শেষ হযে যাবে, তখন আমরা খুব সমস্যায় পড়ে যাবো।’
গত ৪ মার্চ বাংলাদেশের এস আর শিপিংয়ের ১৩ মিটার গভীরতার জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ মোজাম্বিকের মাপুতু বন্দর থেকে কয়লা নিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতের উদ্দেশে রওনা দেয়। এরপর গত মঙ্গলবার দুপুর দেড়টার দিকে খবর আসে, ভারত মহাসাগরে জাহাজটি ছিনতাই হয়েছে। জাহাজের ২৩ নাবিককে স্পিডবোটে সোমালিয়া উপকূলে নিয়ে যাওয়ার কথা জানিয়েছেন একজন।
এমভি আবদুল্লাহ জাহাজে থাকা নাবিকদের মধ্যে চট্টগ্রামের বাসিন্দা আছেন ১১ জন। বাকিরা ফেনী, নোয়াখালী, খুলনা, ফরিদপুর, সিরাজগঞ্জসহ বিভিন্ন জেলার। আক্রান্ত নাবিকদের সবাই সুস্থ রয়েছেন বলে জানিয়েছেন এস আর শিপিংয়ের কর্মকর্তারা।
জাহাজটি ছাড়িয়ে আনতে কাজ শুরু করেছে এস আর শিপিং। এজন্য সরকার ও আন্তর্জাতিক মেরিটাইম অর্গানাইজেশনের মাধ্যমে যোগাযোগের চেষ্টা চলছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।