জুমবাংলা ডেস্ক : প্রস্তাবিত বাজেটকে ‘উন্নয়ন ও জনকল্যাণমুখী’ আখ্যা দিয়ে শিল্পের গুরুত্ব বিবেচনায় জ্বালানি খাতে বরাদ্দ বাড়ানোর দাবি জানিয়েছে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই। একই সঙ্গে বাজেটে ২ হাজার টাকা করারোপ প্রস্তাবে সমর্থন জানিয়েছে তারা।
বাজেট বাস্তবায়নে ৮টি চ্যালেঞ্জ রয়েছে বলে মনে করে সংগঠনটি। এগুলো হচ্ছে- সার্বিকভাবে মূল্যস্ফীতির হার নিয়ন্ত্রণ, লেনদেনের ভারসাম্য পরিস্থিতির উন্নয়ন, বৈদেশিক মুদ্রার বিনিয়ম হার স্থিতিশীল রাখা, রিজার্ভ বাড়ানো, অপরিশোধিত তেল সংগ্রহ এবং জ্বালানি, বিদ্যুৎ-গ্যাস ও নিত্য পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি।
রাজধানীর মতিঝিলে এফবিসিসিআই ভবনে শনিবার প্রস্তাবিত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটের ওপর আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানাতে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে সংগঠনটি। এতে বক্তব্য রাখেন এফবিসিসিআই সভাপতি জসিম উদ্দিন।
অবশ্য লোডশেডিংয়ের কারণে সংবাদ সম্মেলন পন্ড হয়ে যায়। ২০ মিনিট বিদ্যুৎ ছাড়াই সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তর দেন জসিম উদ্দিন।
জসিম উদ্দিন বলেন, বর্তমান বিশ্ব অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে বিভিন্ন সংকটের মধ্যে এবং দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির ফলে সৃষ্ট বিরূপ পরিস্থিতিতে বিভিন্ন ধরনের সীমাবদ্ধতা ও নানা প্রতিকূলতা সত্বেও জাতীয় স্বার্থকে অগ্রাধিকার দিয়ে উন্নয়ন ও জনকল্যাণমুখী বাজেট দেওয়ায় প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই।
দেশের জনগণের চাহিদা ও আকাঙ্ক্ষা পূরণে সরকারের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের জন্য বাজেটের আকার অবাস্তব নয়। অর্থনীতির পরিকাঠামো বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বাজেটের আকারও প্রতি বছর বাড়ছে।
তিনি আরও বলেন, বাজেট বাস্তবায়নের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য দরকার সুশাসন, যথাযথ মনিটরিং, বিনিয়োগ ও উৎপাদন আরও বৃদ্ধির মাধ্যমে ব্যবসা-বাণিজ্যবান্ধব রাজস্ব ব্যবস্থাপনা কার্যকরের মাধ্যমে কাঙ্ক্ষিত রাজস্ব আদায় করা জরুরি।
এ উদ্দেশ্যে বাজেট বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে দক্ষতা, স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা এবং তদারকির মান ক্রমাগতভাবে উন্নয়নের জন্য সুস্পষ্ট দিক-নির্দেশনা ও পরিকল্পনা নিশ্চিত করা জরুরি।
জ্বালানি খাতে বরাদ্দ বাড়ানোর দাবি জানিয়ে জসিম উদ্দিন বলেন, উৎপাদন সচল রাখতে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে সময়াবদ্ধ পরিকল্পনা এবং প্রয়োজনীয় সংস্কার করে আর্থিক বরাদ্দের সর্বোত্তম ব্যবহার করার মাধ্যমে জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিতের সুপারশি করছি।
পাশাপাশি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানির দিকে নজর দেওয়া দরকার। সরকারের রাজস্ব আহরণ নিশ্চিত করতে শিল্প উৎপাদন স্বাভাবিক রাখতে হবে।
তিনি আরও বলেন, জ্বালানি তেল আমদানিতে ভ্যাট ও আগাম কর প্রত্যাহার করার ফলে জ্বালানি খরচ কমবে বলে আশা করি। এতে শিল্প খাতসহ সবাই উপকৃত হবে। খুচরা পর্যায়ে জ্বালানির দাম সমন্বয় করা হয়, সে দিকে নজর রাখা উচিত।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে জসিম উদ্দিন বলেন, ৬ কোটি মানুষ স্মার্ট ফোন ব্যবহার করে, ৩ কোটি মানুষ হোল্ডিং ট্যাক্স দেয়। তাহলে ২ হাজার টাকা কর দিতে সমস্যা কোথায়? সবাই উন্নয়ন চায়, সেবা চায়, কর না দিলে সরকার সেবা দেবে কীভাবে। করজাল বাড়াতে প্রয়োজনে ‘কর শুমারি’ করার পরামর্শ দেন তিনি।
রাজস্ব আয় বাড়াতে এনবিআরের সক্ষমতা, দক্ষতা বৃদ্ধির প্রয়োজন মন্তব্য করে জসিম উদ্দিন বলেন, কর-জিডিপি অনুপাত বাড়াতে উপজেলা পর্যায়ে আয়কর ও ভ্যাট অফিস স্থাপন করতে হবে। কারণ এখন উপজেলা পর্যায়ে করযোগ্য অনেক মানুষ বাস করে।
৩ কোটি মানুষ হোল্ডিং ট্যাক্স দেয়, অথচ রিটার্ন জমা পড়ে ২৮-৩০ লাখ। কর হার বাড়ালে ব্যবসায়ীরা শংকিত হয়। অটোমেশন, ডিজিটাইজেশনে নজর দিতে হবে। একইসঙ্গে নীতি বিভাগ ও বাস্তবায়ন বিভাগকে আলাদা করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, অগ্রিম আয়কর ও অগ্রিম কর ব্যবসার খরচ বাড়িয়ে দিচ্ছে। এই কর ফেরতও পাওয়া যায় না, সমন্বয়ও করা যায় না। যেই কর ফেরত দেওয়া হবে, সেটা নেওয়া দরকার কী? ট্যাক্স একবার নিলে সেটা ফেরত পাওয়া খুবই কষ্টসাধ্য।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে জসিম বলেন, ঘাটতি মেটাতে সরকার ব্যাংক খাত থেকে ঋণ না নিয়ে স্বল্প সুদে বিদেশি ঋণ নিতে পারে। বর্তমানে ঋণের সুদ পরিশোধ করতে বর্তমানে ৮২ হাজার কোটি টাকা ব্যয় হয়। ব্যাংক খাত থেকে ঋণ নিলে বেসরকারি ঋণ প্রবাহে চাপ পড়তে পারে। কারণ ব্যাংকগুলো বেসরকারি খাতকে ঋণ দেওয়ার চেয়ে সরকারকে ঋণ দেওয়া অপেক্ষাকৃত নিরাপদ মনে করে।
নতুন আয়কর আইন প্রসঙ্গে বলেন, নতুন আয়কর আইনের বিষয়ে মতামত দিতে ১৭ বার মিটিং করেছি। আইন বাস্তবায়নের আগে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করা প্রয়োজন। তা না হলে ভ্যাট আইনের মতো জটিলতা দেখা দিতে পারে।
লিখিত বক্তব্যের শেষে প্রশ্নোত্তর পর্বে বিদ্যুৎ চলে যায়। এ সময় জসিম উদ্দিন সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে বলেন, ব্যবসায়ীদের কাছে অন্ধকার বেশি ব্যয়বহুল। কারণ এতে উৎপাদন খরচ বাড়ে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু, সহসভাপতি হাবিবুল্লাহ ডন, আমিন হেলালী, ঢাকা চেম্বারের সভাপতি ব্যারিস্টার সামির সাত্তার প্রমুখ।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।