জুমবাংলা ডেস্ক : হাওয়া বেগমের বয়স ৩৩ বছর। দুই সন্তানের জননী। প্রথম স্বামী মারা গেছেন সাপের কামড়ে। দুই বছর পর বিয়ে হয় দেবরের সঙ্গে। তিন বছর সংসার করার পর দেবর বিয়ের কথা অস্বীকার করেন। শ্বশুর বেধড়ক মারধর করে ঘর থেকে তাড়িয়ে দেন। এরপর থেকে স্বামীর সংসারে ফিরতে পারছেন না তিনি। অভাবের কারণে বারবার যুদ্ধে হেরে যাচ্ছেন। দুই সন্তান নিয়ে বাবার সংসারে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। আদালতে মামলা করেও মেলেনি সমাধান।
এখন সন্তানদের নিয়ে কোথায় যাবেন—এমন চিন্তায় দিশেহারা হাওয়া বেগম। তিনি কুয়াকাটা পৌরসভার ৬নং ওয়ার্ডের নবীনপুর গ্রামের জালাল হাওলাদারের ছয় সন্তানের দ্বিতীয় সন্তান।
হাওয়া বেগম ও তার পরিবার জানান, ২০০৬ সালের ১ মে কলাপাড়া উপজেলার বালিয়াতলী ইউনিয়নের কোম্পানীপাড়া গ্রামের আব্দুল বারেক হাওলাদারের বড় ছেলে মো. বেল্লাল হাওলাদারের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। বিয়ের পর ভালোই চলছিল তাদের সংসার। তাদের ঘরে এক কন্যা ও এক পুত্রসন্তান রয়েছে। কিন্তু এ সুখ বেশিদিন টেকেনি।
২০১৭ সালের ১২ নভেম্বর আমনখেতে ধান কাটতে গিয়ে বিষাক্ত সাপের কামড়ে মারা যান স্বামী বেল্লাল হাওলাদার। দুই সন্তানের ভবিষ্যতের চিন্তায় উভয় পরিবারের সম্মতিতে ২০১৯ সালের ২০ অক্টোবর দেবর জসিম হাওলাদারের সঙ্গে বিয়ে করেন হাওয়া বেগম।
তবে পরিবারের আগ্রহ থাকায় কাবিন করা হয়নি। বিয়ের তিন বছরের মধ্যে (মৃত) বড় ভাই বেল্লাল হাওলাদারের রেখে যাওয়া সমস্ত অর্থসম্পদ জসিম হাওলাদার আত্মসাৎ করেন। এরপর থেকে হাওয়াকে বিয়ের কথা অস্বীকার করে জসিম বাড়িতে আসেন না এবং ভরণপোষণ বন্ধ করে দেন। এক পর্যায়ে শ্বশুর বারেক হাওলাদার বেধড়ক মারধর করে দুই সন্তানসহ তাকে ঘর থেকে তাড়িয়ে দেন।
এরপর স্থানীয় পর্যায়ে দফায় দফায় সালিস হয়। সালিসের সিদ্ধান্ত মেনেনেয় শ্বশুরবাড়ির লোকজন। কিন্তু হাওয়া বেগম দুই সন্তান নিয়ে শ্বশুর বাড়ি গেলেই চালানো হয় অমানুষিক নির্যাতন।
এরপর তিনি ২০২২ সালের ২৬ মে পটুয়াখালী নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে একটি মামলা দায়ের করেন। মামলাটির তদন্তভার দেওয়া হয় কুয়াকাটা পৌরসভার মেয়র আনোয়ার হাওলাদারকে। তিনি ঘটনার সত্যতা পেয়ে আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেছেন। মামলাটি চলমান থাকলেও আদালতের ধার্য তারিখ জানতে পারেন না তারা।
হাওয়া বেগমের দাবি টাকা না থাকায় কেউ তার কথা শুনছেন না। জসিমের তদবিরের কাছে তিনি পরাজিত হচ্ছেন। এখন দুই সন্তান নিয়ে কোথায় যাবেন, কি করবেন সেই চিন্তায় দিশেহারা।
এদিকে জসিম আদালতে বিয়ের বিষয়টি অস্বীকার করেছেন। তবে বিয়ের বিষয় নিয়ে আদালতে ‘স্বীকারোক্তিনামা’ দিয়েছেন বিবাহকার্য সম্পন্নকারী স্থানীয় মসজিদের ইমাম হাফেজ মো. লিটন মুন্সী, মাদরাসা শিক্ষক মো. সোহাইব, গ্রাম পুলিশ মো. ইউসুফ আলীসহ আরও দুজন।
জসিম হাওলাদারের ছোট ভাই মাসুদ হাওলাদার বলেন, আমার বড় ভাই বেল্লাল হাওলাদার মারা যাওয়ার পর পরিবারের সম্মতিতে জসিম ভাই বিয়ে করেন হাওয়াকে। এর কয়েক বছর পর জসিম বিয়ে অস্বীকার করেন। পরবর্তীতে শুনছি ভাবি আদালতে মামলা করেছেন। আমি ঢাকায় থাকি। এখন কোন পর্যায়ে আছে আমি জানি না।
স্থানীয় মসজিদের ইমাম হাফেজ মো. লিটন মুন্সী বলেন, উভয় পরিবারের উপস্থিতিতে আমি বিবাহকার্য সম্পন্ন করেছি। কয়েক বছর পর জসিম অস্বীকার করছেন। পরবর্তীতে আদালতে মামলা হয়েছে। আমি আদালতে লিখিত স্বীকারোক্তিনামা দিয়েছি। এখন কি হয়েছে আমার জানা নেই। বিয়ের বিষয়টি স্বীকার করে স্থানীয় গ্রাম পুলিশ (চৌকিদার) ইউসুফ আলী বলেন, স্বীকারোক্তিনামায় আমিও স্বাক্ষর করেছি। জসিম হাওলাদার ও তার পরিবার হাওয়া বেগমের সঙ্গে অন্যায় করছেন।
এ বিষয়ে জসিম হাওলাদারের ব্যবহৃত মুঠোফোনে বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তিনি রিসিভ করেননি।
কুয়াকাটা পৌর মেয়র আনোয়ার হাওলাদার বলেন, হাওয়া বেগম বাদি হয়ে পটুয়াখালী নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে একটি মামলা করেছিল। আদালত তদন্তের জন্য আমার ওপর দায়িত্ব দেন। আমি উভয় পক্ষকে ডেকে মীমাংসার চেষ্টা করেছিলাম। জসিম আমার সঙ্গে বিয়ের কথা স্বীকার করলেও আদালতে অস্বীকার করছেন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।