জুমবাংলা ডেস্ক : বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতের টালমাটাল অবস্থা। এটা চলছে বেশ অনেকদিন ধরেই। কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানিয়েছে, ৯টি ব্যাংকে লালবাতি জ্বলার অবস্থা। পরিস্থিতি সামাল দিতে দুর্বল ব্যাংকগুলোকে সবল ব্যাংকগুলোর সঙ্গে একীভূত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
মূলত পদ্মা ব্যাংক ও এক্সিম ব্যাংকের মিলে যাওয়ার পর দেশজুড়ে এক ধরনের হাহাকার পড়ে যায় — দুর্বল ব্যাংকগুলোতে যাদের আমানত জমা, তাদের কী হবে? পাশাপাশি প্রশ্ন ওঠে, যারা আমানত জমা রাখতে চান তাদের সংশয়, কোন্ ব্যাংকে আমানত জমা রাখবেন! কীভাবে বুঝবেন কোন ব্যাংকের আর্থিক অবস্থা কেমন?
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন
চলতি বছরের শুরুতে ‘ব্যাংকস হেলথ ইনডেক্স (বিএইচআই) অ্যান্ড হিট ম্যাপ’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে বাংলাদেশ ব্যাংক। প্রতিবেদনে ব্যাংকিং খাতের নাজুক অবস্থার চিত্র উঠে আসে। শুরু হয় তুমুল আলোচনা-সমালোচনা।
দেশের ৫৪টি ব্যাংককে তিনটি জোনে ভাগ করা হয়। রেড, ইয়েলো এবং গ্রিন জোন। ‘ইয়েলো জোনে’ আছে ২৯টি ব্যাংক; ‘গ্রিন জোনে’ আছে ১৬টি ব্যাংক; আর বাকি ৯টি রেড জোনে। অর্থাৎ অর্ধেক ব্যাংকও নেই গ্রিন জোনে।
গ্রিন জোনে থাকা ব্যাংকগুলোর মধ্যে মাত্র ৮টি দেশি ও বাকি ৮টি বিদেশি ব্যাংক। সবুজ অঞ্চলে থাকা ১৬টি ব্যাংকের কার্যক্রম ভালো। হলুদ অঞ্চল হলো ভালো-মন্দ মিলিয়ে। আর লাল বিপজ্জনক বা ভঙ্গুর অবস্থায়। যে ৯টি ব্যাংক রেড জোনে রয়েছে, সেগুলো হলো: জনতা, অগ্রণী, রূপালী, বেসিক, বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক, পদ্মা, ন্যাশনাল ব্যাংক, এবি ব্যাংক এবং ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তান।
একীভূতকরণের নীতিমালায় আলোচনা-সমালোচনা
আলোচনায় নতুন মাত্রা পায় যখন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তরফ থেকে নির্দেশনা দেয়া হয়, দুর্বল ব্যাংকগুলোর সঙ্গে একীভূত হবে সবল ব্যাংক। এর পরিপ্রেক্ষিতে ব্যাংক একীভূতকরণ সংক্রান্ত নীতমালা জারি করে বাংলাদেশ ব্যাংক।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিমালার আলোকে দুর্বল ব্যাংকগুলো নিজ থেকে একীভূত না হলে বাধ্যতামূলকভাবে একীভূত করা হবে।
একীভূতকরণে ঝুঁকি!
সবল ব্যাংকের সঙ্গে দুর্বল ব্যাংকের একীভূতকরণের পর সবল ব্যাংকের ঝুঁকি বেড়ে যেতে পারে। দুর্বল ব্যাংকের যাবতীয় দায়িত্ব যেমন সবল ব্যাংকের, তেমনি সেই ব্যাংকের দায়ও এসে পড়বে সবল ব্যাংকের ঘাড়ে। তখন সবল ব্যাংকটিও দুর্বল হয়ে পড়তে পারে।
ব্যাংকের আর্থিক অবস্থা যাচাই
দুর্বল-সবল ব্যাংকের তালিকা প্রকাশ করার পর থেকেই, গ্রাহকরা আমানত খোয়া যাওয়ার আতঙ্কে পড়ে যান। ব্যাংকিং খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের বিভিন্ন ব্যাংক একীভূত করার সিদ্ধান্তে আমানতকারী, স্টেকহোল্ডার, ব্যাংকার ও পরিচালকদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে। এ ঝামেলা এড়াতে স্বাভাবিকভাবে যে ব্যাংক সবচেয়ে নিরাপদ সেই ব্যাংকেই আমানত রাখার চিন্তা করবেন গ্রাহকরা।
তবে ব্যাংকের অবস্থা যাচাই করতে তারল্য সংকট, প্রভিশন, এডি রেশিও, সিআরআর অ্যান্ড এসএলআর, ক্যাপিটাল শর্টফল, ব্যাংক পরিচালনার ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও সুশাসন বিবেচনা করতে হবে। সব কঠিন হিসাবনিকাশ মেলানো সাধারণ মানুষের পক্ষে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সম্ভব নয়।
বেশিরভাগ গ্রাহকেরই এ বিষয়গুলো বুঝে যাচাই করা হয়ত সম্ভব হবে না। তবে গণমাধ্যমজুড়ে যে খবরগুলো পাওয়া যাবে, সেখানে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনগুলো থেকে যে র্যাংকিং বা ক্যাটাগরি করা হয়েছে, সেই ক্যাটাগরি অনু্যায়ী ভরসা করা যেতে পারে। যেহেতু বাংলাদেশ ব্যাংক দেশের অন্যান্য ব্যাংকগুলোর অভিভাবক।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে প্রত্যেকটি বাণিজ্যিক ব্যাংকের ব্যাপারে তথ্য থাকে। সেটা সবসময় শতভাগ যথার্থ না-ও হতে পারে। তবে এটুকু বোঝা যায়, যেহেতু কেন্দ্রীয় ব্যাংক সন্তোষজনক বলেছে, সেহেতু রাতারাতি অঘটন ঘটবে না।
সহজভাবে আরও কিছু বিষয় বললে, ব্যাংকগুলোতে নগদ টাকার যে সরবরাহ তাকে তারল্য বলা হয়। কোনও কারণে ব্যাংকে নগদ টাকা সরবরাহের তুলনায় চাহিদা বেড়ে গেলে তাকে বলে তারল্য সংকট। দেখতে হবে কোনও ব্যাংক বারবার কেন্দ্রীয় বা অন্য কোনও ব্যাংকের দ্বারস্থ হচ্ছে কি না। যদি বারে বারে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে যায়, তার মানে তাদের হাতে টাকা নেই। কোনও ব্যাংকে তারল্য সংকট দেখা দিলে তারা তখন নির্দিষ্ট সুদের বিনিময়ে অন্য ব্যাংক থেকে টাকা ধার করতে শুরু করে।
বেশি সুদ হতে পারে ঝুঁকির কারণ
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যেসব ব্যাংক বেশি সুদ দেয়ার লোভ দেখায়, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এটা ঝুঁকির কারণ হতে পারে। হয়ত তাদের এরই মধ্যে যে ঋণ আছে, সে অনুযায়ী আমানত নেই। তাই বেশি সুদ দিয়ে আমানত নিয়ে আসার পরিকল্পনা থাকতে পারে। মাথায় প্রশ্ন রাখতে হবে, যারা বেশি সুদ দেয়ার কথা বলছে, বাজারে যে রেট আছে তার চেয়ে বেশি কেন দিচ্ছে!
আলোচিত ফ্রেজার-ম্যাকগার্ক ও স্মিথকে ছাড়াই অস্ট্রেলিয়ার বিশ্বকাপ দল
ব্যাংক পরিচালনার ক্ষেত্রে দরকার স্বচ্ছতা ও সুশাসন
ব্যাংক পরিচালনার ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও সুশাসন নিশ্চিত হচ্ছে কি-না, সে ব্যাপারে ধারণা রাখা যেতে পারে। কোনও ব্যাংকের কেলেঙ্কারি যদি গণমাধ্যমে আসে, তার মানে তাদের পরিচালনায় সুশাসনে ঘাটতি আছে। যেমন সম্প্রতি এক্সিম ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হওয়া পদ্মা ব্যাংকের কথা যদি বলি, এ পদ্মা ব্যাংক শুরুতে ছিল ফারমার্স ব্যাংক। বড় ধরনের আর্থিক অনিয়মের ঘটনা ঘটে এ ব্যাংকে। বিতরণ করা ঋণের প্রায় পুরোটা খেলাপি হয়ে যাওয়ায় কয়েক বছরের মধ্যে মালিকানা-ব্যবস্থাপনায় পরিবর্তন আসে।
ফারমার্স ব্যাংকের নাম বদলে রাখা হয় পদ্মা ব্যাংক। কিন্তু নতুন ব্যবস্থাপনায়ও ব্যাংকটি জাগেনি। আবার ২০২৪ সালে এসে রেড জোনে চলে আসে পদ্মা ব্যাংক। মাঝের এ সময়টুকুতে গ্রাহকদের সচেতন হওয়ার সুযোগ ছিল।
তবে সমীকরণ মিলিয়ে কোনো ব্যাংক যাচাই করা হয়ত সম্ভব নয়। কিন্তু আমানত নিরাপদ ব্যাংকে রাখার জন্য কিছুটা সচেতন হলে অনেকাংশে যাচাই করে সিদ্ধান্ত নেয়া সম্ভব। সূত্র : সময় সংবাদ
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।