বিজ্ঞান ও প্রযক্তি ডেস্ক : ভিন্নমত, প্রতিবাদ, বিক্ষোভ দমনের জন্যই নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত ইন্টারনেট বন্ধ রাখার নজির আছে অনেক দেশের। কিপইটঅন কোয়ালিশন নামের একটি প্ল্যাটফর্ম রয়েছে, যেটি ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে মানুষের অধিকার নিয়ে কাজ করে নিউইয়র্কভিত্তিক অ্যাকসেস নাউ এবং ইন্টারনেট বন্ধের বিষয়ে কাজ করে।
ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ নিয়ে কিপইটঅন কোয়ালিশন সর্বশেষ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে গত মার্চে। এই প্রতিবেদনে ২০২৩ সালের পরিস্থিতি তুলে ধরা হয়। সেখানে বলা হয়, সহিংসতা, যুদ্ধাপরাধ ও গণতন্ত্রের ওপর আক্রমণ এবং অন্যান্য নৃশংসতা দমন করতে বিভিন্ন দেশের সরকার ইন্টারনেট সেবা বন্ধ করে।
বিশ্বের অনেক দেশেই এমন ঘটনা ঘটেছে। এমনকি ইন্টারনেট বন্ধ রাখা এখন খুব সাধারণ বিষয় হয়ে উঠেছে। মিশরের ২০১১ সালের বিপ্লব এবং ২০১৬ সালের ব্যর্থ তুর্কি সামরিক অভ্যুত্থানের সময় ইন্টারনেট বন্ধের প্রচলন শুরু হয়। ভারত, বিশ্বের সবচেয়ে বেশি ইন্টারনেট অ্যাক্সেস আছে এই দেশে। সেখানে বিভিন্ন সময় ইন্টারনেট শাটডাউন করা হয়েছে। এমনকি এটি বিশ্বের সবচেয়ে বেশি ইন্টারনেট শাটডাউন করা দেশের তালিকায় প্রথম।
কাশ্মীর এবং রাজস্থানে বিক্ষোভের সময় ইন্টারনেট শাটডাউন করা হয়েছিল। ২০২৩ সালে, মণিপুর রাজ্যে জাতিগত উত্তেজনা ও বিক্ষোভের সময় ইন্টারনেট শাটডাউন করা হয়েছিল। সেসময় সব ভারতীয় ইন্টারনেট ব্লকেজ এবং শাটডাউন ছিল প্রায় ৮ হাজার ঘণ্টা। যে কারণে প্রায় ৫৯ মিলিয়ন মানুষ প্রভাবিত হয়েছিল। ইথিওপিয়া, মায়ানমার এবং ইরানে, ভিন্নমত দমন, প্রতিবাদ দমনে প্রায় দীর্ঘ সময় ইন্টারনেট ব্লক করেছে।
যেখানে বাংলাদেশে এই সময় ছিল বাংলাদেশে ৫ দিন ১২ ঘণ্টা। রাশিয়া, ইথিওপিয়া এবং মায়ানমারে বিপুল সংখ্যক শাটডাউনে দেশগুলোর অর্থনীতিতে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। টপ১০ভিপিএনের তথ্যমতে, ২০২৩ সালে প্রায় ১ হাজার ৩৫০ ঘণ্টা ইচ্ছাকৃত ইন্টারনেট ডাউনটাইম এবং লক্ষ্যযুক্ত ব্লকগুলোর কারণে রাশিয়ান অর্থনীতির ৪ বিলিয়ন ডলার ক্ষতি হয়েছে।
সবচেয়ে বেশি সময় ইন্টারনেট শাটডাউন রাখার দেশের তালিকায় প্রথমেই আছে ভারত। এরপর মায়ানমার, ইথিওপিয়া, ইরান, রাশিয়া, তানজানিয়া, সেনেগাল, আজারবাইজান। চলুন এই দেশগুলোর ইন্টারনেট শাটডাউনের কারণ ও এর প্রভাব জেনে নেওয়া যাক-
ভারত
২০২৩ সালে, ভারত মোট ৭ হাজার ৯৫৬ ঘণ্টা ইন্টারনেট বন্ধের অভিজ্ঞতা পেয়েছিল। যার মধ্যে ৫ হাজার ঘণ্টার বেশি সময় শুধু মণিপুরে সংঘাতের জন্য দায়ী করা হয়েছে। এই শাটডাউন জাতিগত উত্তেজনার মধ্যে জনশৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য প্রয়োগ করা হয়েছিল, তবে লাখ লাখ মানুষ ইন্টারনেটের অভাবে ক্ষতির মুখে পরেছেন। এই শাটডাউনের কারণে দেশে ৫৮৫ মিলিয়ন ডলার ক্ষতি হয়েছিল।
মায়ানমার
মায়ানমারের সামরিক সরকার সংঘাতপূর্ণ এলাকায়, বিশেষ করে ২০২১ সালের অভ্যুত্থানের বিরোধিতাকারী অঞ্চলগুলোতে ইন্টারনেট বন্ধ অব্যাহত রেখেছে। এই শাটডাউন আন্তর্জাতিক নিন্দা এবং নাগরিকদের তথ্যের অ্যাক্সেসের উপর প্রভাব থাকা সত্ত্বেও ভিন্নমত দমন এবং তথ্য নিয়ন্ত্রণ করার লক্ষ্যে করা হয়। ইন্টারনেট বন্ধের কারণে মান্দালে, চীন, কায়াহ, কাচিন এবং ম্যাগওয়ের মতো ৪২টি টাউনশিপ প্রভাবিত হয়েছে।
ইথিওপিয়া
২০২৩ সালে ইথিওপিয়ার ইন্টারনেট ব্লক আমহারা অঞ্চলে রাজনৈতিক অস্থিরতার অঞ্চলগুলোতে ছিল। সেখানে ইউটিউব, ফেসবুক, টেলিগ্রাম এবং টিকটকের মতো সোশ্যাল মিডিয়া সাইটগুলো একটানা পাঁচ মাস ব্যবহারে সীমাবদ্ধ ছিল। সরকার সংঘাতের সময় তথ্যের বিস্তার নিয়ন্ত্রণের জন্য এই শাটডাউন প্রয়োগ করে, যা যোগাযোগকে প্রভাবিত করে এবং স্থানীয় জনগণ এই পরিষেবাগুলো থেকে অনেক দূরে ছিল।
ইরান
২০২৩ সালে ব্যাপক বিক্ষোভের প্রতিক্রিয়ায় ইরানের সরকার কঠোর ইন্টারনেট ব্লক আরোপ করেছিল। শাটডাউন করা হয় জাহেদান অঞ্চলে তীব্র, ভিন্নমতকে নীরব করার এবং বিক্ষোভের সংগঠনকে প্রতিরোধ করার জন্য। লাখ লাখ মানুষকে প্রভাবিত করে এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য বিশ্বব্যাপী সমালোচনা হতে থাকে। এই শাটডাউনের প্রেক্ষাপট ছিল মাহসা আমিনীর মৃত্যুর পর বিক্ষোভে সরকারের প্রতিক্রিয়া। শাটডাউনগুলোর প্রভাব পরে দেশের অর্থনীতিতে। অনুমান করা হয় ৯০৭ মিলিয়ন ডলার ক্ষতির মুখে পড়ে দেশটি।
রাশিয়া
রাশিয়ায়, ২০২৩ সালে মোট ১ হাজার ৩৫০ ঘণ্টার জন্য ইন্টারনেট শাটডাউন করে। রাজনৈতিক সেন্সরশিপ এবং ইউক্রেনের সঙ্গে চলমান সংঘর্ষের সময়টাতে ইন্টারনেট শাটডাউন করা হয়। যার ফলে উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক ক্ষতি হয় এবং নাগরিকদের দৈনন্দিন জীবন প্রভাবিত হয়। মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলো এটিকে রাশিয়ার নাগরিকদের অধিকার এবং সংবাদপত্রের সেন্সরশিপের লঙ্ঘন বলে ঘোষণা করেছে।
তানজানিয়া
তানজানিয়া ২০২৩ সালে ইন্টারনেট বিধিনিষেধের সম্মুখীন হয়েছিল, সরকার ক্লাবহাউসের মতো প্ল্যাটফর্মগুলোকে লক্ষ্য করে এই ব্যবস্থা নেয়। সেখানে রাজনৈতিক আলোচনা বেশি হয়। এই পদক্ষেপগুলো এই অঞ্চলে ডিজিটাল সেন্সরশিপে বড় ধরনের প্রভাব ফেলে।
সেনেগাল
২০২৩ সালে সেনেগালের ইন্টারনেট বন্ধ ছিল। রাজনৈতিক উত্তেজনা, বিশেষ করে একজন বিরোধী নেতার গ্রেপ্তারের পরে। এই সময়ের মধ্যে সরকারের ইন্টারনেট ব্লক বিক্ষোভ দমন করার এবং তথ্য প্রবাহের উপর নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখার উপায় হিসেবে দেখা হয়েছিল।
আজারবাইজান ২০২৩ সালে ২ হাজার ৪৮৭ ঘণ্টা সম্পূর্ণ ইন্টারনেট ব্ল্যাকআউট এবং ১ হাজার ৮ ঘণ্টা সামাজিক মিডিয়া বন্ধ ছিল। যদিও এর সুনির্দিষ্ট কোনো কারণ দেখায়নি সরকার। এই শাটডাউনকে রাজনৈতিকভাবে সংবেদনশীল সময়ে বিরোধী কর্মকাণ্ড দমন এবং তথ্যের প্রচার পরিচালনার জন্য সরকারি প্রচেষ্টার অংশ বলে বোঝা যায়। নাগোর্নো-কারাবাখের বিতর্কিত অঞ্চলে ইন্টারনেট এখনও বন্ধ রয়েছে।
সূত্র: স্ট্যাটিস্টা, টাইমস অব ইন্ডিয়া
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।