আলমগীর আলম : একসময় স্বাস্থ্যবিজ্ঞানীরা ডিম খেতে নিষেধ করতেন। সেটা চলেছে দীর্ঘদিন। ডিম খাওয়া যে খারাপ কিছু নয়, এটা নিয়ে আরেক দল নানান বিতর্ক করেছে কয়েক দশক ধরে। শেষ পর্যন্ত ডিম খাওয়ার প্রতি আর এখন বাধা দেওয়া হয় না।
ডিম খাওয়া মানুষের একটি পুরোনো অভ্যাস। বিভিন্ন উপায়ে ডিম খাওয়ার প্রতি মানুষের ঝোঁক বরাবরই ছিল। মানুষ মনে করে, এটি পুষ্টিকর খাবার, যা প্রতিদিন খাওয়া উচিত। নানান কারণে এটা খেতে বাধা আসায় মানুষের মনে প্রশ্ন ছিল। কিন্তু আধুনিক গবেষণায় দেখা গেছে, ডিম খাওয়ায় স্বাস্থ্যর কোনো ক্ষতি হয় না। কোলেস্টেরল বৃদ্ধি নিয়ে যে মিথ ছিল, সেটাও দূর হয়েছে। একটি ডিমে ৬ গ্রাম প্রোটিন থাকে। সেই সঙ্গে ৯টি প্রয়োজনীয় অ্যামিনো অ্যাসিড ও প্রোটিনের বিল্ডিং ব্লক থাকে। এগুলো মানুষের শরীর নিজে থেকে তৈরি করতে পারে না। ডিমের সাদা অংশে প্রায় অর্ধেক প্রোটিন থাকে। বাকি অংশে চর্বি এবং কোলেস্টেরলের একটি ছোট অংশ থাকে। ডিমে উচ্চ মানের প্রোটিন, সেলেনিয়াম, ফসফরাস, কোলিন, ভিটামিন বি১২ এবং একাধিক অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট থাকে, যা মানুষের শরীরের কোষ সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।
কোলেস্টেরলের মিথ থেকে দূরে থাকুন
ডিম শরীরে ‘ভালো’ কোলেস্টেরল জোগাতে সাহায্য করে। এই ভালো কোলেস্টেরল বা এইচডিএল হৃৎপিণ্ডের জন্য উপকারী। সেই সঙ্গে ডিম ট্রাইগ্লিসারাইড কমাতে পারে। ডিম খাওয়া, বিশেষ করে নির্দিষ্ট ফ্যাটি অ্যাসিডসমৃদ্ধ (যেমন ওমেগা-৩) ডিম খাওয়ার কারণে স্ট্রোক হওয়ার প্রবণতা কমতে পারে। যাঁরা প্রতিদিন ডিম খান, তাঁদের রক্তক্ষরণজনিত স্ট্রোক হওয়ার আশঙ্কা ডিম না খাওয়া মানুষদের থেকে প্রায় ৩০ শতাংশ কম।
ডিমে প্রায় ৭০ ক্যালরি থাকে। এই ক্যালরি খুব সহজে শরীরে ভ্রমণ করে এবং শক্তির জোগান দেয়। এতে কোনো ধরনের চিনি বা শর্করা নেই। যার কারণে প্রি-ডায়াবেটিস বা টাইপ-২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তিরাও প্রতিদিন ডিম খেতে পারেন। ওজন কমানোর জন্য নানান খাদ্য পরিকল্পনায় ডিমের ডায়েটের ওপর জোর দেওয়া হয়। সাম্প্রতিক একটি চীনা গবেষণায় দেখা গেছে, ডায়াবেটিসের রোগীদের সুগার স্তর বাড়ানোর ক্ষেত্রে ডিমের প্রভাব নেই। এ ছাড়া দেখা গেছে, যাঁরা প্রতিদিন একটি ডিম খেয়েছেন তাঁদের হৃদ্রোগ হওয়ার আশঙ্কা প্রায় ২০ শতাংশ কম ছিল। ডিম ক্ষুধা লাগার প্রবণতা কমিয়ে দেয়।
ডিমের অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট লুটিন ও জেক্সান্থিন আপনাকে চোখের রোগ, যেমন ছানি ও বয়স-সম্পর্কিত পেশি ক্ষয়ের হাত থেকে রক্ষা করতে সহায়তা করে। ডিমে থাকা চর্বি শরীরের জন্য পুষ্টি ব্যবহার সহজ করে তোলে। ডিম মস্তিষ্ককে তীক্ষ্ণ করতে সাহায্য করে। সাপ্লিমেন্টের চেয়ে ভালো এবং খাবার থেকে পাওয়া যায় না এমন ভিটামিন ডি থাকে ডিমে। এতে কোলিন নামক উপাদান আছে, যা স্নায়ু কোষগুলোকে (নিউরন) একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগ করতে সহায়তা করে। গর্ভবতী এবং বুকের দুধ খাওয়ানো নারীদের জন্য কোলিন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। কারণ এটি শিশুর মস্তিষ্কের বিকাশে বড় ভূমিকা পালন করে।
ডিম কীভাবে খাবেন
স্ক্র্যাম্বলড, পোচ, সানি সাইড আপ অথবা অমলেট বা কুইচ করে ডিম খেতে পারেন। তবে সেদ্ধ খাওয়া সবচেয়ে ভালো। সকালে নাশতায় এটি খেতে পারেন, ইচ্ছে হলে দুটোও খেতে পারেন। অনেকে প্রশ্ন করেন ফার্ম, দেশি নাকি হাঁসের, কোনটা সবচেয়ে ভালো ডিম? দেশি ডিম নিঃসন্দেহে ভালো। তবে হাঁসের ডিম উত্তম। ভালো করে সেদ্ধ করে কুসুমসহ ডিম খাবেন। ফার্মের ডিম নিয়ে নানান সন্দেহ আছে। বিভিন্ন পরীক্ষায় ভারী ধাতু পাওয়া যাচ্ছে ডিমে। এ কারণে লাভের চেয়ে ক্ষতি বেশি হতে পারে।
আলমগীর আলম, খাদ্য পথ্য ও আকুপ্রেশার বিশেষজ্ঞ, প্রধান নির্বাহী, প্রাকৃতিক নিরাময় কেন্দ্র
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।