আন্তর্জাতিক ডেস্ক : লোহিত সাগরে আর কতো ধরনের চমক দেখাবে ইয়েমেনের সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠি- হুতিরা? তাদের একের পর এক বিস্ময়কর অভিযানে পশ্চিমাদের রাতের ঘুম হারাম হয়েছে আগেই, এবার মাথা নষ্ট হবার পালা। এডেন উপসাগর ও মান্দাব প্রণালীতে ৫৪ জাহাজে হামলার ডুবিয়েছে ব্রিটিশ কার্গো। এরপরই দুই মার্কিন যুদ্ধে জাহাজে হুতি যোদ্ধাদের মিসাইল ও ড্রোন হামলার খবরে তোলপাড় গোটা দুনিয়া।
ঠিক এমন পরিস্থিতিতেই আরেকটি খবরে নড়চড়ে বসেছে ইসরাইলি হায়েনাদের দোসর পশ্চিমারা। লোহিত সাগরের নিচে তিনটি সাবমেরিন ক্যাবল কাটা পড়েছে। তিন ক্যাবল বিশ্বব্যাপী ইন্টারনেট ও টেলিযোগাযোগে ব্যবহার করা হতো। তবে কাটা এই তিনটি লাইন কেটে দিয়েছে, সেটি এখনও অস্পষ্ট। এরিমধ্যে হুতিরা এসব সাবমেরিন ক্যাবলে হামলার কথা অস্বীকার করেছে। তবে পশ্চিমাদের আঙ্গুল হুতিদের দিকেই।
হংকং-ভিত্তিক এইচজিসি গ্লোবাল কমিউনিকেশনস জানিয়েছে, কাটা লাইনগুলো হলো- এশিয়া-আফ্রিকা-ইউরোপ ওয়ান, ইউরোপ ইন্ডিয়া গেটওয়ে, সিকম এবং টিজিএন-গালফ। এটি লোহিত সাগরের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত ট্রাফিকের ২৫ শতাংশ প্রভাবিত করে। এটি রুটকে এশিয়া থেকে ইউরোপে ডেটা স্থানান্তরের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচনা করা হয়। তবে ট্র্যাফিকটি বিকল্প পথে সচল রাখার চেষ্টা হচ্ছে।
গত সপ্তাহে এডেন উপসাগরে বৃটিশ মালিকানাধীন একটি কার্গো জাহাজে মিসাইল হামলা চালায় ডুবিয়ে দেয় ইরান সমর্থিত হুতিরা। এরপরই সাবমেরিন ক্যাবলকে টার্গেট করার খবর পাওয়া গেলো। ইয়েমেনের সৌদি সমর্থিত সরকারও এই মাসে হুতিদের এমন পরিকল্পনার কথা জানিয়ে বলেছিলো, লোহিত সাগরে পশ্চিমা ইন্টারনেট নেটওয়ার্ক ধ্বংসের পরিকল্পনা করছে হুতি যোদ্ধার।
হুতি-সংযুক্ত একটি টেলিগ্রাম চ্যানেল লোহিত সাগরের তলে বিছানো সাবমেরিন ক্যাবলের একটি মানচিত্র প্রকাশ করার পরে এ সতর্কতা আসে। চিত্রটির সাথে একটি বার্তা ছিল, সমুদ্রের মাধ্যমে বিশ্বের সব অঞ্চলকে সংযুক্ত করা আন্তর্জাতিক তারের মানচিত্র রয়েছে। মনে হচ্ছে ইয়েমেন একটি কৌশলগত অবস্থানে রয়েছে, কারণ ইন্টারনেট লাইন যা শুধুমাত্র দেশগুলোই নয়, সমগ্র মহাদেশকেও সংযুক্ত করে।
বলা হচ্ছে মঙ্গলবার বিশ্বব্যাপী ফেসবুক-ইনিস্টাগ্রাম ও হোয়াটসঅ্যাপে হঠাৎ করে বন্ধ হবার পেছনে লোহিত সাগরে সাবমেরিন ক্যাবল কাটা পরার যোগসূত্র রয়েছে বলেও জানা গেছে। যদিও এই নিয়ে ফেসবুক মালিক মেটা কোন কথা বলেনি। তবে প্রযুক্তিবিদরা বলছেন, আমেরিকা-ইউরোপ হয়ে এশিয়া ও আফ্রিকাতে ডেটা ট্রান্সফারে যেসব সাবমেরিন ক্যাবল রয়েছে, তার আটটিই বিছানো আছে লোহিত সাগরের তলদেশে।
নিউইয়র্ক পোস্ট জানিয়েছে, লোহিত সাগরের নিচে থাকা অন্তত চারটি সাবমেরিন ক্যাবল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এগুলো সৌদি আরবের সঙ্গে জিবুতির যোগাযোগ ব্যাহত করেছে। ইসরাইলি সূত্রের বরাতে আরও বলা হয়, সমুদ্রের তলদেশে থাকা ইন্টারনেট ক্যাবলকে টার্গেট করে একাধিক হামলা চালিয়েছে ইয়েমেনের হুতিরা। এতে এশিয়া ও ইউরোপ মহাদেশের মধ্যেকার যোগাযোগ ব্যাপকভাবে ব্যাহত হয়েছে।
যদিও হুতি সমর্থিত ইয়েমেন সরকার এই ধরনের খবরকে অস্বীকার করে আসছে। তাদের ভাষ্য, হুতিরা যা করে সেটা বলে কয়েই করে। চোরাপথে কোন কিছু করা হুতিদের স্বভাব নয়, এই স্বভাব পশ্চিমাদের এবং সেটি সবাই জানে। উল্লেখ্য, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের মধ্যে কৃষ্ণ সাগরে সাবমেরিন গ্যাসলাইন বিস্ফোরণের জন্য পশ্চিমারা ক্রেমলিনকে দায়ী করলেও পরে প্রমাণ হয় এর পেছনে জড়িত ছিলো পশ্চিমারাই।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।