আন্তর্জাতিক ডেস্ক : যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বেশীরভাগ স্টেটে ভোটগ্রহণ শুরু হবে আজ বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা ৭টায়। বুধবার (৬ নভেম্বর) সকাল নাগাদ বেশিরভাগ অংশে ভোটগ্রহণ সম্পন্ন হবে। প্রতি চার বছর পরপর নভেম্বরের প্রথম সোমবারের পরের দিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হয়। সে প্রথা অনুসারে দেশটির ৪৭তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের মূল ভোটগ্রহণ হবে।
কমালা হ্যারিস নাকি ডোনাল্ড ট্রাম্প- কে হতে যাচ্ছেন ক্ষমতাধর দেশটির পরবর্তী প্রেসিডেন্ট? এ হিসাব মিলাচ্ছেন দেশটির নাগরিকরা। ইতোমধ্যে আগাম ভোট দিয়েছেন ৭ কোটি ৭০ লাখের বেশি ভোটার। ভোটযুদ্ধে যে জিতবেন তিনিই নতুন ইতিহাস গড়বেন। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে স্বাভাবিক ও সঙ্গত কারণেই সজাগ দৃষ্টি সারা বিশ্বের মানুষদের। কারণ এ ভোটের ফল প্রভাব ফেলবে বিশ্বের অর্থনীতি, যুদ্ধনীতি ও অভিবাসনে।
সব কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ সম্পন্ন হওয়ার পর ধীরে ধীরে বুথ ফেরত জরিপের ফল পাওয়া যাবে। তবে নিউইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদন অনুসারে, সাড়ে সাত কোটির বেশি ভোটার এবার আগাম ভোট দিয়েছেন। দ্য গার্ডিয়ানের প্রতিবেদন অনুসারে, এসব ভোটারের মধ্যে ক্ষমতাসীন ডেমোক্র্যাট সমর্থক বেশি এবং কমলাই বেশি আগাম ভোট পেয়েছেন।
ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের ৪৫তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন ২০১৭ সালের ২১ জানুয়ারি থেকে ২০২০ সালের ২০ জানুয়ারি পর্যন্ত। রাজনীতিতে নতুন নাম লেখানো এই ধনকুবের রিপাবলিকান দলের টিকিটে ২০১৬ সালের নির্বাচনে সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও সাবেক ফার্স্ট লেডি হিলারি ক্লিনটনকে হারিয়েছিলেন। তবে ২০২০ সালের নির্বাচনে তিনি বাইডেনের কাছে হেরে যান।
এবার ট্রাম্প ও কমলা ছাড়া আরও চার প্রার্থী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তবে তাদের জয়ের কোনো সম্ভাবনা নেই। নিউইয়র্কের ব্যালটে ইংরেজির পাশাপাশি যে চারটি ভাষা থাকবে, এর একটি বাংলা।
বিভিন্ন জরিপে ট্রাম্প ও কমলার মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের আভাস পাওয়া যাচ্ছে। তবে এর আগে সবগুলো জরিপেই বেশ কয়েক পয়েন্ট ব্যবধানে কমলাকে এগিয়ে থাকতে দেখা গেছে। বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ফাইভ থার্টি এইট ও এবিসি নিউজের যৌথ জরিপে মঙ্গলবার ট্রাম্পের (৪৭%) চেয়ে কমলা (৪৮%) এগিয়ে ছিলেন।
অন্যদিকে, সেলজার পরিচালিত জরিপে আইওয়া জরিপে তিন পয়েন্ট ব্যবধানে ট্রাম্পকে (৪৪%) পিছে ফেলেছেন কমলা (৪৭%)। ট্রাম্প অবশ্য এসব জরিপকে ‘গণমাধ্যমগুলোর মিথ্যাচার ও পরিকল্পিত’ বলে অভিহিত করেছেন। তবে মার্কিন নির্বাচনের ফল নির্ধারণ করে দেয় বলে খ্যাতি আছে যে সাত রাজ্যের- অ্যারিজোনা, জর্জিয়া, মিশিগান, নেভাডা, নর্থ ক্যারোলাইনা, পেনসিলভানিয়া ও উইসকনসিন- সেসব রাজ্যের সবকটিতে কমলাকে পিছে ফেলেছেন বলে অ্যাটলাস ইনটেলের জরিপে দেখা গেছে। জরিপে অংশ নেওয়াদের মধ্যে ট্রাম্পের পক্ষে ৫২ দশমিক ৩ শতাংশ এবং কমলার প্রতি ৪৫ দশমিক ৮ শতাংশ মানুষ সমর্থন জানিয়েছেন।
২০১৬ সালের নির্বাচনেও জরিপগুলোয় হিলারিকে ট্রাম্পের চেয়ে অনেক বেশি এগিয়ে থাকতে দেখা গিয়েছিল। ভোটের ফলে দেখা যায়, জনপ্রিয় ভোটে হিলারি ৩০ লাখের বেশি ভোট পেলেও ইলেকটোরাল কলেজের ভোটে জয় পান ট্রাম্প। মোট ইলেকটোরাল ভোট (মানে যারা প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করতে পারবেন) ৫৩৮টি। প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার জন্য প্রয়োজন পড়ে ২৭০টি ইলেকটোরাল ভোটের।
এবারও জরিপগুলোর নির্ভরযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন ট্রাম্প ও তার সমর্থকরা। এবার ফক্স নিউজ বা এ রকম ট্রাম্পঘেঁষা কয়েকটি গণমাধ্যমের কথা বাদ দিলে মার্কিন ও ব্রিটিশ গণমাধ্যমগুলো কমলাকে ইতিবাচকভাবে প্রচার করেছে। নিউইয়র্ক টাইমসের সম্পাদকীয় পরিষদ তো রোববার এক নিবন্ধে স্পষ্ট করে বলেছে, ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হওয়ার জন্য অযোগ্য। তবে ট্রাম্পের প্রচারশিবির প্রথম থেকেই বলে আসছে, ক্ষমতাসীনরা নানাভাবে ভুয়া তথ্য ছড়াচ্ছে। ট্রাম্প নিজে বলেছেন, ডেমোক্র্যাটরা প্রতারণা না করলে এ নির্বাচনে তিনি আবার জয়লাভ করবেন।
এবারের নির্বাচনী প্রচারে ট্রাম্প ও কমলা পরস্পরকে দোষারোপ, ব্যক্তিগত অনেক আক্রমণ করেছেন। ট্রাম্প না জিততে পারলে এবারও সহিংসতার আশঙ্কা করছেন রাজনীতি বিশ্লেষকরা।
এই নির্বাচনের ফলের প্রভাব বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বেই পড়বে বলে ধারণা করা যায়। ট্রাম্প বলেছেন, তিনি নির্বাচনে জিতলে ইউক্রেন যুদ্ধ ২৪ ঘণ্টায় বন্ধ করে দেবেন। গাজা যুদ্ধও বন্ধের ইঙ্গিত দিয়েছেন তিনি। একেবারে শেষপ্রান্তে এসে একদিন আগে কমলাও সুর বদল করে বলেছেন, জয়ী হলে গাজা যুদ্ধ বন্ধ করবেন তিনি। করোনা ভাইরাস মহামারীর পরে বিশেষ করে ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্ব অর্থনীতি টালমাটাল। ফলে ট্রাম্প নাকি কমলা- কার হাতে ওঠে হোয়াইট হাউসের চাবি, সে দিকে নজর রয়েছে বিশ্ব বাসীর।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।