আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পহেলগামে পর্যটকদের ওপর হামলার ঘটনার দু’সপ্তাহ পর পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে পাকিস্তানের অন্তত নয়টি স্থানে হামলা চালিয়েছে ভারত। ভারতীয় গণমাধ্যম এনডিটিভির এক প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, পাকিস্তানে এই হামলায় অন্তত ৭০ জন নিহত হয়েছেন।
Table of Contents
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী পহেলগামের ঘটনার পর সশস্ত্র বাহিনীকে সম্পূর্ণ অপারেশনাল স্বাধীনতা দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন। এতে বাহিনী নিজে থেকেই প্রতিক্রিয়ার কৌশল, সময় ও লক্ষ্যের সিদ্ধান্ত নিতে পারে।
ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের ইতিহাস ও সামরিক শক্তির তুলনা
এখন পর্যন্ত তিনবার পূর্ণমাত্রার যুদ্ধ এবং একবার সীমিত যুদ্ধ হয়েছে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে। সর্বশেষ পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধ হয় ১৯৭১ সালে এবং ১৯৯৯ সালে কারগিল সীমান্তে হয় সীমিত যুদ্ধ, যেখানে পারমাণবিক যুদ্ধের আশঙ্কা দেখা দেয়।
গ্লোবাল ফায়ারপাওয়ার-এর তথ্য অনুযায়ী, সামরিক শক্তির দিক থেকে ২০২৫ সালে ভারত বিশ্বের চতুর্থ শক্তিশালী দেশ হবে। অন্যদিকে পাকিস্তান রয়েছে ১৪৫টি দেশের মধ্যে ১২তম অবস্থানে।
সুইডিশ থিঙ্ক ট্যাঙ্ক স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউট (SIPRI) এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৪ সালে ভারতের প্রতিরক্ষা বাজেট পাকিস্তানের তুলনায় ৯ গুণ বেশি ছিল। ভারত ২০২৫ সালে প্রতিরক্ষা খাতে ৮৬ বিলিয়ন ডলার ব্যয়ের পরিকল্পনা করেছে, যেখানে পাকিস্তান ১০ বিলিয়ন ডলারের সামান্য বেশি বরাদ্দ দিয়েছে।
সেনা সংখ্যা ও স্থলবাহিনী
গ্লোবাল ফায়ারপাওয়ার অনুসারে, ভারতের সক্রিয় সৈন্য সংখ্যা প্রায় ১৪.৫ লাখ এবং পাকিস্তানের প্রায় ৬.৫ লাখ। রিজার্ভ সেনা ও প্যারামিলিটারি বাহিনীতেও ভারত এগিয়ে।
ট্যাংক, সাঁজোয়া যান ও কামান ব্যবস্থায়:
- ভারতের ট্যাংক: ৪,২০১টি, পাকিস্তানের: ২,৬২৭টি
- ভারতের সাঁজোয়া যান: ১,৪৮,৫৯৪টি, পাকিস্তানের: ১৭,৫১৬টি
- ভারতের টোওড আর্টিলারি: ৩,৯৭৫টি, পাকিস্তানের: ২,৬২৯টি
তবে সেলফ প্রোপেলড আর্টিলারি ও মোবাইল রকেট প্রোজেক্টর ব্যবস্থায় পাকিস্তান এগিয়ে।
নৌবাহিনী
ভারতের নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজ সংখ্যা ২৯৩টি, যার মধ্যে রয়েছে:
- ২টি বিমানবাহী রণতরী
- ১৩টি ডেস্ট্রয়ার
- ১৪টি ফ্রিগেট
- ১৮টি সাবমেরিন
- ১৮টি কর্ভেট
- ১৩৫টি টহল জাহাজ
পাকিস্তানের ১২১টি যুদ্ধজাহাজ রয়েছে, তবে তাদের নেই কোনো বিমানবাহী রণতরী বা ডেস্ট্রয়ার।
বিমানবাহিনী
ভারতের বিমান রয়েছে ২,২২৯টি এবং পাকিস্তানের ১,৩৯৯টি।
ভারতের যুদ্ধবিমান ৬৪৩টি, পাকিস্তানের ৪১৮টি।
ভারতের কাছে রয়েছে ১৩০টি বোমারু বিমান, পাকিস্তানের ৯০টি।
ভারতের উল্লেখযোগ্য বিমান:
- রাফায়েল (পারমাণবিক অস্ত্র বহনে সক্ষম)
- মিরাজ ২০০০ (৫১টি বিদ্যমান)
- পরিবহন বিমান: ২৭০টি
- প্রশিক্ষণ বিমান: ৩৫১টি
- রিফুয়েলিং ট্যাঙ্কার: ৬টি
- হেলিকপ্টার: ৯৭৯টি (৮০টি আক্রমণাত্মক)
পাকিস্তানের:
- প্রশিক্ষণ বিমান: ৫৬৫টি
- পরিবহন বিমান: ৬৪টি
- রিফুয়েলিং ট্যাঙ্কার: ৪টি
- হেলিকপ্টার: ৪৩০টি (৫৭টি আক্রমণাত্মক)
পারমাণবিক শক্তি
SIPRI-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, উভয় দেশের কাছে প্রায় সমানসংখ্যক পারমাণবিক ওয়ারহেড রয়েছে:
- ভারত: ১৭২টি (আনুমানিক)
- পাকিস্তান: ১৭০টি (আনুমানিক)
ভারত দূরপাল্লার অস্ত্রে জোর দিচ্ছে, যেখানে পাকিস্তান মনোযোগ দিচ্ছে ভারতের সাথে প্রতিযোগিতায়।
চীন, উভয় দেশের প্রতিবেশী ও বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম পারমাণবিক শক্তি, ২০২৪ সালে তার ওয়ারহেড সংখ্যা ৪১০ থেকে ৫০০-তে উন্নীত করেছে।
ক্ষেপণাস্ত্র প্রযুক্তি
পাকিস্তানের ক্ষেপণাস্ত্র:
- স্বল্প পাল্লার: হাতাফ-১, নাসের, আব্দালি, গজনবি, রা’দ, বাবর, শাহীন-১
- মধ্যম পাল্লার: গৌরি-১, গৌরি-২, আবাবিল, শাহীন-২, শাহীন-৩
ভারতের ক্ষেপণাস্ত্র:
- পৃথ্বী সিরিজ (২৫০-৬০০ কি.মি)
- অগ্নি সিরিজ (১২০০-৮০০০ কি.মি)
- নির্ভয়া ও ব্রহ্মোস (সুপারসোনিক ক্ৰুজ ক্ষেপণাস্ত্র)
- ধনুষ (জাহাজ থেকে উৎক্ষেপণযোগ্য)
- কে-১৫ (সাবমেরিন থেকে উৎক্ষেপণযোগ্য)
- হাইপারসোনিক ক্ষেপণাস্ত্র (১৫০০ কি.মি এর বেশি রেঞ্জ)
ড্রোন প্রযুক্তি
উভয় দেশই ড্রোন ব্যবহার ও উন্নয়নে গুরুত্ব দিচ্ছে।
ভারতের হাতে রয়েছে:
- প্রায় ৫ হাজার ড্রোনের পরিকল্পনা
- ৩১টি প্রেডেটর ড্রোন (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে)
- লেজার গাইডেড মিসাইলসহ আধুনিক ড্রোন
পাকিস্তানের ড্রোন:
- নিজস্ব তৈরি শাহপার-১, ২, ৩
- বুরাক, উকাব
- তুরস্ক, চীন, জার্মানি ও ইতালি থেকে আমদানিকৃত ড্রোন
চীনের উদ্বেগ ও বিশ্লেষকদের সতর্কতা
চীন পাকিস্তানে ভারতের সাম্প্রতিক হামলায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল এস.এইচ. পানাগ এক প্রবন্ধে সতর্ক করেছেন যে, পাকিস্তান একটি পারমাণবিক দেশ এবং ভারতকে সামরিক পদক্ষেপ নিতে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।