জুমবাংলা ডেস্ক : বঙ্গবন্ধু বললেই আজ বাংলাদেশের মানুষ শেখ মুজিবুর রহমানকে মনে করেন। তবে ইতিহাস ঘেঁটে দেখা যায়, এই উপাধির প্রথম প্রাপক ছিলেন একজন ধর্মপ্রচারক, সমাজ সংস্কারক ও লেখক—মুন্সী মোহাম্মদ মেহেরুল্লাহ।
১৯৬৯ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় ছাত্রলীগের জনসভায় নেতা তোফায়েল আহমেদ শেখ মুজিবুর রহমানকে “বঙ্গবন্ধু” উপাধিতে ভূষিত করেন। অথচ এই উপাধি আরও আগে, ১৮৯১ সালে লেখক মির্জা ইউসুফ আলী তার বই ‘দুগ্ধ-সরোবর’-এর ভূমিকায় মুন্সী মেহেরুল্লাহকে “বঙ্গবন্ধু” হিসেবে আখ্যায়িত করেন।
এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন ড. মো. জহুরুল ইসলাম, যিনি ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মুন্সী মেহেরুল্লাহর জীবন ও অবদান নিয়ে পিএইচডি করেছেন। তার অভিসন্দর্ভে উল্লেখ রয়েছে, সমাজ ও মানুষের কল্যাণে মেহেরুল্লাহর প্রচেষ্টা তাকে এই খেতাবের উপযুক্ত করেছিল।
ড. জহুরুল জানান, সেমিনারে পিএইচডি কমিটির সভাপতির প্রশ্নের জবাবে তিনি রেফারেন্সসহ ব্যাখ্যা দিয়ে এই দাবির স্বপক্ষে শতাধিক শিক্ষার্থী ও স্কলারকে সন্তুষ্ট করেন।
ঢাকার ‘প্রেক্ষণ সাহিত্য সংগঠন’ ১৯৯৬ সালে ‘মুন্সী মেহেরুল্লাহ স্মরণ সংখ্যা’ প্রকাশ করে। এতে কবি মতিউর রহমান মল্লিক, লেখক মুহম্মদ আবু তালিব, গবেষক নাসির হেলালসহ অনেকেই উল্লেখ করেছেন—মেহেরুল্লাহ-ই বাংলার প্রথম বঙ্গবন্ধু।
নাসির হেলাল বলেন, “এই অঞ্চলে মেহেরুল্লাহকেই প্রথম বঙ্গবন্ধু খেতাবে ভূষিত করা হয়, এটি ইতিহাস দ্বারা সমর্থিত।”
১৮৬১ সালের ২৬ ডিসেম্বর যশোর জেলার ঘোপ গ্রামে জন্ম নেওয়া মুন্সী মেহেরুল্লাহ বেড়ে ওঠেন ছাতিয়ানতলায়। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় সীমাবদ্ধ থাকলেও তিনি আরবি, ফারসি ও উর্দু শেখেন। পরবর্তীতে দর্জির দোকান দিয়ে জীবিকা শুরু করলেও ধর্মীয় চিন্তা-চেতনায় ব্যাপকভাবে জড়িত হন।
প্রথমে খ্রিস্টধর্মে আকৃষ্ট হলেও পরে ইসলামে ফিরে আসেন এবং খ্রিস্টান মিশনারিদের বিরুদ্ধে লেখনী ও ধর্মসভা দিয়ে সোচ্চার হন। তার বক্তব্য ও লেখায় স্থানীয় সমাজজীবনে ব্যাপক প্রভাব পড়ে।
অনেকে মনে করেন, বাংলা অঞ্চলে ধর্মসভা বা বর্তমান ওয়াজ মাহফিলের প্রচলন মেহেরুল্লাহই শুরু করেন। তিনি বিভিন্ন স্থানে পাল্টা সভা করে মুসলিমদের ধর্মীয় আত্মপরিচয় রক্ষায় ভূমিকা রাখেন।
মুন্সী মেহেরুল্লাহ লিখেছেন অনেক বই। তার উল্লেখযোগ্য রচনার মধ্যে রয়েছে:
খৃষ্টীয় ধর্মের অসারতা (১৮৮৬)
মেহেরুল ইসলাম (১৮৯০)
খৃষ্টান মুসলমান তর্ক-যুদ্ধ
হিন্দুধর্ম রহস্য (১৮৯৬)
দলিলোল ইসলাম (১৯০৯)
ইসলামী বক্তৃতামালা (১৯০৮)
নবরত্নমালা বা বাংলা গজল (১৯১১)
যশোরে তার নামে রয়েছে ‘মুনশী মেহেরুল্লাহ ময়দান’, একটি সড়ক, একটি রেলস্টেশন এবং ‘মুন্সী মেহেরুল্লাহ অ্যাকাডেমি’ নামে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এমনকি যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি আবাসিক হলেও তার নামকরণ করা হয়েছে।
তার জীবন ও কাজ নিয়ে যেসব গুণীজন গবেষণা করেছেন বা লিখেছেন তাদের মধ্যে রয়েছেন: ফররুখ আহমদ, ইসমাইল হোসেন সিরাজী, আল মাহমুদ, আনিসুজ্জামান, শাহেদ আলী, শেখ হবিবর রহমান, ড. আবুল আহসান চৌধুরী, এবং আরও অনেকে।
নাসির হেলাল সম্পাদিত এক গ্রন্থে উল্লেখ আছে, বিভিন্ন স্থানে মেহেরুল্লাহর নামের বানানে ভিন্নতা দেখা গেলেও তার স্বাক্ষরে “মহম্মদ মেহেরুল্লাহ” লেখা পাওয়া গেছে। তার প্রথম পুত্র মনসুর আহমদের স্বহস্তলিখিত বংশতালিকাতেও একই বানান রয়েছে।
একটি ধর্মসভা থেকে ফেরার পর নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ১৯০৭ সালের ৮ জুন ৪৬ বছর বয়সে মুন্সী মেহেরুল্লাহ মৃত্যুবরণ করেন। সূত্র : শেয়ারনিউজ
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।