বিনোদন ডেস্ক : খবরটি ছড়িয়ে পড়েছে। ‘আয়নাঘর’ নামটি নিয়ে কাড়াকাড়ি শুরু হয়ে গেছে। এই নামে ঢালিউডে বানানো হবে সিনেমা। পরিচালক সমিতির খাতায় এরই মধ্যে নাম লিখিয়েছেন তিন তিনজন নির্মাতা। আগ্রহ প্রকাশ করেছেন আরও অনেকে। কিন্তু পর্দার ওই আয়নাঘরে নির্যাতিত হবেন কারা?
কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা প্রথম ফাঁস করে বাংলাদেশের গোপন বন্দীশালা আয়নাঘরের কথা। দীর্ঘদিন সেখানে রেখে নির্মমভাবে নির্যাতন করা হয়েছে বহু বন্দীকে। আল জাজিরার তথ্যচিত্র ‘অল দ্য প্রাইম মিনিস্টারস মেন’ থেকে সেই নির্মমতার কাহিনি আজ ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বে। এবারে সেই ঘটনা নিয়ে চলচ্চিত্র নির্মাণে উদ্যোগী হচ্ছেন ঢাকার তিন নির্মাতা।
তিন নির্মাতার মধ্যে বদিউল আলম খোকন বানাবেন ‘ভয়ংকর আয়নাঘর’, জয় সরকারের ছবির নাম ‘আয়নাঘর’ এবং জাঁ-নেসার ওসমানের ছবির নাম ‘অন্ধকারের আয়নাঘর’। নিবন্ধিত নামগুলোয় ‘আয়নাঘর’ শব্দটি থাকলেও কথা বলে জানা গেছে, তিন নির্মাতার গল্পে রয়েছে ভিন্নতা। এমনকি শেষ পর্যন্ত বদলে যেতে পারে কোনো কোনো সিনেমার নামও।
পর্দার আয়নাঘরে কাদের নেওয়া হবে? অর্থাৎ নির্যাতনের শিকার হওয়ার অভিনয় করবেন কারা, নির্মাতাদের কাছে জানতে চেয়েছিল এই প্রতিবেদক। জবাবে চমৎকার সব গল্পের ধারণা নিয়ে কথা বলেছেন তিন নির্মাতা। তাদের কারও গল্পের সঙ্গে কারও গল্পের মিল পাওয়া যায়নি। তবে প্রত্যেকের লক্ষ্য এক – মানুষের চোখের সামনে গোপন ওই নির্যাতনশালাকে জীবন্ত করে তোলা।
কতটা ভয়ংকর বদিউল আলম খোকনের আয়নাঘর
শাকিব খানকে নিয়ে ‘প্রিয়া আমার প্রিয়া’, ‘নাম্বার ওয়ান শাকিব খান’, ‘মাই নেম ইজ খান’ ছবিগুলো বানিয়েছেন খোকন। ঢালিউডে বাণিজ্যিক ধারার সিনেমার সফল এই নির্মাতা এতটাই জনপ্রিয় ছিলেন যে, বিজ্ঞাপনে তার নাম থাকলে মানুষ গিয়ে ভিড় করতেন প্রেক্ষাগৃহে। সেই নির্মাতা কি এই আয়নাঘরে নেবেন শাকিবকে? জানতে চাইলে খোকন বলেন, ‘এই মুহূর্তে সেটা বলা মুশকিল। শাকিবকেও আয়নাঘরে নিতে পারি। গল্পের প্রয়োজনে যে কোনো অভিনেতাকে নির্বাচন করতে পারি। আপাতত গল্প লেখা চলছে। সেখানে রাখা হয়েছে অনেকগুলো চরিত্র। গল্পটা লেখা শেষ হলে নিশ্চিত করব যে কাকে কাকে ছবিতে রাখা হবে, বা আপনার কথা মতো, কাকে কাকে আয়নাঘরে নেওয়া হবে (হাসতে হাসতে)।’
এই নির্মাতা জানান, আপাতত দুটি চরিত্রের জন্য মিশা সওদাগর ও শিবা শানুকে তিনি মাথায় রেখেছেন। এ দুই অভিনেতাকে দিয়ে চরিত্র দুটি করানো হবে। তিনি বলেন, ‘কিন্তু এরা কোন ভূমিকায় অভিনয় করবেন, সেটা এখন বলা যাবে না। সেটা দর্শক সরাসরি পর্দায় দেখবেন।’
এ ধরনের সিনেমা নির্মাণ ঝুঁকিপূর্ণ কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমার ছবিতে আমি মানুষের কথা বলতে চেয়েছি, সেটাই বলে যাচ্ছি। সেই চিন্তা থেকেই গল্প লেখা হচ্ছে। গত পরশু নয়, আরও অনেক দিন আগে থেকে “আয়নাঘর” নিয়ে সিনেমা বানানোর কথা আমি ভেবে রেখেছিলাম। সেই মোতাবেক গবেষণা চলছিল। এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি যেন না হয়, সে জন্যই সিনেমার মাধ্যমে মানুষকে সচেতন করতে চাই। এখানে কোনো ঝুঁকি বোধ করছি না।’
জয় সরকারের আয়নাঘরে
‘ইন্দুবালা’ দিয়ে ঢালিউডে খাতা খুলেছিলেন নির্মাতা জয় সরকার। দেশের পরিস্থিতির কারণে রীতিমতো কোনঠাসা ছিলেন এই নির্মাতা। নিজেকে গুছিয়ে নিয়ে অবশেষে আবারও বড়পর্দার জন্য প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছেন তিনি।
জয় সরকার বলেন, ‘অনেক বাঁধার কারণে এতদিন সিনেমা তৈরি করতে পারিনি। কিন্তু নাটক তৈরি করে গেছি। সেগুলোয় অনেক সামাজিক মেসেজ ছিল এবং নাটকগুলো ব্যবসাসফলও হয়েছিল। আমি সবসময় আমার কাজে মেসেজ রাখতে চাই। সেই ভাবনা থেকে আয়নাঘর তৈরি করতে যাচ্ছি।’ এই নির্মাতা আরও বলেন, ‘এখন রাজনৈতিক পট পরিবর্তন হয়েছে। আশা করছি, স্বাধীনভাবে সিনেমা নির্মাণ করতে পারবো। সেই আশায় আমি নির্মাণের ঘোষণা দিয়েছি।’
কথায় কথায় জানতে চাওয়া হয়, কে কে থাকছেন তার আয়নাঘরে? জয় সরকার বলেন, ‘এখনো চিত্রনাট্য হাতে পাইনি। সামনের মাসে পেয়ে যাব। এরপর বলতে পারবো। তবে সিনেমা বানানোর ভাবনা আসতেই আমার মাথায় এসেছিল কেয়া পায়েলের কথা। আজমেরি হক বাঁধনকেও ভেবেছিলাম। এখন আবার ভাবছি তানসিয়া ফারিণকে। এ ছাড়া শতাব্দী ওয়াদুদ ও শ্যামল মাওলাকে নিয়েও ভেবেছি। তবে কাস্টিং এখনও চূড়ান্ত নয়। আবার প্রস্তাব দিলে তারা রাজি হয়ে যাবেন, সেটাও বলা যায় না।’
এই নির্মাতা জানান, বেশ কয়েকটি চরিত্র তার ভাবনায় রয়েছে। সেসব চরিত্রের জন্য বেশ কয়েকজন অভিনয়শিল্পীর সঙ্গে কথাও বলেছেন তিনি। তাদের প্রতিক্রিয়া জানিয়ে নির্মাতা বলেন, ‘ওই শিল্পীদের ভেতর এখনও ভয় কাজ করছে। অনেকেই কাজটা করতে রাজি হচ্ছেন না।’
যেমন হবে জাঁ-নেসার ওসমানের আয়নাঘর
তিন নির্মাতার মধ্যে সবচেয়ে ব্যতিক্রম হবে জাঁ-নেসার ওসমানের আয়নাঘর। সেখানে কোনো চরিত্র নয়, বরং ওই নির্যাতনকক্ষগুলোই হবে ছবির মূল চরিত্র।
এ প্রসঙ্গে নির্মাতা বলেন, ‘আমার ছবিটি হবে একটি তথ্যচিত্র। সেখানে একজন নির্যাতিত ব্যক্তির বর্ণনায় দর্শক আয়নাঘর বিষয়টি দেখবেন।’ কবে নাগাদ ছবির কাজ শুরু হতে পারে? জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘শিগগিরই প্রযোজক ফিরবেন মালয়েশিয়া থেকে। তারপর আলোচনা, তারপর গিয়ে শুটিং।’ ছবির ঘরানা প্রসঙ্গে ধারণা দিতে গিয়ে এই নির্মাতা বলেন, ‘বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন আহমেদের বয়ানে দর্শক সিনেমাটি দেখবেন। তাদের মনে হবে, সত্য ঘটনা দেখছেন।’
‘অল দ্য প্রাইম মিনিস্টারস মেন’ প্রকাশের পর থেকে আয়নাঘর নিয়ে সহজে কেউ মুখ খোলেনি। তবে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মাধ্যমে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ওই গোপন নির্যাতনশালা নিয়ে সরব হয়ে উঠেছে মানুষ। এবার ওই নির্যাতনশালার ধারণা পর্দায় দেখবেন দর্শকেরা। সূত্র : জাগো নিউজ
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।