মাওলানা নোমান বিল্লাহ : বিয়ে করার যেমন ধর্মীয় রীতিনীতি রয়েছে, ঠিক তেমনই তালাক, বিচ্ছেদ বা পরবর্তী কাজগুলোরও ইসলামের বিধান বা রীতিনীতি রয়েছে। আমাদের সমাজে তালাক হওয়ার পর সন্তান কার কাছে থাকবে কিংবা কে তার ব্যয়ভার বহন করবে এই নিয়ে নানা জটিলতা দেখা দেয়।
এটি নিয়ে সমস্যায় পড়তে হয় পরিবারকে। মামলা কোট-কাচারিতেও দৌড়াতে হয়। বছরের পর বছর অমীমাংসিত থাকে এ সমস্যা। তবে ইসলামের বক্তব্য এ ব্যাপারে স্পষ্ট। তালাকের পর সন্তান কার কাছে থাকবে, তার লালন-পালনের ব্যয়ভার কে বহন করবে। এ বিষয়ে সুস্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে ইসলামে।
তালাকের পর সন্তান লালনপালন কার অধিকার?
জন্মগতভাবে সন্তান বাবা-মা উভয়ের। কোনও একজনের মাধ্যমে সন্তান দুনিয়াতে আসেনি। বংশগত দিক দিয়ে সন্তান পিতার বলে গণ্য হয়ে থাকে। তবে সন্তানের প্রয়োজন ও সুবিধা অনুযায়ী তার দায়িত্বভার মা-বাবা উভয়ের ওপরই অর্পিত। সন্তান দুনিয়াতে আসার পেছনে মায়ের অবদান যেমন অস্বীকার করা যায় না, ঠিক তেমনই বাবারও অস্বীকার করা যায় না। কোনও কারণে তাদের বিচ্ছেদ হয়ে গেলে তখন সন্তানের লালন-পালনবিষয়ক জটিলতা সৃষ্টি হয়। এ ক্ষেত্রে শরিয়তের দিকনির্দেশনা হলো শিশুসন্তানের লালন-পালনের অধিকার মায়ের। অন্তত সাত বছর পর্যন্ত সে মায়ের কাছে লালিতপালিত হবে। এরপর বাবার কাছে থাকবে।
মুসলিম পারিবারিক আইন অনুযায়ী, বাবা অপ্রাপ্তবয়স্ক সন্তানের আইনত অভিভাবক। মা হচ্ছেন সন্তানের তত্ত্বাবধায়ক বা জিম্মাদার। নাবালক সন্তানের কল্যাণের বিষয়টি চিন্তা করে দেশে প্রচলিত মুসলিম আইন অনুযায়ী, মাকে নির্দিষ্ট বয়স পর্যন্ত সন্তানের জিম্মাদারির অধিকার দেওয়া হয়েছে। ছেলেশিশুকে সাত বছর ও মেয়েশিশুকে তার বয়ঃসন্ধিকাল পর্যন্ত মা জিম্মায় রাখার অধিকারী। তবে নাবালক সন্তান যারই তত্ত্বাবধানে থাকুক না কেন, সন্তানের খোঁজখবর নেওয়া, দেখাশোনা ও ভরণপোষণের দায়িত্ব কিন্তু অভিভাবক হিসেবে বাবার।
সন্তানের ভরণপোষণ কে দিবে?
ইসলামি ফেকাহগ্রন্থ রাদ্দুল মুহতার যা ফতোয়ায়ে শামি নামে বিখ্যাত এই কিতাবের ৫ম খণ্ডের ২৫৩ পৃষ্ঠায় আছে, শরিয়তের বিধান হচ্ছে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বিবাহ বিচ্ছেদ হলে ছেলে সাত বছর এবং মেয়ের বয়স নয় বছর পর্যন্ত সন্তান তার মায়ের কাছে থাকবে। কিন্তু তার ভরণ পোষণের দায়িত্ব পিতার ওপর।
ছেলের বয়স সাত বছরের পর আর কন্যার বয়স নয় বছরের পর সন্তানের দায়িত্ব পিতার ওপর। সুতরাং উক্ত মাসালায় শরিয়তের বিধান হচ্ছে ছেলে তার পিতার কাছে থাকবে ছেলের ভরণ পোষণের দায়িত্বও পিতাই বহন করবে। স্ত্রী বা তার পক্ষের লোকদের উচিত নয় ছেলেকে তাদের কাছে আটকে রাখা। বরং ছেলেকে পিতার কাছে দিয়ে দেয়াই শরিয়তের বিধান। আবার মাকে দেখতে না দেয়াও শরিয়তের পরিপন্থি। (ফতোয়ায়ে আলমগিরি ১/৫৪১-৫৪২)
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।