আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ইরানের পক্ষে ড্র। এভাবেই ইসরাইলের ভূখণ্ডে ইরানের প্রথম হামলার বর্ণনা দিয়েছেন কিছু বিশ্লেষক। গত শনিবার রাতে তেহরান ইসরাইলের দিকে ৩০০টিরও বেশি ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে।
ইরানি সেনাবাহিনী ঘোষণা দেয়, দামেস্কে ইরানি কনস্যুলেটে হামলার প্রতিক্রিয়া হিসাবে ইরান এ বোমা হামলা চালিয়েছে এবং এর মাধ্যমে তারা নিজেদের সমস্ত উদ্দেশ্য সফল করেছে।
এর আগে গত ১ এপ্রিল সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কে ইরানের কনস্যুলেটে যে বিমান হামলা হয়েছে, সেটি ইসরাইল চালিয়েছে বলে দাবি করে ইরান। এর কঠোর জবাব দেওয়া হবে বলে হুমকি দিয়েছিল তারা। ওই বিমান হামলায় ইরানের বিপ্লবী গার্ডের সাত সদস্য এবং ছয় সিরীয় নাগরিক নিহত হন। তবে কনস্যুলেটে হামলা চালানোর কথা স্বীকার করেনি ইসরাইল। তবে এর পেছনে তাদের হাত রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ইরানের গবেষক ও লন্ডনভিত্তিক সেন্টার ফর আরব-ইরানিয়ান স্টাডিজের পরিচালক আলী নুরি জাদেহের মতে, এ হামলার মাধ্যমে ইরান কোনো পয়েন্ট স্কোর করেনি।
তিনি বলেছেন, বরং এটি ইরানের শাসনব্যবস্থার দুর্বলতা প্রকাশ করেছে। কারণ তারা ইসরাইলের ভূখণ্ডে কোনো লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করতে পারেনি। এটি ইরানের কিছু মানুষের মধ্যে উপহাসের জন্ম দিয়েছে।
জাদেহ বিশ্বাস করেন যে, ইরান যদি ইসরাইলে সঙ্গে তাদের কথিত সাইকোলজিক্যাল ওয়ারফেয়ার বা মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধ অব্যাহত রাখত, তবে এর মাধ্যমে তারা আরও অনেক কিছু অর্জন করতে পারত।
অন্যদিকে তেলআবিব ইউনিভার্সিটির মোশে দায়ান সেন্টারের মিডল ইস্ট স্টাডিজ গবেষক ড. এরিক রুন্ডটস্কি বলেছেন, ইসরাইল রাষ্ট্রীয় সতর্কতা বাড়ানোর ঘোষণা দেওয়ার মাধ্যমে পরাজিত হয়েছে।
তিনি বলেন, এটি ইসরাইলিদের মধ্যে উদ্বেগকে উসকে দিয়েছে এবং অনেকেই এ ধরনের হামলার পুনরাবৃত্তি হওয়ার আশঙ্কা করছে।
জাদেহ বলেছেন, ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এখন নিজেদের আরও বেশি শক্তিশালী মনে করছেন।
শনিবারের আগ পর্যন্ত ইসরাইল ব্যাপক সমালোচনার মুখে থাকলেও ইরানের এ হামলা যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যান্য পশ্চিমা দেশের সঙ্গে ইসরাইলের শক্তিশালী সম্পর্ক পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে সাহায্য করেছে।
ইসরাইলি গবেষক বলছেন, হামলা থেকে ইসরাইলিদের কিছু লাভ হতে পারে, কিন্তু তারা সেটি অন্য উপায়ে হারিয়েছে।
তার ধারণা, এ হামলার মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্যের শক্তিকে চিনতে ইসরাইলের ব্যর্থতা সেই সঙ্গে ইরানকে নিজেদের সীমানায় আঘাত করা থেকে বিরত রাখতে ইসরাইলের ব্যর্থতার বিষয়টিকে স্পষ্ট করেছে।
ইসরাইলি গবেষক এরিক রুন্ডটস্কিও মনে করেন ইরানের হামলা ইসরাইলের জন্য লাভজনক হয়েছে।
তিনি বলেন, এটি রাজনৈতিকভাবে একটি টার্নিং পয়েন্ট হিসাবে কাজ করতে পারে। কারণ গত কয়েক মাসের মধ্যে এই প্রথম ইসরাইল পশ্চিমা সমর্থন উপভোগ করছে।
তিনি বলেন, সম্পর্কের ক্ষেত্রে এতদিন নজিরবিহীন উত্তেজনার পর ইসরাইল এই দেশগুলোর সঙ্গে বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ সাহচর্যে ফিরে আসতে পারে।
বিপরীতে, ইরানি গবেষক আলী নুরি জাদেহ বিশ্বাস করেন তেহরান রাজনৈতিকভাবে সেই সঙ্গে অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক দুইভাবেই হেরেছে।
তিনি বলেন, ইরান প্রতিবেশী দেশগুলোর সমর্থন হারিয়েছে এবং তাদের পক্ষে কোনো দেশের সমর্থন ছিল না।
তিনি উল্লেখ করেছেন যে কিছু মহল থেকে ইরানকে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সরাসরি যুদ্ধে টেনে আনার চেষ্টা চলছে।
দুই গবেষক উভয় দেশের অভ্যন্তরীণ চাপ স্বীকার করেন।
লেবাননের অবসরপ্রাপ্ত জেনারেল হিশাম জাবের- একজন সামরিক ও কৌশলগত বিশেষজ্ঞ এবং বৈরুতে মিডল ইস্ট সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের পরিচালক- তিনি বিবিসি নিউজ অ্যারাবিককে বলেছেন, এই হামলার বিষয়ে সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হলো এটি আশ্চর্যজনক ছিল না।
তিনি বলেন, এর কারণ দুই সপ্তাহের “মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধ” পরিস্থিতিকে বিমান হামলার দিকে পরিচালিত করেছে, যখন ইসরাইল ‘আতঙ্কে’ ছিল।
লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিক্সের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ফাওয়াজ গের্জেস যুক্তি দেন যে ইরানের তুলনায় ইসরাইল এ হামলা থেকে বেশি লাভ করেছে।
তিনি ব্যাখ্যা করেছেন যে ইরানের হামলায় ইসরাইলের উল্লেখযোগ্য ক্ষতি বা হতাহতের ঘটনা ঘটেনি এবং এখন পুরো পশ্চিমা বিশ্ব ইসরাইলকে সমর্থন করছে।
সূত্র: বিবিসি
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।