জুমবাংলা ডেস্ক : কোরবানির ঈদ আসতে না আসতেই চড়া মূল্যে বিক্রি হচ্ছে আদা। সবাই যখন পেঁয়াজের দাম নিয়ে ব্যস্ত, ততদিনে আদার দাম ছুঁয়েছে কেজিপ্রতি ৩০০ টাকা। কোনো কোনো দোকানে ৫০০ টাকা কেজি দরে আদা বিক্রি হচ্ছে এমন খবরও প্রকাশ পেয়েছে গণমাধ্যমে। এ অবস্থায় সবার মনে প্রশ্ন, আদার দাম এত বাড়ল কী কারণে? এখানে কি কুচক্রী মহলের কোনো কারসাজি আছে?
আদা থেকে শুরু করে নানা ধরনের গরম মসলার দাম ও সার্বিক বাজার পরিস্থিতি নিয়ে রোববার (২৮ মে) পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর জানায়, ব্যবসায়ীরা তুলনামূলক কম দামে আদা কিনে ভোক্তাদের কাছে বেশি দামে বিক্রি করছেন।
অধিদফতরের তথ্যমতে, বর্তমানে ব্যবসায়ীরা কেজিপ্রতি ১৩০ থেকে ১৯০ টাকা দরে আদা কিনে ২৮০ থেকে ৩০০ টাকায় বিক্রি করছেন। এতে প্রতি কেজি আদায় একেকজন ব্যবসায়ী ১০০ টাকা, ক্ষেত্রবিশেষ এরচেয়ে বেশি লাভ করছেন।
ভোক্তা অধিকার অধিদফতরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেন, আদা থেকে শুরু করে অন্যান্য মসলার দামের ক্ষেত্রে ঋণপত্র (এলসি) খোলার সময় ব্যবসায়ীদের আন্ডার ইনভয়েসিং করার আভাস পাওয়া যাচ্ছে।
এ ব্যাপারে ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের উপপরিচালক মাহমুদুল হাসান বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে আদার দাম ও বর্তমান এলসি পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ব্যবসায়ীরা প্রতি টন আদা ১ হাজার ৩৫০ ডলার দরে কিনছেন। এর ওপরে শুল্ক থেকে শুরু করে যত ধরনের ডিউটি চার্জ আছে সব যোগ করে প্রতি ডলারের মান ১১১ টাকা ধরলেও আদার কেজি দাঁড়ায় ১৭০ টাকা। এ অবস্থায় ১৭০ টাকার আদা ২৮০ থেকে ৩০০ টাকা হওয়া এক রকমের সমন্বয়হীনতা।
এ সময় আত্মপক্ষ সমর্থন করে কয়েকজন ব্যবসায়ী বলেন, চট্টগ্রাম বন্দরে তাদের পণ্য ১৫ থেকে ২০ দিন পর্যন্ত আটকে রাখা হয়। সেখানকার ভাড়া ও ক্ষয়ক্ষতি হিসাব করলে বাজারে আদা আসার পর লাভ ওঠাতে দাম বাড়ানো ছাড়া আর কোনো বিকল্প থাকে না।
তবে এ ব্যাপারে সফিকুজ্জামান বলেন, কোন খাদ্যপণ্য বা ব্যবসায়ীর ক্ষেত্রে এ ধরনের ঘটনা ঘটছে তা পরিষ্কার করে জানাতে হবে। কারও পণ্য আটকে রাখলে ভোক্তা অধিকার সরাসরি বন্দরের সঙ্গে যোগাযোগ করবে। তবে ভিত্তিহীন অভিযোগ করে দাম বাড়ানোর পাঁয়তারা করলে ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
তিনি বলেন, চীন থেকে বাংলাদেশ কোনো আদা আমদানি করছে না। আদা আসছে মূলত ভারত ও মিয়ানমার থেকে। কিছু আদা থাইল্যান্ড থেকেও আসছে। তাহলে বাজারে চায়না আদার নাম করে যা বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে সেটি ভাওতাবাজি ছাড়া কিছু না।
এ প্রসঙ্গ টেনে কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সদস্য এবং বাজার বিশ্লেষক কাজী আব্দুল হান্নান বলেন, বাজারে চায়না আদার নামে যা বিক্রি হচ্ছে তা আসলে দেশি আদা। পাহাড়ি এলাকা থেকে এসব আদা এনে চায়না আদার নামে বেশি দামে বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা। এ ছাড়া আমদানির পাশাপাশি দেশি আদা বাজারে কোথাও পাওয়া যাচ্ছে না। এসব আদা কোথায় গেল সে ব্যাপারে ভোক্তা অধিকারকে তদারকি করার আহ্বান জানান তিনি।
আদার পাশাপাশি বাজারে এলাচি, দারুচিনি ও জিরা বিক্রি হচ্ছে উচ্চমূল্যে। মূলত কম দামে এসব মসলা কিনে অধিক মুনাফায় বিক্রি করছেন কুচক্রী ব্যবসায়ীরা। প্রতিবছর কোরবানির ঈদের আগে কেন মসলার বাজারে এ ধরনের সমস্যা দেখা দেয় সে ব্যাপারে প্রশ্ন তোলেন ভোক্তা অধিকার অধিদফতরের পরিচালক মনজুর শাহরিয়ার। তিনি বলেন, ঈদের আগ পর্যন্ত বাজারে কঠোর অভিযান চালাবে ভোক্তা অধিকার।
বর্তমানে বাজারে প্রতিকেজি জিরা বিক্রি হচ্ছে ৮০০ থেকে ৯০০ টাকায়। এছাড়া এলাচ আড়াই হাজার থেকে সাড়ে ৩ হাজার টাকা, ধনিয়া ২২০ থেকে ২৫০ টাকা, দারুচিনি ৩১০ থেকে ৩৭০ টাকা ও লবঙ্গ ১ হাজার ৭০০ থেকে ১ হাজার ৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছর আদার উৎপাদন গত বছরের তুলনায় কম হয়েছে। গত বছর ২ লাখ ৪৫ হাজার টন আদা উৎপাদন হলেও এবার তা কমে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৯৩ হাজার টন। দেশে সাড়ে ৩ লাখ টনেরও বেশি আদার চাহিদা থাকায় আমদানির সুযোগকে কাজে লাগিয়ে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী অস্বাভাবিক মুনাফা তুলে নিচ্ছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।