বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ডেস্ক : পানির ফোঁটা গোলাকার হওয়ার কারণ এর পৃষ্ঠটান। পৃষ্ঠটানটা আবার কী?
পৃষ্ঠটান তরলের এক বিশেষ ধর্ম। তরল পদার্থের বিশেষ কোনো আকার নেই। তরলের ভেতরে অণুগুলো অনেকটা মুক্তভাবে থাকে।
তাই যখন যে পাত্রে রাখা হয়, সেই পাত্রের আকার ধারণ করে। এর মানে, কোনো পৃষ্ঠতলে যেমন ধরা যাক, একটা প্লেটে বা গাছের পাতার ওপর পানি রাখবেন আপনি, তখন তরলের উচিত গোটা পৃষ্ঠের ওপর পানি ছড়িয়ে পড়া। পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি কোনো বস্তুর ওপর রাখলে গোটা পৃষ্ঠ জুড়েই তা ছড়িয়ে পড়ে। কিন্তু পানি যদি অনেক কম রাখেন, খুব সামান্য, যেটাকে আমরা ফোঁটা বলি, তাহলে কিন্তু গোটা পৃষ্ঠ জুড়ে সেই পানি ছড়িয়ে পড়ে না।
অথচ সাধারণ বিবেচনা বলে তেমনটাই হওয়া উচিত ছিল, কারণ পানির অণুগলো মুক্তভাবে চলাচল করতে পারে। কিন্তু এটা হয় না পৃষ্ঠটানের কারণে।
পৃষ্ঠটানের কারণ হলো, তরলদের অণুগুলোর মধ্যে পারস্পরিক আকর্ষণ। এই আকর্ষণের কারণে তরলের ভেতরে থাকা পরমাণুগুলো চারপাশের অন্য সব অণুদের থেকে টান অনুভব করে।
ডানে-বামে, ওপর-নিচে সব দিক থেকেই টান অনুভব করে। তাই একটা অণুর ওপর নিট আকর্ষণ বল শূন্য হয়।
ব্যাপারটা আরেকটু ব্যাখ্যা করা যেতে পারে। ধরা যাক, একটা অণুর ডান পাশে অণু আছে, বাম পাশে আছে আরেকটা অণু। এর মাঝখানের পরস্পরের বিপরীত দিক থেকে টানছে।
এবং টানের পরিমাণ সমান। তারমানে একটা আরেকটা টানকে খারিজ করে দিচ্ছে। এখন যদি সামনে-পেছনে এমন দুটো অণু থাকে, তাদের টানও পরস্পরকে নাকচ করে দেবে। ওপর নিচের অণুর গুলোর ক্ষেত্রেও একই ব্যাপার ঘটবে। তাই ঠিক মাঝখানের অণুগুলো কোনো টানই অনুভব করবে না।
এখন ধরুন, একটা গ্লাসে অনেকখানি পানি আছে। পানিতে অণুগুলো স্তরে স্তরে সাজানো থাকে। যেসব অণুর চারপাশে সমান অণু থাকে থাকে না। কিন্তু যেসব অণুর চারপাশেই সমান সংখ্যক অণু থাকবে সেসব অণু সবচেয়ে বেশি টান অনুভব করবে না। বিশেষ করে গ্লাসের পানির সব দিক থেকে কেন্দ্রে যে অণুটা থাকবে, সেটার টান একদম শূন্য। কেন্দ্রের পাশের অণুটার ওপর কিছুটা টান দেখা যাবে। কেন্দ্র থেকে যত বাইরের দিকে যাবেন, তত এদের আকর্ষণ মান বাড়তে থাকে। একদম গ্লাসের ওপরের স্তরে যে অণুগুলো আছে, সেগুলোতে টানের মান সবচেয়ে বেশি। এরা ডানে-বামে সব দিক থেকেই কিছু না কিছু টান অনুভব করবে, কিন্তু ওপরের দিকে কোনো অণু নেই বলে সেদিক থেকে কোনো টানই অনুভব করবে না। তাই নিচের দিকে সবচেয়ে বেশি টান অনুভব করবে, যা ওপরের স্তরের অণুদের নিচের দিকে টেনে রাখবে।
গ্লাসের পানির ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি বোঝা যায় ব্যাপারটা। ওপরের দিকে টান থাকে না গ্লাসের ওপরের স্তরের। কিন্তু কিনারের দিকে বাড়তি টান থাকে। কারণ গ্লাসের অণুর টান। গ্লাসের ঘনত্ব বেশি, তাই একটা নির্দিষ্ট জায়গায় অণুর সংখ্যাও বেশি। এ কারণে গ্লাসের ভেতরের দেয়াল ঘেঁষে থাকা পানির অণুগুলো পাশের অণুগুলোর চেয়ে বেশি টান অনুভব করে। এ কারণে ওপরের স্তরের মাঝের অণুগুলো নিচের দিকে ঝুঁকে পড়ে, পানির ওপরের দিকটা অবতল হয়ে ওঠে।
বৃষ্টি বা ট্যাপকল থেকে ধীরে ধীরে পড়া পানিগুলো গোলাকার ফোঁটায় পরিণত হয়। কারণ এসব ফোঁটার ওপর-নিচ, ডান-বামসহ চারপাশে কোনো দেয়াল থাকে না। থাকে শুধু বাতাস। আর বাতাসের ঘনত্ব পানির চেয়ে অনেক কম। তাই অণুর সংখ্যাও বাতাসে কম। এ কারণে পানির ফোঁটায় থাকা অণুগুলো শুধু ভেতরের দিকেই টান অনুভব করে। সব দিকের অণুই ঝুঁকে পড়ে ফোঁটার কেন্দ্রের দিকে। তাই ফোঁটাগুলো গোলাকার রূপ নেয়।
সমতলে বা গাছের পাতার ওপর যে পানির ফোঁটা থাকে সেগুলোর চারপাশে কোনো দেয়াল থাকে না। কিন্তু নিচে কঠিন বস্তুর সমতল থাকে। কঠিন বস্তুতে অণুর ঘনত্ব বেশি বলে বাইরের স্তরের অণুগুলোও নিচের দিকে অর্থাৎ সমতলের দিকে টান অনুভব করে। কেন্দ্রের দিকে টান তো থাকেই। তখন পানির ফোঁটা পূর্ণ গোলকার না হয়ে অনেকটা ওপরের দিকে স্ফীত হয়ে উত্তল আকৃতিতে রূপ নেয়।
সূত্র: হাউ ইটস ওয়ার্ক
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।