স্বাস্থ্য ডেস্ক : মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নারীরা ১৯৭০ সালের দিকেও ২১ বছর বয়সে তাদের প্রথম সন্তান জন্ম দিত। বর্তমানে যা কল্পনা করাও কঠিন। এপ্রিলে ফেডারেলে প্রকাশিত এক ডাটায় দেখা যায়, ২০২২ সালে প্রথমবার সন্তান জন্ম দেয়া মায়েদের গড় বয়স ২৭ এর চেয়েও বেশি। প্রতিবছর বয়সের এই মাত্রা বেড়েই চলছে, যা জনসংখ্যায় বিরাট পরিবর্তন ঘটাচ্ছে।
২০ বছর বা এর আশেপাশের বয়সী নারীদের মধ্যে সন্তান জন্মের হার কম হলেও ৪০ বছর বা তার বেশি বয়সী মহিলাদের মধ্যে সন্তান জন্ম দেয়ার হার বেড়েছে। এই প্রবণতাটি শুরু হয় ১৯৬০ সালে জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল আবিষ্কারের পর থেকেই। যার ফলে নারীরা তাদের নিজের শরীরের উপর নিয়ন্ত্রণ আনতে শুরু করে।
পেনসিলভানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রসূতি ও গাইনোকোলজির প্রধান ড. ফ্লোরেনসিয়া পোলাইট বলেন, ‘মার্কিন নাগরিকরা বৃদ্ধ বয়সে সন্তান ধারণের দিকে ঝুঁকছেন। এই প্রথম আমি ৩ জন রোগী পেয়েছি যারা তাদের ৫০ এর দশকে গর্ভবতী হয়েছেন।’
কেন দেরিতে সন্তান নিতে আগ্রহী নারীরা?
কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের মাতৃত্ব এবং প্রজনন বিভাগের ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট অরেলি আথান বলেন, ‘বর্তমানে নারীরা কয়েকটি কারণে সন্তান জন্মদানের ক্ষেত্রে দেরি করছেন। তার মধ্যে প্রধান কারণগুলো হল-
পড়াশুনা শেষের জন্য অপেক্ষা করা;
আর্থিক সচ্ছলতা অর্জনে দেরি হওয়া;
বিয়ের জন্য দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করা;
অনাগত সন্তানের যত্ন নিয়ে উদ্বেগ;
পেশাগত জীবনকে অগ্রাধিকার দেয়া।
আথানের মতে, ‘‘নারীরা খুব বেশি একটি কথাই চিন্তা করছেন, ‘আমার কি এখনই সন্তান নেয়া উচিত?’’
গবেষণায় দেখা গেছে, শুধু নারীই নয়, বর্তমানে পুরুষরাও কম বয়সে সন্তান জন্মদানে অনাগ্রহ দেখাচ্ছেন। চ্যাপেল হিলের নর্থ ক্যারোলিনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফ্যামিলি ডেমোগ্রাফার কারেন গুজ্জো বলেন, ‘একটা বয়স পর্যন্ত তারা সন্তান নিতে অনেক চিন্তা করলেও ৩০ এর পর সবাই অনেক আগ্রহী হয়ে উঠেন এবং একের অধিক সন্তান আশা করেন।’
২০১৮ সালের নিউ ইয়র্ক টাইমসের একটি সমীক্ষায় প্রায় ২৫ শতাংশ উত্তরদাতা জানান, তারা প্রাথমিকভাবে যে সংখ্যক বাচ্চা চেয়েছিলেন আদতে তারা সে সংখ্যক বাচ্চার বাবা-মা হতে পারেননি। বর্তমানে দেরিতে সন্তান নেয়া পেশাগত জীবনে অগ্রগতির লক্ষণ হিসেবে দেখা হয়। অনেক নারীই সন্তানের জন্য অপেক্ষা করা এক ধরনের ক্ষমতায়ন হিসেবে মনে করেন।
অনেক ক্ষেত্রে এর সত্যতাও পাওয়া যায়। কিছু গবেষণায় দেখা যায়, তুলনামূলক বয়স্ক বাবা-মায়ের কাছে জন্ম নেয়া বাচ্চারা ধনী হয় এবং প্রায়শই স্বাস্থ্যবান ও শিক্ষিত হওয়ার সুযোগ পায় এবং অন্যান্য অল্পবয়সী বাবা-মায়ের সন্তানদের তুলনায় ভালো আচরণ করে। অল্প বয়সে মা হওয়া এবং দেরিতে মা হওয়া নারীদের মধ্যে দেখা গেছে- যারা বেশি বয়সে মা হয়েছেন তাদের জীবনে সুখ এবং সমৃদ্ধি বেশি। তবে অনেকে মনে করেন, এটি সামাজিক প্রত্যাশার সাথেও সম্পর্কিত।
অরেলি আথান বলেন, বাবা-মায়েরা এখন বাচ্চা লালন-পালনের প্রক্রিয়া নিয়ে অনেক সচেতন। বর্তমানে বাচ্চা লালন-পালন অনেক ব্যয়বহুল। সেই সাথে দেখভাল করার জন্য অফিস থেকে পর্যাপ্ত ছুটি না পাওয়ায় সবাই একটি ভাল অবসর সময় খুঁজেন; যা নিশ্চিত করতেই অনেকটা সময় চলে যায়।
অনেকে বেশি বয়সে সন্তান নেয়ার বিষয়ে খুব একটা চিন্তাও করেন না। কারণ, এখন অনেক আধুনিক প্রযুক্তি আছে। ফলে বাচ্চা না হওয়ার বিষয়ে ভয় থাকে না।
২০২৩ সালের এক গবেষণায় দেখা যায়, ৪২ শতাংশ মানুষ জানিয়েছেন তারা গত ৫ বছরে আগের থেকে ৩৩ শতাংশ বেশি মানুষকে ডিম ফ্রিজিং এবং ইন ভিট্রো ফার্টিলাইজেশন (IVF) এর মতো পরিষেবা গ্রহণ করতে দেখেছেন। শুধু ২০২১ সালে প্রায় এক লাখ মার্কিন শিশু এই পদ্ধতিগুলো ব্যবহার করে জন্মগ্রহণ করেছে। তবে এই পদ্ধতিগুলো অনেক ব্যয়বহুল। আমেরিকায় একটি একক IVF এর জন্য ১০ হাজার ডলার পর্যন্ত খরচ হতে পারে। মানুষের চাহিদার উপর নির্ভর করে এই পরিষেবাগুলোর সাথে সংযুক্ত কোম্পানিগুলো বহু-বিলিয়ন ডলারের শিল্পে পরিণত হয়েছে।
গুজ্জো বলেন, দেরিতে সন্তান ধারণের ক্ষেত্রে গর্ভকালীন অনেক জটিলতা দেখা দিতে পারে। বাচ্চার জেনেটিক অনেক সমস্যাও দেখা দিতে পারে। তবে চিকিৎসা প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে দম্পতিরা তাদের সুবিধামত সময়ে সন্তান নেয়ার দিকেই বেশি ঝুঁকছেন। কারণ, আমাদের সমাজ ব্যবস্থায় সন্তান জন্ম দেয়াটা একটি মৌলিক বিষয় হিসেবে বিবেচনা করা হয়; যা জীবনে থাকা বাধ্যতামূলক।
সূত্র: টাইম
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।