ধর্ম ডেস্ক : আজওয়া খেজুর বিশ্বের সব মানুষের জন্য বরকতময় ও ফজিলতপূর্ণ একটি ফল। বিশ্বনবী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সর্বপ্রথম নিজ হাতে আজওয়া খেজুরের বীজ রোপন করেছিলেন। এ খেজুরের বীজ রোপন ও জন্মের পেছনে ছিল আশ্চর্যজনক ও বিস্ময়কর এক ঘটনা।
তো চলুন আমরা জেনে নিই সেই আশ্চর্যজনক ও বিস্ময়কর ঘটনা
ইসলাম গ্রহণের আগে হজরত সালমান ফারসি রাদিয়াল্লাহু আনহু ছিলেন একজন ইহুদির অধীনে ক্রীতদাস। তিনি যখন তার কাছ থেকে মুক্তি চাইলেন, তখন ইহুদি তাকে মুক্তি দিতে আপত্তি জানায়। বারবার বলার পর ঐ ইহুদি বাস্তবে অসম্ভব একটি শর্তসহ মোট ২টি শর্ত জুড়ে দেয়। যা স্বাভাবিকভাবে সম্ভব নয়। তার মূল উদ্দেশ্য ছিল হজরত সালমান ফারসি (রা.)-কে মুক্তি দেবে না।
ইহুদির শর্তগুলো
(১) অল্প দিনের মধ্যে ৬০০ দিরহাম দেওয়া।
(২) ৩০টি খেজুর গাছ রোপন এবং তা পরিচর্যা করে অল্প দিনে খেজুর উৎপন্ন করে পাকিয়ে দেওয়া। এ শর্তটি ছিল স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় একেবারেই অসম্ভব।
কঠিন শর্ত দেওয়ার কারণ
ইহুদি জানতো যে, সালমান ফারসি কোনোভাবে ৬০০ দিরহাম সংগ্রহ করতে পারলেও অল্প সময়ে খেজুর গাছ রোপন এবং তা থেকে অল্প সময়ে খেজুর ফলানো কোনোভাবেই সম্ভব নয়। আর তার মুক্তি পাওয়ারও কোনো সম্ভাবনা নেই। কেননা খেজুর রোপন থেকে ফল উৎপন্ন হওয়া অনেক সময়ের ব্যাপার।
বিশ্বনবীর (সা.) দরবারে সালমান ফারসি
কোনো উপায় না দেখে হজরত সালমান ফারসি রাসূলুল্লাহ (সা.) এর দরবারে এসে ইহুদির দেওয়া শর্ত বর্ণনা করেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ৬০০ দিনারের ব্যবস্থা করলেন।
তারপর ইহুদির দেওয়া এক কাঁদি খেজুর চারা রোপন করতে সাহাবি আলি রাদিয়াল্লাহু আনহুকে সঙ্গে নিয়ে গেলেন রাসূলুল্লাহ (সা.)। তিনি দেখলেন খেজুরের বীজগুলো কালো, আগুনে পেড়ানো। ইয়াহুদি এগুলো আগুনে পুড়িয়ে দিয়েছে যাতে তা থেকে চারা না গজায়।
রাসূলুল্লাহ (সা.) এর নিজ হাত বীজ রোপন
রাসূলুল্লাহ (সা.) এ বীজগুলো রোপনের উদ্দেশ্যে আলি (রা.)-কে বললেন গর্ত করার জন্য। রাসূলুল্লাহ (সা.) সে গর্তে বীজ রোপন করলেন। আর সালমান ফারসি (রা.)-কে বললেন বীজ রোপন করা গর্তে পানি দেওয়ার জন্য।
সালমান ফারসি (রা.)-কে রাসূলুল্লাহ (সা.) এর নির্দেশ
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নির্দে দিয়ে সালমান ফারসি (রা.)-কে বললেন যে, বাগানের শেষ প্রান্তে না যাওয়া পর্যন্ত পেছনে ফিরে তাকানো যাবে না। সালমান ফারসি (রা.) পেছনে না তাকিয়ে পানি দিতে দিতে এগিয়ে গেলেন।
রাসূলুল্লাহ (সা.) এর অন্যতম মুজিজা
সালমান ফারসি (রা.) বাগানের শেষ প্রান্তে যাওয়ার পর তিনি পেছনে তাকিয়ে দেখলেন যে প্রতিটি চারা গাছে খেজুরে পরিপূর্ণ। পোড়া খেজুর থেকে গজানো চারা ও খেজুরগুলো পেকে কালো বর্ণ হয়ে গেলো। কারণ এই খেজুরের বীজগুলো ছিলো আগুনে পোড়া কয়লার মতো কালো। তাই এর স্বাদও অনেকটা পোড়া পোড়া গন্ধ। যার নাম আজওয়া।
দুনিয়ার সেরা খেজুর আজওয়া
বিশ্বনবী রাসূলুল্লাহ (সা.) এর নিজ হাতে পোড়া বীজ লাগানো খেজুরই আজওয়া। যা দুনিয়ার সবচেয়ে দামি ও উন্নতমানের সুস্বাদু খেজুর। এ খেজুরের গুণ, বরকত ও ফজিলত বর্ণনা করেছেন স্বয়ং রাসূলুল্লাহ (সা.)। হাদিসে এসেছে
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি প্রতিদিন সকালে কয়েকটি আজওয়া খেজুর খাবে, সেই দিন ও রাত পর্যন্ত কোনো বিষ ও যাদু তার কোনো ক্ষতি করবে না। অন্য বর্ণনায়, ৭টি খেজুর খাওয়ার কথা বলা হয়েছে। (বুখারি)
চিকিৎসা বিজ্ঞানের তথ্য মতে আজওয়ায় খেজুর
‘আমিষ, শর্করা, প্রয়োজনীয় খাদ্য আঁশ ও স্বাস্থ্যসম্মত ফ্যাট। এছাড়া ভিটামিন এ, বি সিক্স, সি এবং কে দ্বারা ভরপুর। ভিটামিন ‘এ’ এর গুরুত্বপূর্ণ উপাদান ‘ক্যারোটিন’ও রয়েছে এতে। ক্যারোটিন চোখের সুস্থতার জন্য অত্যন্ত উপকারী।
আরো রয়েছে স্বাস্থ্যকর উপাদান ফলেট, নিয়াসিন, থিয়ামিন ও রিবোফ্লেভিন।
ইয়া আল্লাহ! বিশ্ববাসিকে ফজিলত ও বরকতময় আজওয়া খেজুর খাওয়ার মাধ্যমে সুস্বাস্থ্যসহ যাবতীয় ক্ষতিকর বিষক্রিয়া থেকে মুক্ত থাকার তাওফিক দান করুন। আমিন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।