বিনোদন ডেস্ক : ‘তুফান পোষ মানে না, পোষ মানায়’, প্রেক্ষাগৃহে শাকিবের মুখের এই সংলাপ শুনে করতালি আর হর্ষধ্বনিতে ফেটে পড়ছে দেশের প্রেক্ষাগৃহভর্তি দর্শক। এই দৃশ্য দেখে অনায়াসেই বলা যায়, দর্শককেও পোষ মানিয়েছিলেন ‘তুফান’রূপী শাকিব খান। শুধু বাংলাদেশের চিত্র নয় এটি। মধ্যপ্রাচ্যের দুবাই, বাহরাইন, কাতারসহ অস্ট্রেলিয়া, আমেরিকা, কানাডা, যুক্তরাজ্য, সিঙ্গাপুরের যেখানেই আছে প্রবাসী বাংলাদেশি—সবখানেই উপচেপড়া ভিড়।
হলিউড-বলিউডের কয়েক শ কোটি টাকা বাজেটের ছবির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে হাউসফুল সবখানেই। ব্যতিক্রম পশ্চিমবঙ্গ। পরিচালক ও প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের দাবি, বাংলাদেশ ও বহির্বিশ্বে এরই মধ্যে ৪২ কোটি টাকা আয় করেছে ছবিটি। বিপরীতে ভারতের পশ্চিমবঙ্গে প্রথম পাঁচ দিনে আয় করেছে মাত্র সাত লাখ রুপি! যেটা সুনামি বইয়ে দেওয়া ‘তুফান’-এর জন্য একেবারেই বেমানান।
অতীতে যৌথ প্রযোজনা ও টালিগঞ্জের স্থানীয় ছবিতে অভিনয় করেছেন শাকিব খান। বক্স অফিসে মোটা দাগে সফল হতে পারেননি ‘মেগাস্টার’। ক্যারিয়ারের বাঁকবদলের এই ছবি নিয়ে আশায় বুক বেঁধেছিলেন অভিনেতা, সেই ‘তুফান’ও হতাশ করল তাঁকে।
তুফানে কেন পোষ মানেনি পশ্চিমবঙ্গ
ঈদের তিন সপ্তাহ পর ৫ জুলাই ভারতের পশ্চিমবঙ্গে মুক্তি পেয়েছে ‘তুফান’।
মুক্তির আগে আগে ঢাকা থেকে উড়ে কলকাতায় গিয়েছিলেন শাকিব খান, রায়হান রাফী, শাহরিয়ার শাকিল। ছবির ‘উরা ধুরা মাইয়া’ মিমি চক্রবর্তী ও এসভিএফের মাহেন্দ্র সনি নিজেদের শহরে জম্পেশ আতিথ্য দিয়েছিলেন ঢাকাই তারকাদের। সংবাদ সম্মেলন ও প্রিমিয়ার শোতে ছবিটি দেখে উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেছিলেন টালিগঞ্জের অতিথিরা।
তবে ‘তুফান’ যে পশ্চিমবঙ্গে মার মার কাট কাট চলবে, সেই আশা সম্ভবত করেননি খোদ শাকিব খান-রায়হান রাফীও। সংবাদ সম্মেলনে শাকিব খান যেমন প্রশ্ন তুললেন, ‘উত্তম কুমারের শহরে কেন বাংলা ছবি দেখে না মানুষ? এটা লজ্জার!’
‘তুফান’ কেন ওপারে চলেনি, তার নানা ব্যাখ্যাই দেওয়া যেতে পারে।
প্রথম কথা, ওপারে ছবির প্রচারণা সেভাবে চালানোই হয়নি। মুক্তির আগে থেকেই এপারের মতো ওপারেও তুফানের দুটি গান ‘লাগে উরাধুরা’ ও ‘দুষ্টু কোকিল’ হিট। এসভিএফের মিউজিক চ্যানেল ‘সংগীত বাংলা’য় টিজার-ট্রেলার-গান দিন-রাত চালালেই প্রচারণা হয় না। ফেসবুক রিলস, টিকটক ইনস্টাগ্রামে ছবির গান নিয়ে উন্মাদনা দেখা গেছে ঠিকই, তাদের হলে আনার আলাদা চেষ্টা করেননি কেউই।
তার ওপর অন্তর্জালে শাকিব খান ও ওপারের জিৎ-দেবভক্তরা ভার্চুয়াল বাকযুদ্ধে নেমেছে। একে অন্যকে ছোট করার জন্য নানা কটুবাক্যে বিদ্ধ করেছে। তার প্রভাব পড়েছে ছবির রিভিউয়ে। মূলধারার গণমাধ্যম ছবিটিকে এন্টারটেইনিং বললেও ইউটিউবার রিভিউয়াররা ‘তুফান’-এর মতো মসলাদার ছবির ছোটখাটো ভুলকেও বড় করে দেখিয়েছেন। একই ধরনের ভুল ‘পাঠান’, ‘জওয়ান’-এও ছিল, কিন্তু ‘তুফান’ যেন মহাভারত অশুদ্ধ করে ফেলেছে! যেটা পছন্দ করেনি এপার-ওপারের ‘শাকিবিয়ান’রা। দ্বন্দ্বের শুরু সেখানেই। পশ্চিমবঙ্গে মসলাদার ছবির বাজারে অনেক দিন ধরেই ভাটা। দক্ষিণ ভারত বা বলিউডের মসলাদার ছবিতে মজে থাকে তারা। অনেক দিন ধরেই জিৎ চেষ্টা করে চলেছেন বাণিজ্যিক ধারার ছবির ঐতিহ্য বাঁচিয়ে রাখতে, তিনিও সেভাবে সফল হচ্ছেন না। অন্য দেশ থেকে গিয়ে শাকিব খান সেই বাজারটা চাঙ্গা করে দেবেন—সেটা আশা করাও বোকামি।
সত্যি বলতে ‘তুফান’ ওয়ানটাইম বিনোদনমূলক ছবি। ‘কেজিএফ’, ‘পাঠান’, ‘জওয়ান’-এর মতোই। সত্যজিৎ রায়-ঋত্বিক ঘটকদের তুলনা এনে যখন রিভিউয়াররা ছবিটিকে খাটো করতে চাইছেন, তখন এটা পরিষ্কার, তাঁদের অন্য কোনো উদ্দেশ্য রয়েছে। মজার বিষয় হলো, যে কয়েকজন দর্শকই ছবিটি দেখে হল থেকে বের হয়েছে, তাদের বক্তব্য এই রিভিউয়ারদের মন্তব্যের পুরো বিপরীত। তারা প্রত্যেকেই ছবিটির দ্বিতীয় কিস্তি দেখার আগ্রহ প্রকাশ করেছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।