লাইফস্টাইল ডেস্ক : এখন বৈশাখ মাস চলছে। এই সময়ে বাংলাদেশে বৃষ্টি ও বজ্রপাত অনেক বেড়ে যায়। এর পেছনে বড় কারণ হলো বাতাসে জলীয় বাষ্পের আধিক্য এবং অতিরিক্ত তাপমাত্রা। এই তাপমাত্রা বৃদ্ধির সঙ্গে সরাসরি সম্পর্ক রয়েছে পরিবেশ দূষণের। দূষণ যত বাড়ে, তাপমাত্রাও বাড়ে—ফলে বজ্রগর্ভ মেঘ (থান্ডারক্লাউড) তৈরির জন্য অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি হয়।
বজ্রপাত কেন হয়:
বাংলাদেশের ভৌগলিক অবস্থান বজ্রপাতের জন্য সহায়ক। দক্ষিণ থেকে আসা গরম ও আর্দ্র বাতাস, আর উত্তরের ঠান্ডা বাতাসের সংঘাতে তৈরি হয় বজ্রগর্ভ মেঘ। এ ধরনের মেঘ পরস্পরের মধ্যে সংঘর্ষে বৈদ্যুতিক চার্জ তৈরি করে, যা পরে বজ্রপাত হিসেবে মাটিতে নেমে আসে। মাটিতে নামার সময় যেটি সবচেয়ে কাছে বা উঁচুতে থাকে, সেটিতেই আঘাত করে।
গবেষণা বলছে, তাপমাত্রা মাত্র ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়লে বজ্রপাতের সম্ভাবনা ৫০ শতাংশ বেড়ে যায়। এছাড়া বড় গাছ কেটে ফেলা, খোলা জায়গায় বা মাঠে কাজ করা, এবং বজ্রপাত সম্পর্কে সচেতনতার অভাবও প্রাণহানির ঝুঁকি বাড়িয়ে তোলে।
বজ্রপাত কখন বেশি হয়:
প্রতি মিনিটে পৃথিবীতে প্রায় ৮০ লাখ বজ্রপাত হয়।
২০১৯–২০ সালের মধ্যে বাংলাদেশে বজ্রপাতের সংখ্যা ছিল ৩১ লাখ ৩৩ হাজারের বেশি।
মে মাসে সবচেয়ে বেশি (২৬ শতাংশ) বজ্রপাত হয়।
মার্চ থেকে মে মাসের মধ্যে প্রায় ৫৯ শতাংশ, এবং জুন থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে ৩৬ শতাংশ বজ্রপাত হয়ে থাকে।
সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ সময় এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত।
বজ্রপাতের সময় করণীয়:
বাড়ির বাইরে থাকলে দ্রুত নিরাপদ স্থানে যান
বাড়ির ভেতরে থাকলে জানালা ও দরজা বন্ধ রাখুন।
বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার বন্ধ রাখুন।
টেলিফোন বা ইন্টারনেটের তার থেকে দূরে থাকুন।
গাড়ির ভেতরে থাকলে গাড়ির জানালা বন্ধ রাখুন। গাড়ির ধাতব অংশ স্পর্শ করবেন না।
খোলা জায়গায় থাকলে নিচু হয়ে বসে পড়ুন (হাত মাটিতে রাখবেন না)।
গাছ, খুঁটি বা ধাতব বস্তু থেকে দূরে থাকুন।
জলাশয় এড়িয়ে চলুন। নদী, পুকুর, হ্রদ বা সমুদ্রের পানিতে থাকলে দ্রুত উঠে পড়ুন।
যা করবেন না
খোলা মাঠ, নদী বা জলাশয়ের পাশে অবস্থান করবেন না।
বাড়ির ভিতরে থাকুন, তবে দরজা বা জানালার পাশে না দাঁড়ানোই ভালো।
গাছের নিচে আশ্রয় নেওয়া বিপজ্জনক।
বসে থাকলে মাটির সঙ্গে সংস্পর্শ কম রাখুন ও দুই হাত দিয়ে কান ঢেকে রাখুন।
বজ্রপাতে অজ্ঞান হলে করণীয়:
বজ্রপাত একটি গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যা, যা সরাসরি হৃৎপিণ্ড ও মস্তিষ্কে আঘাত করে। কেউ যদি বজ্রপাতে অজ্ঞান হয়ে পড়ে, তার শ্বাস বন্ধ হয়ে গেলে সঙ্গে সঙ্গে সিপিআর দেওয়া উচিত এবং দ্রুত হাসপাতালে নেওয়া উচিত।
বজ্রপাত প্রতিরোধ করা সম্ভব না হলেও সচেতনতা ও সতর্কতার মাধ্যমে জীবন বাঁচানো সম্ভব। বিশেষ করে যারা খোলা জায়গায় বা মাঠে কাজ করেন—তাদের এই বিষয়ে সচেতন হওয়া খুব জরুরি।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।