জুমবাংলা ডেস্ক : দেশের বাজারে আবারও স্বর্ণের দাম কমানো হয়েছে। সোমবার (২৯ এপ্রিল) প্রতি ভরিতে ১ হাজার ১৫৫ টাকা কমিয়েছে বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি (বাজুস)।এখন স্থানীয় মার্কেটে সবচেয়ে ভালো মানের ১ ভরি ২২ ক্যারেট স্বর্ণের দর ১ লাখ ১১ হাজার ৪৬১ টাকা। এ নিয়ে টানা ৬ দফা কমানো হলো নিরাপদ আশ্রয় ধাতুটির মূল্য।
তবে একই দিনে আন্তর্জাতিক বাজারে স্বর্ণের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। স্পট মার্কেটে প্রতি আউন্সের দর স্থির হয়েছে ২৩৪২ ডলারে। এ নিয়ে টানা ২১ দিন বিশ্ববাজারে আউন্সপ্রতি মূল্যবান ধাতুটির মূল্য থাকলো ২৩৩৬ ডলারের ওপরে। এখন প্রশ্ন হলো দেশে-বিদেশে স্বর্ণের দর বাড়ে বা কমে কেন?
প্রথমত, যেকোনো ধরনের বৈশ্বিক সংকট স্বর্ণের দামে প্রভাব ফেলে। সেটা হতে পারে মন্দা, যুদ্ধ বা মহামারি। এখন মধ্যপ্রাচ্যে সংকট চলছে। ইসরায়েলের সঙ্গে ফিলিস্তিন ও ইরানের সংঘাত বিদ্যমান। এছাড়া রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বিরাজমান। যে কারণে চকচকে ধাতুটির দর বাড়তি রয়েছে। বিশ্ব ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে মূল্য হ্রাস পাবে।
দ্বিতীয়ত, প্রধান আন্তর্জাতিক মুদ্রা মার্কিন ডলারের মান বাড়লে স্বর্ণের দাম কমে। আবার গ্রিনব্যাকের পতন ঘটলে বুলিয়ন বাজার চাঙা হয়। অর্থাৎ স্বর্ণের মূল্য ঊর্ধ্বমুখী হয়। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভ (ফেড) সুদের হার বাড়ালে ঊজ্জ্বল ধাতুটির দরপতন ঘটে। কারণ, ডলার ও মার্কিন ট্রেজারি ইল্ড ঊর্ধ্বগামী হয়। আবার এই দুটি নিম্নমুখী হলে স্বর্ণের দর বেড়ে যায়।
তৃতীয়ত, বিশ্বজুড়ে অর্থনৈতিক সংকট দেখা দিলে স্বর্ণের চাহিদা বেড়ে যায়। ইউএস ডলারের ওপর আস্থা হারালে হলুদ ধাতুটির দিকে ঝুঁকে পড়ে মানুষ। বিশ্বের বৃহৎ কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো স্বর্ণ কেনা বাড়ালে দাম বেড়ে যায়। বিপরীতে উল্টোটি ঘটে। অর্থাৎ দর হারায়।
চতুর্থত, বিশ্ববাজারে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম বাড়লেও স্বর্ণের দর বাড়ে। আবার উল্টোটাও হয়। স্বর্ণ মজুত রাখলেও মূল্য বৃদ্ধি পায়। কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে নিজের কাছে সঞ্চিত রাখলে দাম ঊর্ধ্বগামী হয়। আর্থিক স্বচ্ছলতায় স্বর্ণের দর বাড়ে। তবে অর্থনৈতিক দুর্দশায় ধাতুটির মূল্য বৃদ্ধি পায়। মূল্যস্ফীতি চলাকালে এই দৃশ্য দেখা যায়।
যেকোনো সংকটে শেয়ারবাজার, বন্ড ও মুদ্রার মূল্যে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। শেয়ারবাজারে হঠাৎ ধস নামতে পারে। কিন্তু স্বর্ণের বেলায় তেমনটা নয়। তখন স্বর্ণ হয়ে ওঠে বিপদের বন্ধু।তাই একে বলা হয়, দুঃসময়ের আশ্রয়স্থল।
তেল ও গ্যাসের মতো স্বর্ণ শেষ হয়ে যায় না। নানা হাত ঘুরে তা শেষ পর্যন্ত পৃথিবীতেই থাকে। তাই স্বর্ণের স্থায়িত্ব আছে।
পঞ্চমত, সাধারণত বাজারে যেকোনো পণ্যের দাম নির্ধারিত হয় সেটির চাহিদা ও জোগানের ভিত্তিতে। স্বর্ণের আবেদন বেশি থাকলে দাম বাড়ে। তাতে বিনিয়োগে আকৃষ্ট হন বিনিয়োগকারীরা। জোগান কম থাকলে দর বাড়ে। মূলত, বিশ্বের স্বর্ণের মজুত নির্দিষ্ট পরিমাণ। ফলে সবসময় ধাতুটির চাহিদা থাকে। কোনো কারণে জোগান বাড়লে দরপতন ঘটে।
ষষ্ঠত, আন্তর্জাতিক বাজারে স্বর্ণের দাম বাড়লে বাংলাদেশেও বাড়ে। বিশ্ববাজারে কমলে দেশেও কমে। আবার টাকার মান কমলে গুরুত্বপূর্ণ ধাতুটির দর বৃদ্ধি পায়। বিপরীতে মূল্য হ্রাস পায়। সাধারণত, দেশের বাজারে যে স্বর্ণ বিক্রি হয় সেটার বেশিরভাগই চোরাচালান হয়ে আসা বলে অভিযোগ করা হয়। এসব সরকার কোনও অর্থ পায় না।
সেক্ষেত্রে স্থানীয় মার্কেটে স্বর্ণের দাম আসলে কিভাবে নির্ধারণ হয় তা নিয়ে অনেকেই প্রশ্ন তোলেন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।