ধর্ম ডেস্ক : রাসূল সা. উম্মতে মুহাম্মাদীকে আমল ইবাদত শিখিয়েছেন। আল্লাহর পক্ষ থেকে তাঁকে যেই নির্দেশ প্রদান করা হতো অথবা তার প্রতি যেই বিধান দেওয়া হতো তিনি তা পুঙ্খানুপুঙ্খুভাবে পালন করতেন এবং মানুষের কাছে পৌঁছে দিতেন। মানুষকে শেখাতে গিয়ে তিনি এমনভাবে আমল করতেন যে, তাকে দেখে মনে হতো এই আমল তাঁর থেকে ভালোভাবে আর কেউ কখনো পালন করেনি এবং করতে পারবে না।
এমন একটি আমল ছিল রাসূল সা.-এর দান ও সদকা। তিনি সবার থেকে বেশি দান-সদকা করতেন এবং সবাইকে দান করতে উৎসাহিত করতেন। মানুষকে দানে উৎসাহিত করতে রাসূল সা. হাদিসে কুদসির এই বাণীটি বর্ণনা করেছেন—
‘আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, ‘হে আদম সন্তান, তুমি দান করতে থাকো, আমিও তোমাকে দান করব।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ১৬৩১)।
রাসূল সা. সাহাবিদের দানে উৎসাহিত করে নিজেও প্রচুর দান করতেন। তাঁর দানের পরিমাণ সম্পর্কে হজরত আনাস (রা.) বলেন, ‘নবী কারীম (সা.)-এর চেয়ে বেশি দানশীল আমি আর কাউকে দেখিনি।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ১৮৪২)।
রাসূল সা.-এর দানের পরিমাণ রমজান মাসে আরও বেড়ে যেতো। তিনি রমজানের রোজা, তারাবি, কোরআন তিলাওয়াতের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে দান করতেন। রমজানে তাঁর দানের পরিমাণকে হাদিসে প্রবাহমান বাতাসের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে। ইবনে আব্বাস রা. সে দানের বিবরণ দিতে গিয়ে বলেন-
كَانَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَجْوَدَ النَّاسِ بِالْخَيْرِ، وَكَانَ أَجْوَدَ مَا يَكُونُ فِي شَهْرِ رَمَضَانَ إِنَّ جِبْرِيلَ عَلَيْهِ السَّلَامُ كَانَ يَلْقَاهُ، فِي كُلِّ سَنَةٍ، فِي رَمَضَانَ حَتَّى يَنْسَلِخَ، فَيَعْرِضُ عَلَيْهِ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الْقُرْآنَ، فَإِذَا لَقِيَهُ جِبْرِيلُ كَانَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَجْوَدَ بِالْخَيْرِ مِنَ الرِّيحِ الْمُرْسَلَةِ.
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন মানুষের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দানশীল। তিনি রমজান মাসে সবচেয়ে বেশি দান করতেন যখন জিবরিল আ.-এর সাথে দেখা হত। জিবরিল আ.-এর সাথে দেখা হলে তিনি হয়ে উঠতেন মুক্ত বাতাসের চেয়েও দানশীল। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৬; সহিহ মুসলিম, হাদিস : ১৮০৩)
ইবনে রজব হাম্বালী রহ. রমজান মাসে দানের অনেক উপকারের কথা উল্লেখ করেছেন। তার মধ্যে একটি হল—
‘রোজা রাখতে গিয়ে আমাদের কোনো না কোনো ত্রুটি-বিচ্যুতি হয়েই যায়। রোজার মাধ্যমে গুনাহ মাফ হতে হলে রোজাও সেসব ভুল-ত্রুটি থেকে মুক্ত হতে হবে, যা থেকে মুক্ত হওয়া দরকার। দান-সদকা সেসব ত্রুটি-বিচ্যুতির ক্ষতিপূরণ করে। এজন্যই রোজার শেষে ফিতরা ওয়াজিব করা হয়েছে- রোজাদারকে অহেতুক ও অশ্লীল কাজের গুনাহ থেকে মুক্ত করার জন্য।’ (লাতাইফুল মাআরিফ, পৃ. ২৩২)
রমজানে প্রতিটি ভালো কাজের নেকি ৭০ গুণ বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে এ মাসে যত বেশি দান-সদকা করা যাবে, তা বহুগুণে বৃদ্ধি পাবে। রাসুল (সা.) তার প্রিয় উম্মতকে রমজান মাসে বেশি পরিমাণে দান করতে উৎসাহিত করতেন। রমজান মাসে একটি নফল আমল ফরজের মর্যাদায় সিক্ত। সে হিসেবে রমজান মাসে আমাদের প্রতিটি দান-সদকাই ফরজ হিসেবে আল্লাহর কাছে গণ্য। দান-সদকার এমন ঈর্ষণীয় ফজিলত অন্যান্য মাসে কখনোই পাওয়া যাবে না। শুধু রমজানেই এ অফার সীমাবদ্ধ।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।