সিপন আহমেদ : বাংলা আর বাংলাদেশ নিয়ে তর্ক শুরু হয়েছে। তর্ক শুরু হয়েছে বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত নিয়ে। আমার সোনার বাংলা’ নামে যে জাতীয় সঙ্গীত আমরা গেয়ে থাকি, তাতে বাংলাদেশ নাই। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার সময় এটা লেখা হয় নাই।
এটা লেখা হয়েছে ১৯০৫ সালের বঙ্গভঙ্গকে কেন্দ্র করে। আমাদের জাতীয় সঙ্গীত যিনি লিখেছেন, তিনি একজন হিন্দু। তিনি হিন্দু ধর্মের দেবি মা’ কালিকে উদ্দেশ্য করে সঙ্গীতটি রচনা করেছেন।
এরকম নানান যুক্তি উপস্থাপন করছেন অনেকে। যারা এধরনের কথা বলছেন তাদের জ্ঞানের পরিধি আমরা খুব সহজেই অনুমান করতে পারি।
আসুন আমরা যুক্তির মাধ্যমে বিষয়টা ব্যাখ্যার চেষ্টা করি।
১. বাংলা বলতে বিশ্ব যাকে চিনে সেটা কিন্তু কলকাতা নয়, সেটা বাংলাদেশ।
২. বাংলা এখন আন্তর্জাতিক ভাষা, সেইটাও বিশ্ব কলকাতার বাংলাকে নয়, বাংলাদেশের বাংলাকে বুঝে।
৩. আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি। চিরদিন তোমার আকাশ, তোমার বাতাস, আমার প্রাণে বাজায় বাঁশি।।
ব্যাখ্যা- আকাশ বাতাস দিয়ে কিন্তু দেবি মা’কে বোঝানো হয়নি বরং কোন দেশকে বোঝানো হয়েছে?
৪. ওমা ফাগুনে তোর আমের বনে ঘ্রাণে পাগল করে, মরি হায় হায় রে
ওমা অঘ্রাণে তো ভরা ক্ষেতে আমি কী দেখেছি মধুর হাসি।।
ব্যাখ্যা- বাংলাদেশ ছয় ঋতুর দেশ। একেক ঋতুতে প্রকৃতি একেক রূপে সাজে। কবি ফাগুনে আমের ঘ্রাণ আর অঘ্রাণ মাসে ফসলের মাঠ যেভাবে শস্যে ভরে যায়, আর তা দেখে কৃষকের মুখে যে হাসি ফুটে সে চিত্রটি তুলে ধরেছেন।
৫. কী শোভা, কী ছায়া গো, কী স্নেহ, কী মায়া গো—কী আঁচল বিছায়েছ বটের মূলে, নদীর কূলে কূলে।
ব্যাখ্যা- আমাদের দেশের গ্রাম বাংলার যে সৌন্দর্য তা যারা উপলব্ধি করতে পারবে, কেবল তারাই বুঝবে। গ্রামের বটের মূলের ছায়ায় নিজেকে জুড়িয়ে নেয়নি এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া কঠিন। আর নদীর কল কল ধ্বনির কথা সবার জানা।
৬. মা, তোর মুখের বাণী আমার কানে লাগে সুধার মতো
ব্যাখ্যা- পৃথিবীতে যত ভাষা আছে তার মধ্যে মায়ের ভাষা, বিশেষ করে আমাদের কাছে বাংলা ভাষার চেয়ে মধুর কিছু কী আছে? কবি কত সুন্দর করে বলেছেন, এই ভাষা সুধার মতো লাগে, মানে মধুর মতো লাগে
৭. মা, তোর বদনখানি মলিন হলে, ও মা, আমি নয়নজলে ভাসি॥
ব্যাখ্যা- বাংলাদেশের খারাপ কিছু হলে যে চোখে জ্বল আসে, বুক ফেটে যায়, এটার সর্বশেষ উদাহরণ ২৪ এর জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থান।
এছাড়াও জাতীয় সঙ্গীতের রয়েছে একটি দীর্ঘ ইতিহাস। বিস্তারিত লিখতে গেলে পাঠকের ধৈর্য্যচ্যুতি ঘটবে। পুরো ইতিহাস জানতে উইকিপিডিয়া অথবা দৈনিক যুগান্তরের ২০২৪ সালের ৪ সেপ্টেম্বরের অনলাইন সংস্করণ “বঙ্গভঙ্গের গান ‘আমার সোনার বাংলা’ যেভাবে জাতীয় সংগীত করা হয়” পড়ে দেখতে পারেন।
লেখক- সিপন আহমেদ, সাংবাদিক
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।