আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ডেটা ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তিতে ভর করে এবার ইভি বা ইলেকট্রিক গাড়ির বাজারে এগোচ্ছে চীনা সংস্থা শিয়াওমি ও হুয়াওয়ে। তিন বছর আগে প্রথম বার ব্যাটারিচালিত স্পোর্টস কার তৈরির প্রস্তাব দিয়েছিল চীনা সংস্থা শিয়াওমি। তিন বছর পর, ২৮ মার্চ তাদের প্রথম ইলেকট্রিক গাড়ি প্রকাশ পেতে চলেছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও জার্মানির গাড়ি প্রস্তুতকারী সংস্থাদের এবার পাল্লা দিতে হবে এই চীনা সংস্থাদের সাথেও। বাজারে আসতে চলা গাড়িটির নাম এসইউ৭, অর্থাৎ ‘স্পিড আল্ট্রা’। মাত্র দুই দশমিক ৭৮ সেকেন্ডেই ১০০ কিলোমিটার প্রতি ঘন্টাবেগে দৌড়তে পারবে গাড়িটি। গাড়িটির সর্বোচ্চ গতি হবে ২৬৫ কিলোমিটার প্রতি ঘন্টা।
একবার চার্জ দিলে এই গাড়ির ব্যাটারি সহজেই পাড়ি দেবে ৮০০ কিলোমিটারের পথ। এসইউ৭ গাড়ির দাম পড়বে ৩৩ হাজার ইউরোর কাছাকাছি (৪০ লাখ বাংলাদেশি টাকা), যা টেসলা ৩ গাড়ির সমান ও পোর্শের টেকান গাড়ির দামের এক তৃতীয়াংশ।
শিয়াওমি প্রধান লেই জুন বলেন, ‘‘আমরা সমঝোতা বা মধ্যম মানের পণ্য চাই না। আমরা এমন একটি স্বপ্নের গাড়ি বানাতে চাই যা টেসলা ও পোর্শেকে টেক্কা দেবে।”
স্মার্টফোন থেকে এবার গাড়ি
অনেক দিন ধরে বিশ্বের সবচেয়ে বড় ইলেকট্রিক গাড়ি প্রস্তুতকারী রাষ্ট্র চীন। যেসব কোম্পানি আগে এমন গাড়ি বানাতো না, তাদের ছাড়াও ইলেকট্রিক পরিবহনের এমন অগ্রগতি অভাবনীয়।
শিয়াওমি মূলত বাসায় ব্যবহৃত ইন্টেলিজেন্ট সিস্টেমস বানিয়ে থাকে, কিন্তু ইউরোপে এই সংস্থাটির খ্যাতি তার স্মার্টফোনের কারণেই। স্মার্টফোনের দুনিয়া থেকে ইলেকট্রিক গাড়ির জগতে পা রেখেছে আরেকটি চীনা সংস্থা, হুয়াওয়ে। ২০২১ থেকে এআইটিও বা আইটো নামে তাদের ইলেকট্রিক এসইউভি গাড়িও বাজারে এসেছে।
কিন্তু এই প্রবণতা শুধু চীনেই দেখা যাচ্ছে, এমনটা নয়। ১৪ বছর আগেই গাড়ি বানানোর চিন্তা করা শুরু করে অ্যাপল। কিন্তু ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে তারা জানায় যে এই পরিকল্পনা তারা আপাতত বন্ধ করছে। এই প্রকল্পে অ্যাপল খরচ করেছিল মোট ১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।
গাড়ি বাজারে চীনের দখল
গাড়ির বাজারে জার্মানির শীর্ষ স্থানকে প্রশ্নের মুখে ফেলছে চীনা কোম্পানিগুলি। কনসালটিং ফার্ম কেপিএমজির সদস্য বের্নড ডিপেনজাইফেন বলেন, ‘‘লিথিয়াম ব্যাটারি সরবরাহ করতে পারার শীর্ষে চীন।”
এই খাতে প্রযুক্তি ও বিক্রি সব মাপকাঠিতেই চীনের অগ্রণী ভূমিকা দেখা গেছে। ডিপেনজাইফেন বলেন, ‘‘এশিয়ার সরবরাহকারীরা এই ক্ষেত্রে এগিয়ে আছেন এখন পর্যন্ত। কাঁচামাল উৎপাদন বা ব্যাটারি উৎপাদনের ক্ষেত্রে জার্মান সরবরাহকারীরা যে তেমন সুযোগ দেখছেন, তা নয়।”
ফেব্রুয়ারি মাসে জেনেভায় আন্তর্জাতিক মটর শোতে আরো স্পষ্ট হয়ে গেলো যে চীনের গাড়ি প্রস্তুতকারীরা মানে কোনো খামতি রাখছেন না। জার্মানি থেকে একটি সংস্থাও ছিল না সেখানে, অথচ চীন থেকে ছিল বেশ কয়েকটি সংস্থা।
নতুন প্রজন্মের গাড়ি আনছে চীন
চীনের গাড়ি শিল্পে গাড়িকে শুধুই নিছক চলাচলের মেশিন হিসাবে দেখা হয় না। তারা নজর দিচ্ছে ভবিষ্যতে প্রয়োজনীয় হবে এমন সব দিকে। যেমন অটোমেশন বা স্বয়ংক্রিয় প্রযুক্তি, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, পরিবেশবান্ধব পরিবহন ও প্রযুক্তিগত উন্নয়নের দিকেও জোর দিচ্ছে এই সব সংস্থা।
এটাই করতে চাইছে শিয়ামি ও হুয়াওয়ের মতো প্রযুক্তি সংস্থাগুলি। শিয়াওমি প্রধান লেই-এর মতে, ‘‘বর্তমানে, গাড়ি কেবলই একটি চলমান ডেটা সেন্টারের মতে। আগামীর অটোমেটিভ শিল্প খাত থেকে উঠে আসবে অত্যাধুনিক সংযুক্ত ব্যবস্থা বা কানেক্টেড স্পেইস।”
গাড়িকে ‘চাকার ওপর বসার ঘর’ নাম দিয়েছে চীনা ইলেকট্রিক গাড়ি প্রস্তুতকারী সংস্থা এনআইও।
তথ্যনির্ভর ভবিষ্যৎ?
‘‘উৎপাদন ও ভবিষ্যৎবান্ধব গাড়ির জন্য আমাদের মন্ত্র হোক ‘স্মার্ট’, বলেন ২০২৪ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত আউডি সংস্থার চীন কার্যালয়ের প্রধান ইয়ুর্গেন উনজার। তিনি আরো বলেন, ‘‘আমাদের সমাজের জন্য, এমনকি জার্মানির জন্যেও, এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ যে আমরা তথ্য ব্যবস্থাপনা বিষয়ে আরেকটু মুক্তভাবে ভাবি।”
এআই-এর ব্যবহার অনস্বীকার্য, স্বীকার করে উনজার বলেন যে নজর দিতে হবে গাড়ির চালকদের তথ্যের ভাণ্ডারের দিকেও।
২০১৮ সালে চীনের সাথে স্বয়ংক্রিয় ও সংযুক্ত ড্রাইভিং বিষয়ে একটি যৌথ বিবৃতিতে স্বাক্ষর করে জার্মান সরকার। এই নথি অনুযায়ী, দুটি রাষ্ট্রই চায় ‘বিদ্বেষমুক্ত, বহুমুখী তথ্য ব্যবস্থাপনা, তথ্য সরবরাহ ও আইটি বিষয়ক মান ও যোগ্যতা নির্ধারণ’ করতে।
কিন্তু তথ্য ভাগ করে নেওয়া এত সহজ নয়। ইইউ কমিশনের মতে, বেশ কিছু ইউরোপিয়ান সংস্থা ইতিমধ্যে তাদের চীনা সহকারী সংস্থা থেকে তথ্য পাওয়া নিয়ে নালিশ জানিয়েছে।
বিদেশি বিনিয়োগকারীদের চীনে ডেটা সেন্টার চালাতে হয়, যা মূল সংস্থার ডেটাবেসের সাথে ক্লাউড প্রযুক্তির মাধ্যমে সংযুক্ত করা থাকে।
ইউরোপের শিল্পের জন্য চীনের তথ্য ও সাইবার নিরাপত্তা বিধিগুলি ‘সমস্যাজনক’, এমনটাই মনে করছে ব্রাসেলস নেতৃত্ব। চীন থেকে তথ্য দেশের বাইরে পাঠাতে দেশটির সাইবার নিরাপত্তা পরিচালনা সংস্থা সিএসি’র অনুমতি নিতে হয়, যারা সব ‘গুরুত্বপূর্ণ তথ্যের যাতায়াতের’ ওপর নজর রাখে।
এই সমস্যা সম্পর্কে জার্মান কর্তৃপক্ষও ওয়াকিবহাল। দেশটির ডিজিটাল প্রযুক্তি মন্ত্রী ফোলকার ভিসিং ২০২৩ সালে চীন-জার্মানি সরকারি আলোচনা চলাকালীন দুই দেশের মধ্যে অবাধ তথ্য চলাচলের ওপর জোর দেন।
বর্তমানে, ইইউ ও চীন এই খাতের জন্য মান নির্ধারণ বিষয়ে আলোচনা করছে। এখনও দুই পক্ষের মধ্যে সীমান্তহীন তথ্যের যাতায়াত নিয়ে কোনো ঐকমত্য আসেনি। সূত্র: ডয়চে ভেলে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।