আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ইসরাইল-ফিলিস্তিন ইস্যুতে সবসময় ইসরাইলের পক্ষে অবস্থান নিয়ে থাকে যুক্তরাষ্ট্র। গত ৫ দশকে এ হার যারপরনাই বেড়েছে। ইসরাইলে হামাসের হামলার কয়েকদিনের মধ্যে দেশটিতে সফরে গিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। দেশটির জন্য এক হাজার কোটি ডলার সহায়তাও ঘোষণা করেছে যুক্তরাষ্ট্র।
হামাস ইসরাইল সংঘাত বন্ধে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে ব্রাজিল কর্তৃক উত্থাপিত একটি যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবেও ভেটো দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এর মাধ্যমে দ্যর্থহীনভাবে ইসরাইলের প্রতি সমর্থন দেখিয়ে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র।
গত মঙ্গলবার গাজায় ইসরাইলের একটি হাসপাতালে নৃশংস হামলার ব্যাপারেও নেতানিয়াহুর সুরে সুর মিলিয়েছেন বাইডেন। তিনি জানিয়েছেন, এ হামলা ইসরাইল নয় বরং তৃতীয় কোন পক্ষ করেছে। আল-জাজিরার বিশ্লেষণ থেকে চলুন জেনে নেই ইসরাইলের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের এই দহরম-মহরম সম্পর্কের কারণগুলো:
ইসরাইলকে সমর্থনের সূত্রপাত
১৯৪৮ সালে ইসরাইল রাষ্ট্র জন্ম হওয়ার পর সবার আগে তাদের স্বীকৃতি দানকারী দেশ যুক্তরাষ্ট্র। তখন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ছিলেন হ্যারি এস ট্রুম্যান। জন্ম থেকেই যুক্তরাষ্ট্র তাদের সমর্থন দিয়ে আসছে।
১৯৬৭ সালের আরব–ইসরাইল যুদ্ধে মিসর, সিরিয়া ও জর্ডানের সেনাবাহিনীকে পরাজিত করে ইসরাইলি বাহিনী। এ যুদ্ধে ইহুদি রাষ্ট্রটি ফিলিস্তিনের বাকি ঐতিহাসিক জায়গা দখল করে নেয়। এর বাইরে সিরিয়া ও মিসরের কিছু অঞ্চল দখল করে। তখন থেকে মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্র দ্ব্যর্থহীনভাবে ইসরাইলি সামরিক বাহিনীর শ্রেষ্ঠত্বের প্রতি সমর্থন জানিয়ে আসছে।
ইসরাইলকে যেভাবে সহায়তা করে যুক্তরাষ্ট্র
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বেশি বিদেশি সহায়তা পেয়ে থাকে ইসরাইল। যদিও দেশটির এত সহায়তার প্রয়োজন হয় না। তবে সব দিক থেকে যুক্তরাষ্ট্র ইসরাইলকে সহায়তা করে থাকে।
২০১৬ সালে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ইসরাইলের সঙ্গে ৩ হাজার ৮০০ কোটি ডলারের প্রতিরক্ষা চুক্তিতে সই করেন। ওই চুক্তির আওতায় পরবর্তী ১০ বছরে মার্কিন সামরিক সহায়তা পাবে ইসরাইল। এর মধ্যে ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষাব্যবস্থা আয়রন ডোমের তহবিলও রয়েছে।
এছাড়া অন্যান্য কূটনৈতিক উপায়েও ইসরাইলকে সহায়তা করে থাকে যুক্তরাষ্ট্র। সম্প্রতি হামাস ইসরাইল সংঘাত বন্ধে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে ব্রাজিল কর্তৃক উত্থাপিত একটি যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে ভেটো দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
গত মঙ্গলবার গাজায় ইসরাইলের একটি হাসপাতালে নৃশংস হামলার ব্যাপারেও নেতানিয়াহুর সুরে সুর মিলিয়েছেন বাইডেন।
ইসরাইলপন্থী রাজনীতির প্রভাব
যুক্তরাষ্ট্রে এমন অনেক সংগঠন রয়েছে, যারা ইসরাইলের প্রতি সমর্থন তৈরিতে কাজ করে থাকে। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় এবং রাজনৈতিকভাবে সবচেয়ে প্রভাবশালী সংগঠন হচ্ছে আমেরিকান ইসরাইল পাবলিক অ্যাফেয়ার্স কমিটি (এআইপিএসি)।
এই সংগঠনের সদস্যদের প্রভাব মার্কিন ইহুদিদের মধ্যে একেবারে তৃণমূলে রয়েছে। তারা যুক্তরাষ্ট্রে মার্কিন ইহুদিদের নানা পরামর্শ দিয়ে থাকে, তাদের কাছ থেকে তহবিল সংগ্রহ করে থাকে। শুধু ইহুদি নয়, কট্টরপন্থী খ্রিষ্টান ইভানজেলিক গির্জা থেকেও তারা তহবিল সংগ্রহ করে।
এআইপিএসি’র প্রভাব কতটা
এআইপিএসি প্রতিবছর যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে বার্ষিক সম্মেলন করে থাকে। এতে প্রায় ২০ হাজার প্রতিনিধি উপস্থিত থাকেন, যাদের মধ্যে মার্কিন রাজনীতির শীর্ষ পর্যায়ে রয়েছেন, এমন ব্যক্তিদেরও দেখা যায়। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই সম্মেলনে অংশ নিয়েছিলেন। ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু নিয়মিত এই সম্মেলনে হাজির হয়ে থাকেন।
ইসরাইলের পক্ষে মার্কিন জনমত
দীর্ঘদিন ধরে মার্কিন জনমত ইসরাইলের পক্ষে এবং ফিলিস্তিনের বিপক্ষে। কারণটা হচ্ছে, ইসরাইলের শক্তিশালী জনসংযোগব্যবস্থা রয়েছে। তবে এটাও ঠিক, ফিলিস্তিনপন্থীদের কিছু সহিংস কর্মকাণ্ড বিশ্ব গণমাধ্যমে শিরোনাম হয়েছে। যেমন ১৯৭২ সালে মিউনিখ অলিম্পিকে ১১ ইসরাইলিকে হত্যা ইসরাইলের প্রতি সহানুভূতি বাড়িয়ে দিয়েছে।
কিন্তু এটা কি সব সময় ইসরাইলিদের পক্ষে যাচ্ছে? নাহ, তা–ও নয়। আগের চেয়ে এখন মার্কিনদের অনেকে ফিলিস্তিনিদের অধিকারের বিষয়ে সহানুভূতিশীল হচ্ছে। গ্যালাপের একটি বার্ষিক জরিপ অন্তত সেটা বলছে।
২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে পরিচালিত জরিপে দেখা গেছে, ২৫ শতাংশ মার্কিন ফিলিস্তিনিদের প্রতি সহানুভূতিশীল। ২০২০ সালের তুলনায় এই হার ২ শতাংশ এবং ২০১৮ সালের তুলনায় ৬ শতাংশ বেশি।
২০২১ সালে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের প্রতি মার্কিন জনগণের সমর্থন ৩০ শতাংশে পৌঁছেছে। ২০২০ সালের তুলনায় তা ৭ শতাংশ বেশি।তবে এখনো মার্কিন জনমত ইসরাইলের প্রতি অনেক বেশি। একই জরিপে দেখা যায়, ৫৮ শতাংশ মার্কিন ইসরাইলের প্রতি সহানুভূতিশীল।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।