সাইফুল ইসলাম, মানিকগঞ্জ : মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলার পাটুরিয়া ফেরিঘাটে বিআইডব্লিউটিএ’র ফোরশোর ভূমিতে চলছে সরকারি জমি দখল করে অবৈধ বালু ব্যবসা ও নদীর তীর কেটে বালু উত্তোলনের মহোৎসব। যমুনা নদীর তীর থেকে ভেকু দিয়ে ও ড্রেজার মেশিন বসিয়ে মাটি-বালি কাটা হচ্ছে। এতে বর্ষা মৌসুমে ফেরিঘাট এলাকা ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে। এছাড়া শিবালয় উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় কৃষি জমি থেকে মাটি কেটে ফসলি জমি ধ্বংস করছে আরেকটি চক্র। রাজনৈতিক পরিচয়ে ও নামধারী সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে অবাধে মাটি কেটে কৃষি জমি উজার করলেও এদের বিরুদ্ধে বরাবরই নিরব ভূমিকা পালন করছে প্রশাসন।
জানা যায়, পাটুরিয়া ফেরিঘাটে এসব অবৈধ বালু ব্যবসার সাথে জড়িত রয়েছে জেলা আওয়ামী লীগের অর্থ বিষয়ক সম্পাদক আব্দুর রহিম খানের ভাতিজা ও শিবালয় উপজেলা শ্রমিক লীগ নেতা মো: জসিম খান, উপজেলা যুবদল নেতা মো: মানিক, উপজেলার নালী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোনতাজ উদ্দিন, মিন্টু মিয়া, মো: তৌহিদুর রহমান খান, মিলন কাজী, আরিফ কাজী ও লুৎফর রহমানসহ স্থানীয় প্রভাবশালীরা। এছাড়া সরকারি জমি দখল করে বালু ব্যবসা ব্যবসা করছেন সিরাজুল ইসলাম, আসাদ, মিলন কাজী, আরিফ কাজী, লুৎফর রহমান, সাইদুর, রাসেল মোল্লা, সুজন, মো. মোয়াজ্জেম হোসেন মুক্তার, আশিক কাজী, মো: রনি খান, মো: মোশাররফ হোসেন মো: মিল্টন মিয়াসহ স্থানীয় প্রভাবশালীরা।
এসব অবৈধ বালু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে গত জানুয়ারী মাসে র্যাব-৪ এর অভিযানিক দল অভিযান চালিয়ে ১০ জনকে জেল-জরিমানা করে। এরপর গত ফেব্রুয়ারী মাসে সরকারি জমি দখল করে বালুর ব্যবসা করার অপরাধে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে পাঁচজনকে জেল-জরিমানা করেছে শিবালয় উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মাহবুবুল ইসলাম। সেসময় সরকারি জমি দখলমুক্ত করতে অবৈধ বালু ব্যবসায়ীদের ১৫ দিন সময় নির্ধারণ করে দেয়া হয়। কিন্ত বেধে দেয়া সময় পেরিয়ে প্রায় দুই মাস অতিবাহিত হলেও এখনো দখলমুক্ত হয়নি সেই সরকারি জমি। এরপর গত মার্চ মাসের শেষে নালী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোনতাজ উদ্দিনসহ তিনজনকে জরিমানা করেন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মাহবুবুল ইসলাম। এসব অবৈধ বালু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে প্রশাসন বার বার অভিযান চালিয়ে জরিমানা করলেও অজানা কারণে বন্ধ হয়নি বালু খেকোদের তাণ্ডব। জরিমানার টাকা উশুল করতে দিন-রাত অবৈধভাবে বালু উত্তোলনে আরো মরিয়া হয়ে উঠেছে চক্রটি।
বার বার অভিযান ও জেলা-জরিমানার পরেও কিভাবে বালু ব্যবসা করছেন জানতে চাইলে বালু ব্যবসায়ীরা জানান, আপনারা নিউজ করলে আমাদের কিছুই হয়না। নিউজ হলে প্রশাসনের পিছনে কিছু বাড়তি টাকা খরচ হয়। দুয়েক দিন হয়তো সাইট বন্ধ থাকে। তারপর আবার আগের মতই ব্যবসা চলে। আমরা প্রশাসন থেকে শুরু করে সবাইকে ম্যানেজ করেই ব্যবসা করি।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) সহকারি পরিচালক ও বন্দর কর্মকর্তা মোহাম্মদ শাহ আলম বলেন, রয়্যালিটি জমা দিয়ে মাটি বা বালি উত্তোলনের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। এখন যারা মাটি বা বালি কাটছে সেটা সম্পূর্ণ অবৈধ। গত কয়েকদিন আমি ব্যক্তিগত কাজে একটু ব্যস্ত ছিলাম। শীঘ্রই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
অপরদিকে, শিবালয়ের বিভিন্ন এলাকায় কৃষি জমি থেকে দিনের পর দিন বিনা বাধায় মাটি কেটে বিক্রি করছে স্থানীয় প্রভাবশালীরা। এদের মধ্যে শিমুলিয়া চকে মাটি কাটছে উপজেলার শিমুলিয়া ইউনিয়নের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান জহির উদ্দিন মানিক, শিমুলিয়া দক্ষিণ পাড়া চকে মাটি কাটছে শাহীন, মিয়া পাড়া চকে মাটি কাটছে কথিত সাংবাদিক টুলু চৌধুরী, উথলী ইউনিয়নের নদীশুকা চকে মটি কাটছে উথলী ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের সদস্য মো: আলাল, মহাদেবপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন চকে মাটি কাটছে যুবলীগ নেতা অনি, শিবালয় ইউনিয়নের নবগ্রাম চকে মাটি কাটছে ইকবাল।
কথিত সাংবাদিক টুলু চৌধুরীর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, মাছের প্রকল্পের জন্য আমার নিজস্ব কাজ করছি। পুকুরের মাটি কাটা হচ্ছে। প্রশাসনের কাছ থেকে অনুমোদন নেয়া হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি জানান, ইউএনও, এসিল্যান্ড, থানার ওসি, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও এমপি মহোদয়কে বলেই কাজ করছি। আপনারা শুধু আমার সাইটটাই দেখলেন? আরো অনেক কাজই তো চলতেছে। সমস্যা নাই, যোগাযোগ রাইখেন, আর ঈদের আগে দেখা কইরেন।
অবৈধভাবে মাটি কাটার বিষয়ে কথা হলে শিমুলিয়া ইউনিয়নের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান জহির উদ্দিন মানিক বলেন, আমি মাটি কাটার সাথে জড়িত নই। কেউ হয়তো আমার নাম ভাঙ্গিয়ে মাটি কাটছে। যারা অবৈধভাবে মাটি কাটছে আমি বরং তাদেরকে বাধা দিচ্ছি।
এ ব্যাপারে শিবালয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো: জাহিদুর রহমান বলেন, যারা নদীতীর থেকে অবৈধভাবে মাটি-বালি কাটছে ও সরকারি জমি দখল করে বালু ব্যবসা করছেন তাদের নামের তালিকা তৈরি করে দেয়ার কথা বলেছি বিআইডব্লিউটিএ’র কর্মকর্তাদের। তালিকা পেলে অবৈধ বালু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ও যারা কৃষি জমি থেকে মাটি কাটছে তাদের বিরুদ্ধে শীঘ্রই আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
একাধিকবার অভিযান পরিচালনা ও জেলা-জরিমানা আদায়ের পরেও অবৈধ বালু ব্যবসা বন্ধ না হওয়া ও অবাধে কৃষি জমি ধ্বংসের বিষয়ে কথা হলে মানিকগঞ্জ জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ আব্দুল লতিফ বলেন, অবৈধ বালু ব্যবসায়ী ও কৃষি জমি ধ্বংসকারীদের বিরুদ্ধে খুব দ্রুত কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।