লাইফস্টাইল ডেস্ক : সাধারণত এক কেজি আমের দাম ৭০ থেকে ২০০ টাকা বা এর কিছু বেশি হয়ে থাকবে। কিন্তু কখনো কি ভাবা যায়, এক কেজি আমের দাম প্রায় সাড়ে তিন লাখ টাকা। ভাবনার বাইরে হলেও বাস্তবেই এমন দামি আম রয়েছে। বিশ্বের বিরল প্রজাতির এই আমের নাম ‘মিয়াজাকি’।
এই আমটি সারা পৃথিবীতে বিখ্যাত হওয়ার পেছনে সবচেয়ে বড় কারণ হলো এই আমের মূল্য। কারণ দামের বিচারে সবচেয়ে মূল্যবান আম হলো এটি। শুধু এক পিস আমের দাম প্রায় ২১ হাজার টাকা। তবে কেজি দরে নিলে আরো বেশি দাম দিতে হবে।
বিশেষ পরিবেশে বেড়ে ওঠা এই আম রঙ, স্বাদ ও আকারে অন্য সব আম থেকে একদমি আলাদা। যদিও বিগত বছরগুলোতে বাংলাদেশসহ ভারতীয় উপমহাদেশে ব্যাপক হারে চাষ হয়েছে বিশ্বের সব থেকে দামি এই আমের।
মিয়াজাকি বা সূর্যডিম আমের এমন অদ্ভুত নাম হলো কীভাবে, আর আকাশচুম্বি দামের পেছনে আসল কারণটাই বা কী, চলুন জেনে নেওয়া যাক।
নামকরণ
জাপানের মিয়াজাকি নামক স্থানেই এটি চাষ শুরু হয়। ১৯৭০-এর দশকের শেষেই প্রচলিত হয় এই জাতের আম। তাই জায়গার নামানুসারেই এর নাম রাখা হয় মিয়াজাকি I এই আমের বিজ্ঞানসম্মত নাম হলো ‘তাইয়ো নো টোমাগো’ যার বাংলা অর্থ ‘সূর্যের ডিম’। এ ছাড়া এই আমটি ‘এগ অব সানসাইন’ নামেও পরিচিত।
অবশ্য আমের রঙ অনেকটা গাঢ় লাল হওয়ায় আন্তর্জাতিক বাজারে ‘রেড ম্যাংগো’ বা ‘লাল আম’ নামটিই অধিক প্রসিদ্ধ।
স্বাদ ও আকার
মিয়াজাকি আম আকারে সাধারণ আমের চেয়ে বেশ বড় ও লম্বা এবং গন্ধ ও স্বাদে মিষ্টতাও বেশি। রঙ গাঢ় লাল বা লাল ও বেগুনীর সংমিশ্রণ। এটি দেখতে অনেকটাই মুরগির ডিমের মতো। আমগুলোর ওজন সর্বোচ্চ ৩৫০ গ্রাম এবং এতে চিনির পরিমাণ ১৫ শতাংশ বা তার বেশি।
মিয়াজাকি আমের পুষ্টিগুণ
এ আমের আরেকটি বিশেষত্ব হলো, এ আমে রয়েছে একসঙ্গে একাধিক পুষ্টিগুণ। এতে রয়েছে জিঙ্ক, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন সি, ই, এ এবং কে ছাড়াও কপার এবং ম্যাগনেসিয়ামের মতো উপাদান যা শরীরের জন্য অপরিহার্য।
বিশেষজ্ঞদের মতে, মিয়াজাকি আম কোলেস্টেরল কমাতে বিশেষভাবে সহায়ক। এ ছাড়া বিশ্বের সবচেয়ে দামি আম মিয়াজাকিতে রয়েছে ক্যানসার প্রতিরোধক বৈশিষ্ট্য। এটি ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতেও পরিচিত।
এই আমটির অনন্য সুগন্ধ এবং স্বাদ রয়েছে। এতে নির্দিষ্ট প্রকৃতির অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট এবং অন্যান্য রাসায়নিক উপাদান রয়েছে। যার মধ্যে বিটা-ক্যারোটিন এবং ফলিক এসিড রয়েছে।
মিয়াজাকি আমের দাম এত বেশি কেন
এই আমের এত বেশি দামের কারণ হলো, প্রথমত এর স্বাদ এবং এর চাষপদ্ধতি। বিশেষ তাপমাত্রা, নির্দিষ্ট পরিমাণে পানি, পরিমিত সারসহ একাধিক জিনিসের সমন্বয়ে মিয়াজাকি আম চাষ করতে হয়।
২০১৬ সালে জাপানের ফুকুওকায় নিলামে এক জোড়া মিয়াজাকি আমের মূল্য উঠেছিল ৫ লাখ জাপানি ইয়েন। মূল্যটি সে সময়ের বাজার রেট অনুযায়ী ৪ হাজার ৫৪৭ মার্কিন ডলারের সমতূল্য ছিল। ইন্টারনেটের সুবাদে এই খবরটি ছড়িয়ে পড়ার পর থেকেই মূলত সবার নজর কাড়ে জাপানি আমটি।
এই আমের সর্বোচ্চ ফলন হয় এপ্রিল থেকে আগস্টের মাঝামাঝি সময়ে। তবে এত দামের নেপথ্যে রয়েছে আমটির সুনির্দিষ্ট চাষাবাদ পদ্ধতি এবং দুষ্প্রাপ্যতা। সঠিক পরিবেশের মাঝে সুক্ষ্ম পরিচর্যার মাধ্যমে যে উন্নত মানের আমের উৎপাদন হয় তা পৃথিবীর আর কোথাও পাওয়া যায় না। এছাড়া পরিপক্কতা লাভের পর যে গভীর লাল বর্ণটি আসে তা আমের অন্যান্য জাতের মধ্যে বেশ দুর্লভ।
শুধু কোষ্ঠ পরিষ্কার নয়, ইসবগুলের ভুসি খেলে আরও ৫ সমস্যার সমাধান মিলবে
মিয়াজাকি জাতের আম গাছের সুরক্ষাও অনেক কঠিন। সবসময় দৃষ্টিতে রাখতে হয় গাছকে। স্বাদের দিক থেকে একদমই ব্যতিক্রম, সুমিষ্ট এবং অসাধারণ সুগন্ধযুক্ত হওয়ায় সবাইকেই মুগ্ধ করে এই আম। এ কারণে বলা হয়, চাহিদা অনুযায়ী মিয়াজাকি আমের জোগান কম, ভিন্ন রং, মিষ্ট স্বাদ এবং চাষপদ্ধতির কারণে দাম বেশি হয়ে থাকে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।