আন্তর্জাতিক ডেস্ক : রাশিয়া, চীন, ভারতসহ পশ্চিমা মহাকাশ সংস্থাগুলো চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে মহাকাশযান অবতরণ করানোর চেষ্টা করছে, অন্যদের মতো চন্দ্রযান-৩ মিশনটি ভারতের মহাকাশের উচ্চাকাঙ্ক্ষাকে এগিয়ে নিতে পারে।
এতে চাঁদের সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ বরফ এবং পানি সম্পর্কে আমাদের জ্ঞানকে আরও প্রসারিত করতে পারে।
চলুন জেনে নিই চাঁদে হিমায়িত পানির উপস্থিতি সম্পর্কে আমরা কি কি জানি এবং কেনইবা মহাকাশ সংস্থা ও প্রাইভেট কোম্পানিগুলো চাঁদে কলোনি স্থাপন, খনিজ সন্ধান এবং মঙ্গলগ্রহে সম্ভাব্য মিশনের চাবিকাঠি হিসেবে এই বরফকেই প্রধান সহায়ক বলে বিবেচনা করে।
বিজ্ঞানীরা কিভাবে চাঁদে পানি খুঁজে পেলেন?
ষাটের দশকের প্রথম দিকে, প্রথম অ্যাপোলো মিশন অবতরণের আগে বিজ্ঞানীরা অনুমান করেছিলেন, চাঁদে পানি থাকতে পারে। সত্তুর দশকের গোড়ার দিকে অ্যাপোলোর ক্রুরা যে নমুনাগুলো বিশ্লেষণের জন্য চাঁদ থেকে এনেছিল তা প্রথমে শুকনো বলে মনে হয়েছিল।
২০০৮ সালে ব্রাউন ইউনিভার্সিটির গবেষকরা নতুন প্রযুক্তির সাহায্যে সেই নমুনাগুলো পুনরায় পর্যালোচনা করে ক্ষুদ্র আগ্নেয়কাচের দানার ভেতরে হাইড্রোজেন খুঁজে পান।
এরপর ২০০৯ সালে, ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থার চন্দ্রযান-১ এর সঙ্গে নাসা নিজেদের একটি অনুসন্ধানযন্ত্র পাঠিয়েছিল যা চাঁদের পৃষ্ঠে পানি শনাক্ত করে।
একই বছর নাসার আরেকটি মিশন চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে পৃষ্ঠদেশের নিচে বরফ খুঁজে পেয়েছিল। এর আগে ১৯৯৮ সালে নাসার একটি মিশন চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে বরফের পুরু স্থর থাকার সম্ভাবনার কথা জানিয়েছিল।
চাঁদে পানি কেন এত গুরুত্বপূর্ণ?
বিজ্ঞানীরা চাঁদের প্রাচীন গর্তগুলোতে অনুসন্ধানে বেশি আগ্রহী। এই ক্রেটরস বা গর্তগুলো চাঁদের আগ্নেয়গিরি এবং যে সকল ধূমকেতু-গ্রহাণু পৃথিবীতে পানি নিয়ে এসেছিল তার রেকর্ড সরবরাহ করতে পারে বলে তাদের ধরণা, যা আমাদের মহাসাগরগুলোর উৎস সন্ধানে সাহায্য করবে।
যদি চাঁদে পর্যাপ্ত বরফ পাওয়া যায়, তবে তা অভিযাত্রীদের জন্য পানীয়জলের উত্স হতে পারে এবং চন্দ্রাভিযানের সরঞ্জাম ঠাণ্ডা করতে সাহায্য করতে পারে। তাছাড়া অক্সিজেন ও হাইড্রোজেন তৈরিতে এই বরফ কাজে লাগবে, যা মঙ্গল মিশনে সাহায্য করতে পারে।
১৯৬৭ সালে ইউনাইটেড নেশনস আউটার স্পেস চুক্তির মাধ্যমে চাঁদের মালিকানা দাবি করা থেকে সকলকে নিবৃত করা হলেও বাণিজ্যিক কার্যক্রমে নিষেধাজ্ঞার কোনো বিধান এতে নেই। চাঁদে অন্বেষণ এবং সম্পদ আহরণে যুক্তরাষ্ট্র প্রস্তাবিত কিছু নীতির ভিত্তিতে আর্টেমিস অ্যাকর্ড প্রণয়ন করা হয় যেখানে ২৭টি দেশ স্বাক্ষর করে। যদিও চীন ও রাশিয়া এই অ্যাকর্ডে স্বাক্ষর করেনি।
চাঁদের দক্ষিণ মেরু অভিযান কেন জটিল?
রাশিয়ার লুনা-২৫ নভযানটি এই সপ্তাহে দক্ষিণ মেরুতে অবতরণের কথা ছিল কিন্তু নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গিয়ে বিধ্বস্ত হয়। চাঁদের এই অংশে অবতরণের চেষ্টা এর আগেও ব্যর্থ হয়েছে। চাঁদের দক্ষিণ মেরু গর্ত এবং গভীর গিরিখাতে পূর্ণ। এটি নিরক্ষীয় অঞ্চল থেকে অনেক দূরে। অ্যাপোলো মিশনেও এই অঞ্চলে অবতরণের চেষ্টা করা হয়েছিল।
ভারতীয় মহাকাশ সংস্থা ইসরো জানিয়েছে, চন্দ্রযান-৩ মিশনের আগামীকাল বুধবার (২৩ আগস্ট) চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে অবতরণের পরিকল্পনা রয়েছে। ২০১৯ সালে কাছাকাছি জায়গায় চন্দ্রযান-২ অবতরণের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং চীনও চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে অভিযানের পরিকল্পনা করেছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।