বিজ্ঞান ও প্রযক্তি ডেস্ক : ক্লাসে ঢুকেই সুবিদ হাসান জোরে এক হাঁক ছাড়লেন, ‘রবিউল কই রে?’
সচরাচর যেটা হয় সেটা হলো, ভদ্রলোক ক্লাসে ঢুকেই শান্তভাবে ব্ল্যাকবোর্ড মুছতে থাকেন। ব্ল্যাকবোর্ড মুছেই গত ক্লাসের কিছু আনুষঙ্গিক বিষয় বোঝাতে শুরু করেন, যেগুলো বলার আগেই হয়তো ক্লাস শেষ হওয়ার ঘণ্টা বেজে গিয়েছিল। ক্লাসে বিজ্ঞানের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করার কারণে প্রায়ই দেখা যায়, সুবিদ হাসান পাঠ্যপুস্তকের মূল আলোচনা থেকে কিছুটা দূরে সরে যান। সেটা সম্পন্ন করতেই পরের ক্লাসে এরূপ তোড়জোড়।
কিন্তু আজ শিক্ষককে একটু ভিন্ন মেজাজে দেখে ছাত্ররা কিছুটা ভড়কে গেল মনে হলো।
সুবিদ হাসান এমনিতে খুব সহজ-সরল ধাঁচের মানুষ, কিন্তু বাঁকার বিষয় হলে বাঁকতে ছাড়েন না। ক্লাসের ছাত্রদের কাছে মূল ঘটনা খুব বেশি সময় চাপা থাকল না। স্যারের কাছেই জানা গেল যে স্কুলে আসার আগে রবিউল টিফিনের টাকা নিয়ে মায়ের সাথে ঝগড়া করে এসেছে।
ছেলে টাকা না নিয়ে রাগ করে স্কুলে চলে এলে মা-ও আর ঘরে বসে থাকতে পারেননি, সোজা চলে এসেছেন আর টিচার্স রুমে সুবিদ স্যারকে পেয়ে তাঁকেই নালিশ করে বসেছেন। সাথে ছেলের জন্য টাকা আনতেও ভোলেননি। সুবিদ স্যার রবিউলকে ডেকে সেটাই বললেন, যেটা মুরব্বিরা সুযোগ পেলেই কিশোর-তরুণদের শুনিয়ে দেন, ‘মা-বাবা তো হসনি এখনো, মা-বাবার মর্ম বুঝবি কী করে!’
মাথা হেট করে দাঁড়িয়ে থাকে রবিউল। সুবিদ হাসান হঠাৎ করেই সকলের উদ্দেশ্যে একটি প্রশ্ন ছুড়ে দেন, ‘জন্মের আগে তোরা কার পেটে ছিলি?’
সমস্বরে উত্তর আসে, ‘মায়ের পেটে।
’
সুবিদ স্যার কিছুটা সংশোধন করে দিয়ে বললেন, ‘মায়ের পেট না বলে গর্ভ বললে ভালো হয়। কারণ তোরা ছিলি মায়ের গর্ভে বা জরায়ুতে। জরায়ু মেয়েদের তলপেটের দিকে থাকে। ছেলেদের যেহেতু বাচ্চা ধারণ করতে হয় না, সেহেতু ছেলেদের এই অঙ্গ থাকার কোনো প্রয়োজন নেই!। নারীরা এই জরায়ুতেই তাঁদের বাচ্চা দীর্ঘ একটা সময় ধারণ করে থাকেন।
’
সুরেশ জিজ্ঞেস করল, ‘আমি শুনেছি জরায়ু একটা আবদ্ধ জায়গা! এ রকম একটা জায়গাতে আমি ছিলাম, ভাবতেই গা শিউরে ওঠে! এখানে ওরা শ্বাস-প্রশ্বাস নেয় কী করে? প্রস্রাব-পায়খানার ব্যাপারটাই বা ঘটে কী করে?’
দীর্ঘ সময় বলতে সুবিদ হাসান আসলে ঠিক কতটা সময় বোঝাচ্ছেন সেটাও জানতে চাইল একজন।
সুবিদ হাসান কোনো উত্তর না দিয়ে রবিউলের মাকে ডেকে আনালেন এবং সসম্মানে একটি চেয়ারে বসতে দিলেন। উত্তর না পেলেও ছাত্ররা জানে যে আজকের আলোচনার কোনো এক পর্যায়ে এসে সুবিদ হাসান ঠিক ঠিক তাদের প্রশ্নগুলোর উত্তর দিয়ে দেবেন এবং সেটা যথাসময়ে। সুবিদ হাসান রবিউলের মাকে সুরেশের ছুড়ে দেওয়া প্রশ্নটিই আবার জিজ্ঞেস করলেন। রবিউলের মা অস্বস্তিকর একটা আর্তনাদের মতো করে নিজের অপারগতা স্বীকার করে আঁচলে মুখ ঢাকলেন।
সুবিদ হাসান রবিউলের মা ও ছাত্রদের উদ্দেশ করে বললেন, ‘সকলে শোনেন ঠিকমতো। নিজের জন্ম প্রক্রিয়া না জানলে আমরা মায়েদেরকে তাঁদের প্রাপ্য সম্মানটুকু দিতে কার্পণ্য করতে পারি। একেবারে প্রাথমিক অবস্থায় রবিউল ছিল মাত্র কয়েকটি কোষের একটা পিণ্ড। রবিউলকে এখন দেখতে যে রকম লাগে তার কিছুই তখন ছিল না। এই কোষগুলো বিভাজিত হতে হতে আজকের রবিউল হয়েছে। বিভাজিত হওয়া মানে হচ্ছে বিভক্ত হওয়া; অর্থাৎ একটি কোষ থেকে দুটি, দুটি থেকে চারটি―এভাবে চলতে থাকবে। তবে মায়ের গর্ভের কোনো পর্যায়ের রবিউলের সাথেই আজকের রবিউলকে মেলানো যাবে না। কোষগুলোর বিভাজনের কোনো এক সময়ে কোষপিণ্ডটি মায়ের জরায়ুর ভেতরের দিকের দেয়ালে গেঁথে যায়, একটি টেনিস বলকে জোরে ছুড়ে মারলে বলটি যে রকম নরম কাদামাটিতে ঢুকে যায়, অনেকটা সে রকম। একটা সময় পুরোটাই দেয়ালের গভীরে ঢুকে যায়।
এই কোষপিণ্ডটি আবার একেবারে শুরুর কোষপিণ্ডের মতো নিরেট না; একদিকে তরল উপাদান ধারণকারী ফাঁকা অংশ এবং অপরদিকে নিরেট। নিরেট মানে তো তোরা জানিস―কোনো ফাঁপা অংশ নেই। এই নিরেট অংশে যে কোষগুলো থাকে সেগুলোই আমাদের দেহের বাকি সব কোষ তৈরি করে। বাইরের দিকের কোষের যে একটি স্তর দেখা যাচ্ছে, সেটা কোষের এই গঠনকে জরায়ুর ভেতরের দেয়ালের সাথে গেঁথে যেতে সাহায্য করে (বোর্ডে নিচের চিত্রের মতো একটি চিত্র এঁকে সুবিদ হাসান তাঁর ছাত্র-ছাত্রীদের দেখালেন)। পরে অবশ্য এই স্তরের কোষ থেকে বিভিন্ন গঠন তৈরি হতে থাকে এবং বাচ্চার সাথে মায়ের দেহের যোগাযোগ স্থাপন করে।’
এটা বলে সুবিদ হাসান একটু থামলেন। সকলের দিকে তাকিয়ে তাদের মুখের অভিব্যক্তি বোঝার চেষ্টা করতে লাগলেন। কিছুটা আগ্রহী মনে হলেও কারো অভিব্যক্তিতে বিশেষ কিছু ধরা পড়ল না। বিজ্ঞান পড়ানো বা জানানোর সময় যদি শ্রোতামণ্ডলের অভিব্যক্তিতে বিস্ময় ফুটে না ওঠে তবে বিজ্ঞান পড়ানো বা বোঝানোটা ঠিক জুতসই হচ্ছে না বলে ধরে নেওয়া যেতে পারে।
সুবিদ হাসান রবিউলের মাকে বললেন, ‘রবিউল গর্ভে থাকার সময় আপনার যা ভালো তাই সে নিয়েছে, তার যা খারাপ তাই সে আপনাকে দিয়েছে। এটা এক মাস বা দুই মাসের কোনো ঘটনা না, টানা ৯-১০ মাস ধরে আপনি ওকে এভাবে লালন করেছেন, নিজের ভেতর আগলে রেখেছেন।’
কথাটা বলার পর সুবিদ হাসান ক্লাসে কিছুটা নড়াচড়া দেখতে পেলেন। তিনিও বলতে বেশ আগ্রহী হয়ে উঠলেন।
‘আমরা শ্বাস-প্রশ্বাসের সময় কার্বন ডাই-অক্সাইড ছেড়ে দিই, অক্সিজেন টেনে নিই। তাহলে ভালো কোনটা?’
সমর বলে উঠল, ‘অবশ্যই অক্সিজেন। তাহলে কি রবিউল তার কার্বন ডাই-অক্সাইড তার মাকে দিয়েছে আর মায়ের থেকে অক্সিজেন নিয়েছে?’
‘হ্যাঁ, ঠিক সেটাই।’ সুবিদ হাসান উত্তর দিলেন।
রবিউলের মা তাঁর নাকমুখ দিয়ে যে অক্সিজেন নিয়েছেন, সেটাই পরবর্তী সময়ে রক্তের সাথে মিশে মধ্যবর্তী একটি মাধ্যমের সাহায্যে রবিউলের ছোট্ট দেহে চলে গেছে। একইভাবে রবিউল তার দেহে যে কার্বন ডাই-অক্সাইড তৈরি করেছে তাও সেই একই মাধ্যমের মধ্য দিয়ে মায়ের রক্তে চলে গেছে এবং রবিউলের কার্বন ডাই-অক্সাইড মা তার নিজের নাক-মুখ দিয়ে বাইরে বের করে দিয়েছে। তাহলে এসব গ্যাসের আদান-প্রদানের জন্য মধ্যবর্তী যে মাধ্যমের কথা বলা হলো সেটার নিশ্চয়ই ভালো উপযোগিতা আছে। মধ্যবর্তী সেই মাধ্যমটিকে আমাদের গ্রামের মা-বোনেরা অনেক সময় গর্ভের ফুল বলে থাকেন। বাচ্চা জন্মানোর পর যখন এটাকে জরায়ু থেকে বের করা হয় তখন এটাকে দেখতে ফুলের মতোই দেখায়।
অমিত প্রশ্ন করার ভঙ্গিতে হাত তুলল। সুবিদ হাসান হ্যাঁ সূচক মাথা নেড়ে প্রশ্ন করার অনুমতি দিলেন।
‘আচ্ছা, এটা বুঝলাম যে রবিউলের দেহের গ্যাসের ব্যাপারগুলো ওর মায়ের…’
সুবিদ হাসান ওকে থামিয়ে দিয়ে বললেন, ‘শুধু রবিউল ও তার মায়ের ক্ষেত্রেই এ ঘটনা ঘটে না, তোর ও তোর মায়ের ক্ষেত্রে এবং আমাদের সকলের ক্ষেত্রেই এমনটা হয়েছে। এখানে আমরা রবিউলের নাম নিচ্ছি বারবার, কারণ প্রসঙ্গের সূচনাটা রবিউলই করেছে। এইবার বল তোর প্রশ্নটা কী?’
‘রবিউল তো তখন আকার-আকৃতিতে বড় হতে শুরু করে দিয়েছে। তার মানে ওর দৈহিক বৃদ্ধির জন্য নিশ্চয়ই পুষ্টির দরকার হয়েছিল। তো সেই পুষ্টিটাও কি মায়ের থেকে পেয়েছি আমরা?’
‘ঠিক ধরেছিস’। সুবিদ হাসানের চটজলদি উত্তর। ‘সে জন্যই গর্ভবতী মায়েদেরকে ভালো-মন্দ খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। সে ক্ষেত্রে মায়ের নিজেরও তো পুষ্টির দরকার আছে। সাথে যুক্ত হয়েছে গর্ভের বাচ্চার চাহিদা। সেই চাহিদা পূরণ করতে না পারলে বাচ্চার স্বাভাবিক বৃদ্ধি কমে যায়। মায়ের খাবারের পুষ্টি যদি সন্তানের মধ্যে যায়, তবে মা যে ওষুধ সেবন করবে সেগুলোও বাচ্চার দেহে চলে যেতে পারে। একেবারে সোজা হিসাব। গর্ভবতী মায়েদের ওষুধ সেবনে তাই সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হয়। একটা মেডিসিন আমি বা তোরা বা একজন মা যেভাবে সহ্য করতে পারি, একটা ভ্রূণ তার জীবনের প্রাথমিক পর্যায়ে তা পারে না। সব ওষুধ না হলেও চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা কিছু ওষুধকে ভ্রূণের জন্য ক্ষতিকর বলে প্রমাণ করতে পেরেছেন।’
এতক্ষণ পর রবিউল প্রশ্ন করল। সুবিদ হাসান ক্লাসে ঢোকার পর থেকেই সে শুধু শুনে যাচ্ছিল, কোনো কথা বলেনি। সম্ভবত অপরাধবোধ থেকেই কথা বলার সাহস পাচ্ছিল না। ‘আচ্ছা স্যার, মধ্যবর্তী যে মাধ্যমটার কথা বললেন, যেটা দিয়ে পুষ্টি ও গ্যাসীয় উপাদান আদান-প্রদান হয়, সেই মাধ্যমটির কি আর কোনো কাজ আছে? এই যেমন ধরেন প্রস্রাব-পায়খানার আদান-প্রদান কি হয় এই মাধ্যম দিয়ে?’
পুরো ক্লাসে হাসির রোল উঠল। যারা হাসছে তাদেরকে ধমক দিয়ে সুবিদ হাসান আবার শুরু করলেন।
‘গুরুত্বপূর্ণ একটা কাজ অবশ্য আছে, কিন্তু তোদের সেটা জানার খুব দরকার আছে বলে মনে হয় না। তার পরও বলি। হরমোন কী তা জানিস তো?’
সকলকে চুপ থাকতে দেখে সুবিদ হাসান নিজেই আবার শুরু করলেন।
‘হরমোন হচ্ছে এমন রাসায়নিক উপাদান, যা এক জায়গায় তৈরি হয়ে রক্তের মাধ্যমে দূরে গিয়ে অন্য কোনো অঙ্গে কাজ করতে পারে। যে সকল অঙ্গ থেকে এই সকল রাসায়নিক উপাদান তৈরি হয় সেই সকল অঙ্গকে বলে এন্ডোক্রাইন গ্ল্যান্ড বা অন্তঃক্ষরা গ্রন্থি।’
সুবিদ হাসান বুঝলেন যে নামটা শুনে ছাত্র-ছাত্রীদের মুখ শুকিয়ে গেছে। সেটা বুঝতে পেরেই সুবিদ হাসান ওদেরকে নির্ভয় দিয়ে বললেন যে এই নামটা আপাতত মনে রাখার খুব বেশি দরকার নেই। যেটা মনে রাখতে পারে সেটা হচ্ছে সেই মধ্যবর্তী মাধ্যমটা, তথা গর্ভফুলটি বেশ কিছু হরমোন তৈরি করে।
একজন মহিলা যখন গর্ভবতী হয়, তখন একটা পরীক্ষার মাধ্যমে সেই খবর জানা যায়। যেটা দিয়ে পরীক্ষা করা হয় সেটা আমাদের দেশের ফার্মেসিগুলোতে পাওয়া যায়। এই পরীক্ষায় প্রেগনেন্ট মহিলা তার প্রস্রাব পরীক্ষা করে দেখে। প্রস্রাবে কী পরীক্ষা করে দেখে? গর্ভফুল থেকে বের হওয়া একটি হরমোন। হরমোনটি প্রেগনেন্সির শুরুর দিকে পাওয়া যায় এবং মায়ের কিডনি দিয়ে বের হয়ে যায়। এ জন্যই হরমোনটিকে খোঁজা হয় মায়ের প্রস্রাবের মধ্যে। গর্ভফুল যেহেতু হরমোন নিঃসরণ করে, আবার গর্ভফুল তৈরি হওয়ার অর্থ মহিলাটি গর্ভবতী, সেহেতু প্রস্রাব পরীক্ষার ফল নিয়ে সবাই প্রেগনেন্সির ব্যাপারে মোটামুটি নিশ্চিত থাকে। তবে ভুল ফলাফল যে আসে না সেটাও জোর গলায় বলা যায় না।
‘আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ভ্রূণ প্রস্রাব-পায়খানা সব মায়ের গর্ভেই করে। ভ্রূণ যে তরলের মধ্যে নিজেকে ডুবিয়ে রাখে সেই তরলেই পাওয়া যায় ভ্রূণের প্রস্রাব। তবে দেহের কোষে তৈরি হওয়া বর্জ্য কিন্তু ভ্রূণ রক্তের মাধ্যমে মায়ের দেহে পাঠিয়ে দেয়। কার্বন ডাই-অক্সাইড সে রকমই এক বর্জ্য। এই যে বারবার বলা হচ্ছে যে ভ্রূণের সাথে মায়ের সংযোগ থাকে রক্তনালির মাধ্যমে। রক্তনালি বলতে আমরা মূলত দুই ধরনের নালিকে বুঝি―ধমনি ও শিরা। আমরা হাতের উল্টো পিঠে যে আঁকাবাঁকা নালি দেখি সেটাই শিরা। ধমনি থাকে একটু ভেতরের দিকে। ফলে ধমনি আমরা এত সহজে দেখতে পাই না। মায়ের দেহের সাথে ভ্রূণের দেহের রক্ত-সংযোগ ঘটায় দুটি ধমনি ও একটি শিরা। এই তিনটি রক্তনালি একত্রে একটি দড়িমতো গঠনের মধ্যে প্যাঁচানো থাকে। এই গঠনটিকে বলা হয় ‘আমবিলিকাল কর্ড’। আমবিলিকাস একটি ল্যাটিন শব্দ। এর অর্থ হচ্ছে নাভি। আর ইংরেজি কর্ড অর্থ যে দড়ি বা রশি সে তো তোরা জানিসই। বাচ্চা জন্মানোর পর এই আমবিলিকাল কর্ড কেটে ফেলা হয়। কিন্তু মায়ের সাথে সন্তানের বন্ধনের একটা চিহ্ন আমরা বয়ে বেড়াই সারাট জীবন। সেই চিহ্নটিই হচ্ছে আমাদের নাভি। আমাদের নাভি দিয়েই আমবিলিকাল কর্ডের মাধ্যমে আমরা মায়ের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করেছি।’
‘এখানেই শেষ না।’ সুবিদ স্যার থুতনিতে আঙুল বুলিয়ে বললেন।
‘বাচ্চা জন্ম হওয়ার পর বাচ্চাকে বুকের দুধ খাওয়াতে হয়। আমরা তো এ কথা শুনে অভ্যস্ত যে মায়ের দুধের বিকল্প নেই। এই দুধ পান করানোর মাধ্যমে মা ও সন্তানের বন্ধন আরো দৃঢ় হয় বলে মনে করছেন অনেক বিশেষজ্ঞ। বাচ্চা যখন মায়ের স্তনের বোঁটায় ঠোঁট স্পর্শ করে, তখন নিউরনের মাধ্যমে সেই খবর চলে যায় মায়ের মস্তিষ্কে থাকা হাইপোথ্যালামাসে। হাইপোথ্যালামাস থেকে সংকেত পেয়ে পিটুইটারি নামক গ্ল্যান্ড থেকে অক্সিটোসিন হরমোন বের হয়। এই অক্সিটোসিন আবার কাজ করে স্তনের কোষে এবং কোষের চাপ সৃষ্টির মাধ্যমে মায়ের দুধ বাচ্চার বা নবজাতকের মুখে চলে আসে। এই কাজের পাশাপাশি অক্সিটোসিন কিন্তু মা-সন্তানের বন্ধনকে আরো শক্তিশালী করতে সাহায্য করে। ফলে মা ও সন্তানের মধ্যেকার বন্ধন তৈরিতেও অক্সিটোসিনের একটা ভূমিকার কথা শোনা যায়।’
বাইরে ঘণ্টার শব্দ শোনা গেল। মফিজ চাচা ঘণ্টীতে শব্দ তুলে সুবিদ হাসানের কথায় ছেদ আনলেন। সুবিদ হাসান বুঝতে পারছিলেন যে রবিউল ও তার মায়ের থেকে বিদায় নেওয়ার সময় হয়েছে। একবার ছাত্র-ছাত্রীদের মুখপানে চেয়ে কেমন যেন মায়া হলো ওদের জন্য। আপন মনেই চিন্তা করলেন, মায়ের প্রতি ভালোবাসা তৈরির ডোজটা কি একটু বেশিই হয়ে গেল? বের হওয়ার সময় সুবিদ হাসান লক্ষ করলেন, রবিউল তার মায়ের কাছে গিয়ে বসেছে, আর মা ছেলের মাথায় স্নেহের পরশ বুলিয়ে দিচ্ছেন।
রবিউলের শেষ কথাগুলো যেন সুবিদ হাসানের কানে প্রতিধ্বনিত হতে লাগল বারবার, ‘মা, তুমি আমার জন্য এত কিছু করেছ আর আমি অকারণেই তোমাকে না বুঝে তোমার সাথে কত খারাপ ব্যবহার করি।’
সুবিদ হাসানের চোখের কোনাটায় এক ফোঁটা জল জমে উঠল। তিনি তো মাকে হারিয়েছেন তাও ১৫ বছর হতে চলল। কিন্তু এখনো তিনি অন্য মায়েদের সম্মান দিয়ে নিজের মাকে সম্মানিত করে চলেছেন প্রতিনিয়ত। সূত্র : কালের কন্ঠ
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।