জুমবাংলা ডেস্ক : পৃথিবীতে জাতীয় ফল হিসেবে সম্ভবত কাঁঠালই সবচেয়ে দুর্ভাগা! শতভাগ ভোগ্য হলেও নাগরিকদের কাছে এই ফলের মানসম্মান নেই। এমনকি এ নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায়ও কম ট্রল হয় না। কয়েক বছর ধরে ট্রলের শিকার হয়ে কাঁঠালপ্রেমীরা তো আর কাঁঠাল খাওয়ার কথা স্বীকারই করতে চাইছেন না। শহরের অফিসগুলোতে ঘটা করে ফল উৎসব করা হয়। সেখানেও স্থান পায় না কাঁঠাল।
ভদ্র সমাজে এই যখন কাঁঠালের অবস্থান, তাহলে এই ফল জাতীয় ফলের মর্যাদা পেয়েছিল কোন যুক্তিতে?
অনেকে বলেন,কাঁঠালের সর্বাংশ ভোগ্য এবং গরিবের আকালের সহায়। এ কারণেই জাতীয় ফলের মর্যাদা। তার মানে, জনপ্রিয়তার বিচারে নয়, গরিবের কথা ভেবেই মর্যাদা পেয়েছে কাঁঠাল। ফলে যা হওয়ার তাই হয়েছে, এই ফল আর জাতে উঠতে পারল না!
আবার অনেকে এমনও বলছেন, দেশে গরিবের প্রতি দয়া-দাক্ষিণ্যের দিন ফুরিয়ে গেছে। এবার জাতীয় ফল হিসেবে কাঁঠাল বাদে অন্য কিছুর নাম প্রস্তাব করা হোক। এদিকে থেকে এগিয়ে আছে হাঁড়িভাঙা, হিমসাগর ইত্যাদি।
অবশ্য পৃথিবীতে কাঁঠাল প্রজাতির সব ফলের ভাগ্যই এমন! দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ফল ডুরিয়ানও গরিব আর পশু-পক্ষীর খাবার!
বাংলাদেশের বাস্তবতা হলো, ইরি-বোরো ধান চাষের চল শুরু হওয়ার আগে দেশে গ্রীষ্মকালে বহু মানুষের ক্ষুধা মেটাত কাঁঠাল। গ্রামের অবস্থাপন্নরা অবশ্য নানা জাতের কাঁঠাল নানাভাবে তাড়িয়ে তাড়িয়ে খেত। খই, মুড়ি, মুড়কি, ভাত বা পান্তার সঙ্গে খাওয়া হতো পাকা কাঁঠাল। কাঁঠালের রস করে পিঠা বানানোর চলও ছিল। আর কাঁচা কাঁঠাল ছিল গরিবের মাংস। কেউ বলে বাঘের মাংস। পশ্চিমবঙ্গে তো একে বলে ‘গাছপাঁঠা’! সে হিসাবে জনপ্রিয়ই ছিল বলা যায়।
তাহলে এই ফল নিয়ে ফেসবুকে এত ট্রল কেন? কেনই বা এটিকে ছোটলোকদের খাবার বলার চেষ্টা করছে অনেকে?
এটা অবশ্য জাত-পাতের (গ্রামের অশিক্ষিত বনাম শহুরে শিক্ষিত নাগরিক অর্থে) বিষয় নয়। প্রকৃত বিষয় হলো, কিছু লোক এই কাঁঠালের তীব্র ঘ্রান, স্বাদ এবং কিছু অস্বস্তিকর শারীরবৃত্তীয় প্রতিক্রিয়ার কারণে খেতে পারেন না। এখানে কয়েকটি কারণ তুলে ধরা হলো, যেসব কারণে কিছু মানুষ কাঁঠাল খেতে পারেন না বা পছন্দ করেন না:
অত্যন্ত সংবেদনশীলতা: কাঁঠালের একটি স্বতন্ত্র ও তীব্র ঘ্রাণ রয়েছে। অনেকের কাছে এটিকে অসহ্য বা অপ্রীতিকর মনে হয়। এই তীব্র ঘ্রাণ গন্ধ-সংবেদনশীল ব্যক্তিদের জন্য অপ্রীতিকর হতে পারে। ফলে এ ধরনের মানুষ কাঁঠালের মজা নিতে পারবেন না অথবা কাঁঠাল খাওয়া তাঁদের জন্য কঠিন।
অ্যালার্জি: কাঁঠাল খেলে কারও কারও আবার অ্যালার্জির সমস্যা দেখা দিতে পারে। শরীরের রোগ প্রতিরোধব্যবস্থা (ইমিউন সিস্টেম) কিছু নির্দিষ্ট বস্তুর প্রতি মাত্রাতিরিক্ত প্রতিক্রিয়া দেখায়। এটিই অ্যালার্জি। এটি খাবার বা ধুলোবালু অথবা পরিবেশের অন্য যেকোনো বস্তুর কারণে হতে পারে। অ্যালার্জির কারণে চুলকানি, শরীরে গোটা, ফুলে যাওয়া বা শ্বাস নিতে অসুবিধার মতো লক্ষণ দেখা দেয়। অবশ্য কাঁঠালে অ্যালার্জি তুলনামূলক বিরল। ফলে কাঁঠালের প্রতি সংবেদনশীল ব্যক্তিদের মধ্যে প্রতিক্রিয়া হতে পারে গুরুতর।
পেটে সহ্য না হওয়া: কাঁঠালে উচ্চমাত্রার সালফার যৌগ রয়েছে। এটি কিছু লোকের ক্ষেত্রে হজম করা কঠিন হতে পারে। গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল অবস্থা বা সংবেদনশীল পরিপাকতন্ত্রযুক্ত ব্যক্তিরা কাঁঠাল খাওয়ার পরে অস্বস্তি, পেট ফোলাভাব বা হজমের সমস্যা অনুভব করতে পারেন।
ব্যক্তিগত পছন্দ: রুচি বা পছন্দের মতো স্বাদও খুবই ব্যক্তিগত বিষয়। কাঁঠালের স্বাদ ও গন্ধ অনন্য। কাঁঠালের স্বাদ ক্রিমি (মাখন বা ননির মতো) এবং কড়া মিষ্টি। তীব্র ঘ্রাণ ও কড়া মিষ্টি দুটি মিলিয়ে যে অনন্য স্বাদ তৈরি হয়, সেটি অনেকের কাছে উপভোগ্য না-ও হতে পারে।
কিছু মানুষ কাঁঠালের প্রতি নাকউঁচু ভাব দেখালেও সংখ্যার বিচারে এই জাতীয় ফল এখনো জনপ্রিয়। প্রতিবছর জ্যৈষ্ঠের শেষে এবং শ্রাবণের শুরুর দিকে ঢাকার গাজীপুর, সিলেট অঞ্চল এবং বরন্দ্রে অঞ্চলে বড় বড় কাঁঠালের আড়তের দেখা মেলে এখনো। রাজধানী ঢাকায়ও বিক্রি হয় মটকার মতো বড় পাকা কাঁঠাল! তার মানে, কাঁঠালের অতটা মর্যাদাহানি, অচ্ছুত এখনো হয়নি, এটাই আশার কথা!
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।