জুমবাংলা ডেস্ক : দেশে দীর্ঘ দুই বছরের বেশি সময় ধরে ডলার সংকট রয়েছে। এমন পরিস্থিতির মধ্যে রেমিট্যান্স শাটডাউনের ঘোষণা দিয়েছেন প্রবাসীরা। যার প্রভাবে সদ্য সমাপ্ত জুলাই মাসে রেমিট্যান্স কমেছে ২৫ শতাংশের বেশি। এমন পরিস্থিতির মধ্যে খোলাবাজারে ব্যাপক ডলার সংকট দেখা দিয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১ আগস্ট) রাজধানীর মতিঝিল, দিলকুশা ও পল্টন এলাকার মানি চেঞ্জারগুলো ঘুরে ডলার সংকটের এমন চিত্র দেখা গেছে।
নাম প্রকাশে অনিশ্চুক পল্টনের এক মানি চেঞ্জারের ডলার ব্যবসায়ী জানান, ডলার একেবারে নেই বললেই চলে। ডলার কিছু পাওয়া গেলে আমাদের বেশি দামে কিনে আনতে হয়। এর ফলে আমরাও যার কাছে যে দামে পারি বিক্রি করি। বর্তমানে কোন নির্দিষ্ট দাম নেই ডলারের।
এদিকে বুধবার (৩১ জুলাই) মানি চেঞ্জার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (এমসিএবি) পক্ষ থেকে সব মানি চেঞ্জারকে চিঠি দিয়ে ডলারের দাম ১১৯ টাকায় বেঁধে দেওয়ার তথ্য জানানো হয়। প্রতি ডলারের দাম নির্ধারণ করে দেওয়ার পর মানি চেঞ্জারগুলোতে ডলারের সংকট দেখা গেছে।
দিলকুশায় ডলার কিনতে এসেছিলেন রাকিবুল ইসলাম। তিনি বলেন, সিঙ্গাপুর যাবো কয়েকদিনের মধ্যে। এজন্য নগদ কিছু ডলার কিনতে এসেছিলাম। তবে কয়েকটি মানি চেঞ্জারে ঘুরেও ডলার না পেয়ে এখন খালি হাতে চলে যাচ্ছি।
জানা গেছে, দুই সপ্তাহ আগে খোলাবাজারে প্রতি ডলার ১১৮-১১৯ টাকার মধ্যে বেচাকেনা হতো। নগদ ডলারের দাম কয়েক মাস ধরে এ রকমই ছিল। তবে কোটা সংস্কার নিয়ে আন্দোলনের পর গত সোমবার তা বেড়ে ১২২ টাকায় ওঠে, যা এখন ১২৫ টাকা হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কোটা সংস্কার নিয়ে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে সৃষ্ট উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ইন্টারনেট বন্ধ থাকাসহ নানা কারণে জুলাই মাসে রেমিট্যান্স কমেছে। আন্দোলনে সহিংসতায় বহু হতাহতের প্রতিবাদে দেশে ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স না পাঠানোর বিষয়ে ক্যাম্পেইন করছেন অনেক প্রবাসী। যার প্রভাব ইতিমধ্যে সদ্য সমাপ্ত মাসের রেমিট্যান্সে দেখা গেছে। এসবের কারণে খোলাবাজারে ডলারের দাম আরও বেড়ে যেতে পারে।
প্রবাসীদের মধ্যে ‘রেমিটেন্স শাটডাউন’ এর ব্যাপক প্রচারণার মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকর পক্ষ থেকে কয়েকটি ব্যাংককে মৌখিকভাবে বেশি দরে রেমিট্যান্সের ডলার কেনার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এমন পরিস্থিতির মধ্যেই ব্যাংকগুলোতে রেমিট্যান্সের ডলারের দর ১১৯ টাকা ছাড়িয়েছে বলে জানা গেছে। বেশি দামে ডলার কেনার মূল উদ্দেশ্য হলো ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স পাঠাতে আগ্রহী করা তোলা। অপরদিকে খোলাবাজারে ডলারের দর ছাড়িয়েছে ১২৫ টাকা। তারপরেও চাহিদামতো ডলার পাচ্ছেন না গ্রাহকেরা।
অর্থনীতিবিদরা বলেন, রেমিট্যান্সের উপর ইতিমধ্যে প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। সামনের দিনগুলোতেও যদি প্রবাসী আয় কমতে থাকে তাহলে অর্থনীতির জন্য খারাপ হবে। অপরদিকে একটি দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি খারাপ হলে অর্থ পাচারকারীরা সক্রিয় হয়। এতে অর্থপাঁচার বেড়ে যেতে পারে। চলমান অস্থিরতার মধ্যে প্রবাসীরা দেশে অর্থ পাঠালেও দেশে ডলার আসবে না। কারণে এক্ষেত্রে হুন্ডি বেছে নেবে তারা। এর ফলে দেশের অর্থনীতি আরও খারাপের দিকে যেতে পারে।
এদিকে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভও ধারাবাহিকভাবে কমছে। চাপ সামাল দিতে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রতিনিয়ত রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি করছে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ব্যালেন্স অব পেমেন্ট ম্যানুয়াল (বিপিএম) ৬ অনুযায়ী, ৩০ জুন পর্যন্ত বাংলাদেশের রিজার্ভের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ১৭৮ কোটি ডলার। সূত্র : অর্থসূচক
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।