জুমবাংলা ডেস্ক : সিলেটে ছুরিকাঘাতে স্ত্রীকে হত্যার দায়ে স্বামীর মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত। রবিবার (৬ আগস্ট) দুপুরে সিলেটের সিনিয়র দায়রা জজ আদালতের বিচারক মশিউর রহমান চৌধুরী এ রায় দেন। পাশাপাশি তাকে ১০ হাজার টাকা অর্থদণ্ডের রায় দেন। এ ছাড়া শ্বাশুড়ি ফুলতেরা বেগমকে ছুরিকাঘাতের ঘটনা প্রমাণিত হওয়া এক মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড ও এক হাজার টাকা অর্থদণ্ড অনাদায়ে আরও সাত দিনের কারাদণ্ডে আদেশ দেন আদালতেন বিচারক। নিহত আলীমা বেগমের দাদী সোনাবান বিবিকে ছুরিকাঘাতের ঘটনায় এক বছরের কারাদণ্ড এবং এক মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ডের রায় দেন।
দণ্ডপ্রাপ্ত ছিদ্দিক আহমদ (৩৩) বিয়ানীবাজার উপজেলার শেওলা আদর্শগ্রামের বাসিন্দা।
এর আগে গত ২০২১ সালের ১৩ এপ্রিল রাতে সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার তোয়াকুল ইউনিয়নের বীরকুলি গ্রামে বাবার বাড়িতে আলীমা বেগম (২৫) খুন হন। তিনি মো. ছিদ্দিক আহমদের স্ত্রী। তাদের ঘরে মাহের আহমদ নামের চার বছরের ছেলে সন্তান রয়েছে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে সিলেট জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সরকারি কৌঁসুলি মো. নিজাম উদ্দিন জানান, রায় প্রদানকালে আদালতে উপস্থিত ছিলেন মো. ছিদ্দিক আহমদ। মামলার ২১ জন সাক্ষীর মধ্যে ১৫ জন সাক্ষী আদালতে উপস্থিত হয়ে সাক্ষ্য প্রদান করেছেন। পরে আদালতের বিজ্ঞ বিচরাক এ রায় প্রদান করেছেন।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, ঘটনার প্রায় ছয় বছর আগে মো. ছিদ্দিক আহমদের সঙ্গে আলীমা বেগমের বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকে যৌতুকের দাবিতে আলীমা বেগমকে মানসিক এবং শারীরিক ভাবে নির্যাতন করতেন ছিদ্দিক আহমদ। এসব ঘটনায় একাধিকার শালিস বৈঠকে সমাধানও করে দিয়েছিলন স্থানীয়রা। তবে এরপরও ক্ষান্ত হননি ছিদ্দিক আহমদ। স্বামীর নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে আলীমা বেগম ছেলে মাহের আহমদকে নিয়ে ঘটনার প্রায় ১১ মাস আগে বাবার বাড়ি গোয়াইনঘাটের তোয়াকুল ইউনিয়নের বীরকুলি গ্রামে চলে যান। ঘটনার আগের দিন ছিদ্দিক আহমদ শ্বশুরবাড়ি গিয়ে স্ত্রীকে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার কথা বলেন।
এসময় আলীমা বেগমের বাবা মো. নিজাম উদ্দিন জামাতাকে ইফতার করে সাহরির পর মেয়েকে নিয়ে যাওয়ার কথা বলেছিলেন। শ্বশুরের ওই কথার পর ছিদ্দিক আহমদ শ্বশুরবাড়িতে থেকে যান। ওই রাতে একটি কক্ষে তাদের থাকতে দিয়েছিলেন নিজাম উদ্দিন। ১৩ এপ্রিল রাতে একটার দিকে হঠাৎ মেয়ে আলীমা বেগমের চিৎকার শুনে ওই কক্ষে গিয়ে নিজাম উদ্দিনের স্ত্রী ফুলতেরা বেগম ও তার মা সোনাবান বিবি দেখতে পান আলীমা বেগমকে একাধিকবার বুকে, পায়ে ও শরীরের স্পর্শকাতর স্থানে ছুরিকাঘাত করেছেন স্বামী ছিদ্দিক আহমদ। এসময় তারা এগিয়ে গেলে তাদেরও ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যান ছিদ্দিকুর। এতে আলীমা বেগমের মৃত্যু হয় এবং অন্য দুজন আহত হন। পরে খবর পেয়ে পুলিশ হতাহতদের উদ্ধার করে।
এ ঘটনায় আলীমা বেগমের বাবা নিজাম উদ্দিন বাদী হয়ে জামাতা ছিদ্দিক আহমদকে একমাত্র আসামী করে গোয়াইনঘাট থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলা তদন্ত শেষে ওই বছরের ২৯ জুলাই ছিদ্দিকুর রহমানের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন আদালতের বিচারক। পরে মামলার দীর্ঘ বিচার প্রক্রিয়া শেষে রোববার আদালতের বিচারক হত্যাকাণ্ডের ঘটানায় মৃত্যুদণ্ডের রায় প্রদান করেন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।