বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ডেস্ক : এখন খুব কম অফিস বা বাসা পাওয়া যাবে, যেখানে ইন্টারনেট বা নেটওয়ার্কিংয়ের জন্য ওয়াই-ফাই ডিভাইস বা নেটওয়ার্ক ব্যবহার করা হয় না। এটি এখন প্রাত্যহিক জীবনের একটি অংশ হয়ে পড়েছে। তবে অনেক সময় ওয়াই-ফাই নেটওয়ার্ক নিয়ে ঝামেলায় পড়তে হয়। জরুরি কোনো কাজ করছেন বা ফাইল পাঠাবেন অথচ নেটওয়ার্ক নেই, থাকলেও সিগন্যাল দুর্বল। তাই কাক্সিক্ষত কাজটি করতে পারছেন না। টেকনিশিয়ানকে ডাকছেন সমস্যা সমাধানের জন্য, তাকেও পাচ্ছেন না।
কিছু কৌশল রয়েছে, যেগুলো অনুসরণ করলেই ওয়াই-ফাই নেটওয়ার্কের দক্ষতা তথা এর সিগন্যালের ক্ষমতা বাড়াতে পারেন। এখানে বলে নেয়া ভালো, ওয়াই-ফাই নেটওয়ার্কের প্রাণ হচ্ছে এর সিগন্যাল। সিগন্যাল দুর্বল হয়ে গেলে পুরো নেটওয়ার্ক মুখ থুবড়ে পড়বে। বিভিন্ন কারণে আবার সিগন্যাল দুর্বল হতে পারে। এ লেখায় ওয়াই-ফাই নেটওয়ার্কের সিগন্যাল দুর্বল হওয়ার সম্ভাব্য কারণ এবং সিগন্যাল বাড়ানোর কিছুকৌশল তুলে ধরা হয়েছে।
ওয়াই-ফাই সিগন্যাল দুর্বল হওয়ার কারণ
অনেক কারণে নেটওয়ার্ক সিগন্যাল দুর্বল প্রমাণ হতে পারে। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে দূরত্ব। সিগন্যাল সর্বোচ্চ বা নির্ধারিত দূরত্বের বাইরে কোনো ডিভাইসকে অ্যাক্সেস করতে পারে না। দূরত্ব সীমার বাইরের ডিভাইসে সিগন্যাল দুর্বল বা ক্ষীণ হয়ে থাকে। ফলে এসব ডিভাইস দ্রুতগতির সংযোগ স্থাপনে ব্যর্থ হয়। এ ছাড়া ভবনের কোনার জায়গাগুলোতে সিগন্যাল দুর্বল হতে পারে। দেখা গেছে, অনেকগুলো দেয়াল ভেদ করার পর সিগন্যাল তার স্বাভাবিক শক্তি হারিয়ে ফেলে। ঘনবসতি এলাকায় বিভিন্ন ধরনের ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিক ডিভাইস থেকে নির্গত সিগন্যাল ওয়াই-ফাই সিগন্যালের জন্য বাধা হিসেবে কাজ করতে পারে। বাসায় স্থাপিত ল্যান্ডফোন সিস্টেম ও মোবাইল নেটওয়ার্ক ওয়াই-ফাই ডিভাইসের জন্য সমস্যার কারণ হতে পারে। ওয়াই-ফাই সিগন্যালকে যাতে কোনোভাবে বিঘ্নিত হতে না পারে, সে জন্য বাজারে DECT 6.0 স্ট্যান্ডার্ডের ফোন সিস্টেম পাওয়া যাচ্ছে। বাসায় এ ধরনের ফোন সিস্টেম স্থাপন করা হলে তা ওয়াই-ফাই নেটওয়ার্কের সিগন্যালকে প্রভাবিত করবে না।
একটি নিদির্ষ্ট নেওয়ার্কে ইউজার সংখ্যা বাড়ার সাথে সাথে সঙ্গত কারণেই সংযোগ গতি কমে যায়। রাউটারের ইন্টারফেসে সেটিং নির্দিষ্ট করে দিতে পারেন সর্বোচ্চ কতজন ইউজার ওয়াই-ফাই নেটওয়ার্কে প্রবেশ করতে পারবে। এ ছাড়া নেটওয়ার্ক অ্যানালাইজার দিয়ে পরীক্ষা করে দেখতে পারেন অপরিচিত কোনো ডিভাইস বা ইউজার নেটওয়ার্কে সংযুক্ত আছে কি না। এসব ক্ষেত্রে নেটওয়ার্কে শক্ত সিকিউরিটি ব্যবস্থা’ তথা পাসওয়ার্ড বলবৎ করতে হবে। এর বাইরেও আরো অনেক কারণ থাকতে পারে, যা ওয়াই-ফাই নেটওয়ার্কের দক্ষতা বা কর্মক্ষমতা কমিয়ে দিতে পারে।
সিগন্যালের ক্ষমতা বাড়ানোর কৌশল
ওয়াইফাই নেটওয়ার্ক সিগন্যালের ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য যেসব কৌশল রয়েছে, তার অন্যতম একটি হচ্ছে রাউটারের অভ্যন্তরে স্থাপিত ফার্মওয়্যার আপডেট করা। ফার্মওয়্যার হচ্ছে ডিভাইসের হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যারের মাঝামাঝি একটি অবস্থা। কমপিউটারেও ফার্মওয়্যার রয়েছে। এখন বেশিরভাগ রাউটারের ফার্মওয়্যার আপডেট করার সুযোগ রয়েছে।
রাউটার নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইটে গিয়ে সংশ্লিষ্ঠ প্যাচ ফাইল ডাউনলোড করে ফার্মওয়্যার আপডেট করতে পারেন। এ ক্ষেত্রে রাউটারের মডেল ও ভার্সন পরীক্ষা করে দেখে দিন যথাযথ সফটওয়্যারটি ইনস্টল করছেন কি না। অনেক রাউটারের ক্ষেত্রেই দেখবেন অ্যাডমিনিস্টিটর টভ ইন্টারফেসে ফার্মওয়্যার আপডেট বাটন রয়েছে। এই বাটনে কিক্ল করলেই আপডেট প্রক্রিয়া শুরু হবে। পূরনো মডেলগুলোতে ফাইল ডাউনলোড করে রাউটার আপডেট ইনস্টল করতে হবে। একটি নিদির্ষ্ট সময় পরপর রাউটার ফার্মওয়্যার আপডেট করা হলে এর কর্মসক্ষমতা বাড়বে, যা নেটওয়াকের্র জন্য সহায়ক। আপডেট প্রক্রিয়া রাউটারের সিকিউরিটি নিশ্চিত করার বিষয়েও অবদান রাখবে।
রাউটারটি কোন জায়গায় স্থাপন করবেন তার ওপর নির্ভর করবে এর কাভারেজ বা সিগন্যাল পৌঁছানোর দূরত্ব। রাউটারের ফিজিক্যাল সিকিউরিটির জন্য অনেক সময় একে কেবিনেটের ভেতরে কিংবা সংযোগ পন্যোর জন্য জানালার পাশে স্থাপন করি। তবে এ ধরনের ব্যবহার রাউটার কাভারেজের জন্য সুবিধাজনক নাও হতে পারে। তার যুক্ত বা ওয়্যার রাউটারের জন্য উন্মক্ত জায়গার প্রয়োজন হয় না। একে বাসার এক কোনায় ফেলে রাখলেও সমস্যা নেই। কিন্তু ওয়্যারলেস রাউটারের ব্যবস্থা ভিন্ন এর জন্য খোলামেলা জায়গার প্রয়োজন হয়, সামনে প্রতিতবন্ধকতা থাকলে তা সিগন্যালকে দূর্বল করে দেয়। এ ছাড়া রাউটারের আশপাশে কিংবা বাসায় ভারি ইলেক্ট্রনিক্স যন্ত্রপাতি চলমান থাকলে এবং তার থেকে শক্তিশালী সিগন্যাল বের হলে, তা রাউটারের সিগন্যালকে প্রভাবিত করে। ফলে নেটওয়্যার্ক সক্ষমতা কমে আসে।
অনেক রাউটারে আবার এক্সটার্নাল অ্যান্টেনা থাকে। অ্যান্টেনাগুলো উলম্বভাবে স্থাপন করতে হবে। এতে সিগন্যাল কাভারেজ বাড়বে। রাউটারকে মেঝেতে না রেখে উচুঁ কোনো জায়গায় রাখা যেতে পারে। দেয়ালে মাথার ওপর কাছাকাছি জায়গায় রাউটার স্থাপন করা যায় অথবা কোনো উচুঁ সেলফ বা টেবিলের ওপর রাউটারটি মজবুত ভাবে রাখতে হবে। এতে সিগন্যালের মান ভালো পাওয়া যাবে। রাউটারের ফার্মওয়্যার আপডেট করা বা রাউটারকে যথাযথ জায়গায় স্থাপন করার পাশাপাশি আরো অনেক টেকনিক রয়েছে, যা ব্যবহার করে ওয়াই-ফাই রাউটারের সিগন্যাল শক্তি বাড়ানো যায়। এসব টেকনিক নিয়ে পরে আলোচনা করা হবে। ওয়াই-ফাই নেটওয়ার্ক ব্যবহারের অপরিহার্যতার কারণে বিষয়টি আমাদের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।