আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ২০১১ সালের ১১ মার্চ। দিনটা ছিল শুক্রবার। জাপানের উত্তর-পূর্ব উপকূলীয় শহর ওকুমায় সকালটা দারুণভাবে শুরু হলেও ভয়াবহ ঝাঁকুনি অনুভূত হয় বিকেলে। রিখটার স্কেলে ৯ মাত্রার ভূমিকম্প রূপ নেয় সুনামিতে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয় ফুকুশিমা দাইচি পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র। বন্ধ হয়ে যায় এটি। বিপর্যয় এতটাই প্রবল ছিল, আজ পর্যন্ত এর আশপাশের এলাকায় মানুষের বসতির দেখা মেলে না।
এ ঘটনার পর ১২ বছর পেরিয়ে গেছে। এখনও বন্ধ আছে সেই ফুকুশিমার দাইচি। কিন্তু বন্ধ থাকা এই বিদ্যুৎকেন্দ্রই আবার ডেকে আনতে পারে বিপর্যয়। মানুষের দেহে প্রবেশ করতে পারে ক্ষতিকর তেজস্ক্রিয় রশ্মি, যার কারণে হতে পারে ক্যানসারের মতো মারণব্যাধি।
সুনামির কারণে বন্ধ হয়ে যাওয়া দাইচি থেকে এবার তেজস্ক্রিয় পানি নিষ্কাশন করতে যাচ্ছে জাপান। পরিশোধন করে প্রশান্ত মহাসাগরে ছাড়া হবে সেসব পানি।
পানির পরিমাণ শিউরে ওঠার মতো। ১৩ লাখ মেট্রিক টনের বেশি পরিশোধিত তেজস্ক্রিয় পানি সাগরে ফেলতে যাচ্ছে জাপান। এরই মধ্যে মিলেছে জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার (আইএইএ) অনুমোদন।
জাপানের সংবাদমাধ্যম জাপান টাইমস বলছে, সবকিছু ঠিক থাকলে আগস্ট থেকেই সাগরে এসব জমানো পানি ছাড়তে শুরু করবে দেশটি। তবে একেবারে সব পানি ছাড়া হবে না। পুরো প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে ৩০ বছরের বেশি সময় লাগতে পারে।
Japan plans to release wastewater from the Fukushima nuclear plant in the summer. The proposal has driven up the demand for salt in South Korea amid fears of contamination pic.twitter.com/nfGWmRwCpV
— Reuters (@Reuters) June 9, 2023
এ পানির উৎস কোথায়
২০১১ সালে আঘাত হানা রিখটার স্কেলে ৯ মাত্রার ভূমিকম্পটি এতটাই শক্তিশালী ছিল, পৃথিবীর অক্ষরেখাও এর প্রভাবে সাড়ে ৬ ইঞ্চি সরে যায়। আর এর কারণে হওয়া সুনামির ফলে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসের উচ্চতা ছিল ১৪ মিটারের বেশি। সমুদ্রের ফুঁসে ওঠা পানি ঢুকে পড়ে ফুকুশিমার দাইচির চারটি পারমাণবিক চুল্লির মধ্যে।
জাপানের রাজধানী টোকিও থেকে ২২০ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে ওকুমার দাইচি বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ৯৭ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত সেন্দাই শহরে ভূমিকম্পটি আঘাত হানে।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি বলছে, ফুকুশিমার দাইচি বিদ্যুৎকেন্দ্রেই ছিল ভূমিকম্প শনাক্ত করার যন্ত্র। সেখানে রিখটার স্কেলে ৯ মাত্রার ভূমিকম্প শনাক্তের পর স্বয়ংক্রিয়ভাবে বন্ধ হয়ে যায় কেন্দ্রটির পারমাণবিক চুল্লিগুলো।
তবে চুল্লিকে শীতল রাখার জন্য কুলিং সিস্টেম প্রতিনিয়ত চালু রাখতে হয়। এ কারণে ডিজেলচালিত জেনারেটর দিয়ে কুলিং সিস্টেম ঠিক রাখা হয়েছিল। কিন্তু সাগরের ১৪ মিটারের বেশি উঁচু ঢেউ আঘাত হানার কারণে পুরো কেন্দ্রটিই তলিয়ে যায়। এতে অকার্যকর হয়ে পড়ে জরুরি জেনারেটরগুলো।
বিপর্যয়ের আশঙ্কা দেখা দেওয়ায় দাইচির কর্তৃপক্ষ এসব জেনারেটর চালুর চেষ্টা করতে থাকেন। কিন্তু এ চেষ্টার মধ্যেই পানির কারণে চুল্লির ফুয়েল প্রচণ্ড গরম হয়ে যায়। ফুয়েল উত্তপ্ত হওয়ায় গলে যায় চুল্লির মূল কেন্দ্রের (কোর) একটি অংশ। আর তাতেই পরপর বেশ কয়েকটি রাসায়নিক বিস্ফোরণ ঘটে ফুকুশিমার দাইচি বিদ্যুৎকেন্দ্রে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পুরো ভবন। এসব বিস্ফোরণের কারণে তেজস্ক্রিয় পদার্থগুলো চুল্লি থেকে বেরিয়ে সাগরের পানিতে মিশতে শুরু করে। মিশে যায় আশপাশের এলাকার বাতাসে।
সুনামি আসার আগে সতর্ক হওয়ার জন্য মাত্র ১০ মিনিট সময় পেয়েছিলেন স্থানীয়রা। দ্রুত তাদের সরিয়ে নেওয়া হয়। সব মিলিয়ে কমপক্ষে পাঁচ লাখ মানুষকে বাড়িঘর ছাড়তে হয়েছিল।
সরকারি হিসাব বলছে, এ ঘটনায় মাত্র একজন মারা গেছেন। তবে মৃত্যু সংখ্যা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। মার্কিন সংবাদমাধ্যম ওয়াশিংটন পোস্ট বলছে, ভূমিকম্প, সুনামি ও পরমাণু কেন্দ্র- এ তিন বিপর্যয় মিলিয়ে আগে-পরে মোট নিহত হয়েছিল ১৬ হাজার মানুষ।
পানি ছাড়া জরুরি কেন
২০১১ সালের সেসব রাসায়নিক বিস্ফোরণ থামাতে এবং চুল্লির উত্তপ্ত জ্বালানি শীতল করতে বাইরে থেকে ভেতরে পানি দেওয়া হতে থাকে। এ ছাড়া এত বছরে বৃষ্টির পানিও প্রবেশ করেছে এর ভেতরে। আর তাতে তেজস্ক্রিয় পানির পরিমাণ বছর বছর বাড়ছেই।
মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন বলছে, এভাবে বেড়ে যাওয়া পানি আলাদা করে রাখার প্রয়োজন দেখা দেয়। সেই প্রয়োজনীয়তা থেকেই ট্যাংকে পানি জমা করা হয়। পারমাণবিক চুল্লির রাসায়নিক বিক্রিয়া চেইন রিয়েকশন হওয়ায় পানি বাড়ছেই। এ কারণে একের পর এক ট্যাংকও বাড়ছে।
জাপানের রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বৈদ্যুতিক প্রতিষ্ঠান টোকিও ইলেকট্রিক পাওয়ার কোম্পানি (টেপকো) ট্যাংক বানানো ও এসব পানি জমা করার কাজ পেয়েছে। এ পর্যন্ত এক হাজারের বেশি পানির ট্যাংক বানাতে হয়েছে তাদের।
এত দিনে এসব তেজস্ক্রিয় পানির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৩ লাখ মেট্রিক টনে। এ পরিমাণ পানি দিয়ে অলিম্পিকের ৫০০ সুইমিং পুল ভরা সম্ভব।
এভাবে আর কত ট্যাংক বানানো যায়! এ কারণে জাপানি প্রতিষ্ঠানটি বিকল্প এক উপায় বের করেছে। আর তা হলো-পানি থেকে ক্ষতিকর উপাদানগুলো সরিয়ে তা সাগরে ফেলে দেওয়া। এতে জায়গাও বাঁচবে, পানিও কমে যাবে। এভাবে একসময় সব তেজস্ক্রিয় পানিই পরিশোধন করা সম্ভব হবে।
পানি ছাড়ার প্রক্রিয়া কেমন হবে
জমাকৃত পানি ছাড়ার আগে বিশেষ প্রক্রিয়ায় এর মধ্য থেকে সরিয়ে নেওয়া হবে বেশির ভাগ তেজস্ক্রিয় উপাদান। তবে থেকে যাবে একটি ক্ষতিকর পদার্থ। আর সেটি হলো ট্রিটিয়াম। ক্ষতিকর উপাদান অপসারণের পর সেই পানি রাখা হবে আরেকটি ট্যাংকে। পরীক্ষা করে দেখা হবে, ক্ষতিকর উপাদান কী পরিমাণ অবশিষ্ট আছে। এর পর আবার একই প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হবে।
টেপকোর বরাতে সিএনএন বলছে, নিরাপদ মাত্রা না আসা পর্যন্ত এভাবে চলতেই থাকবে। এর পর এমন মাত্রার মিশ্রণ বানানো হবে, যাতে প্রতি লিটারে ট্রিটিয়াম থাকবে দেড় হাজার বেকেরেল। বেকেরেল হচ্ছে তেজস্ক্রিয়তার একক। তেজস্ক্রিয় পদার্থের প্রতি সেকেন্ডে একটি নিউক্লিয়াসের ক্ষয় হওয়ার সক্রিয়তাকে এক বেকেরেল হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা হয়।
জাপানের কর্তৃপক্ষ বলছে, ট্রিটিয়ামের মাত্রা হবে খুবই কম। সাগরে ছেড়ে দেওয়া পানিতে এমন মাত্রায় ট্রিটিয়াম থাকবে, যা মানব শরীর কিংবা সামুদ্রিক প্রাণীর জন্য ক্ষতিকর নয়।
ট্রিটিয়ামের মাত্রা বোঝাতে আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের হিসাব দিয়েছে জাপানের সংশ্লিষ্টরা। প্রতি লিটার পানিতে ১০ হাজার বেকেরেল ট্রিটিয়াম থাকার অনুমোদন রয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও)। তবে যুক্তরাষ্ট্রে এ নিয়ম বেশ কঠোর। দেশটিতে প্রতি লিটারে ট্রিটিয়াম থাকার অনুমতি আছে ৭৪০ বেকেরেল।
আগেই জাপানে ট্রিটিয়াম নিষ্কাশনের মাত্রা ঠিক করা ছিল। দেশটির নীতি অনুযায়ী, প্রতি লিটার পানিতে ৬০ হাজার বেকেরেল ট্রিটিয়াম থাকলে সেটি নিরাপদ।
দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট বলছে, নিষ্কাশনের পর এসব পানি একটি টানেলের মধ্য দিয়ে প্রশান্ত মহাসাগরে ফেলা হবে। সাগরের জাপান উপকূলে ৩ হাজার ২৮০ ফুট গভীরে বানানো হয়েছে এই টানেল। সাধারণত সাগরের যেসব এলাকায় মাছ ধরা হয় না, সেসব এলাকায় এসব পানি ফেলা হবে।
ট্রিটিয়াম কী?
হাইড্রোজেনের একটি আইসোটোপ হচ্ছে ট্রিটিয়াম। এতে বাড়তি দুটি নিউট্রন থাকে। আর সে কারণে ট্রিটিয়াম থেকে তেজস্ক্রিয় রশ্মি বিকিরণ হয়। হাইড্রোজেনের মতোই এটি অক্সিজেনের সঙ্গে বিক্রিয়া করে পানি তৈরি করতে পারে। এই পানি দেখতে সাধারণ পানির মতোই। খালি চোখে একে সাধারণ পানি থেকে আলাদা করা যায় না।
সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান বলছে, বিভিন্নভাবে মানুষের দেহে প্রতিদিন কিছু পরিমাণ ট্রিটিয়াম প্রবেশ করছে। কারণ, ট্যাপ দিয়ে যে পানি বের হয় তাতে এই ট্রিটিয়াম রয়েছে। এমনকি বৃষ্টির পানিতেও রয়েছে হাইড্রোজেনের এই আইসোটোপ। আর বাতাসের জলীয় বাষ্পে তো রয়েছেই।
অস্ট্রেলিয়ান ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির অনারারি সহযোগী অধ্যাপক ও পরমাণু বিশেষজ্ঞ টনি আরউইন বলছেন, এরই মধ্যে বিশ্বের বিভিন্ন পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বিপুল পরিমাণ ট্রিটিয়াম সাগরে ফেলা হয়েছে। সাগরে ট্রিটিয়ামের পানি ফেলা দেশের তালিকায় রয়েছে চীন, দক্ষিণ কোরিয়া, তাইওয়ান, ফ্রান্স ও যুক্তরাষ্ট্র।
জাপানের পানিতে ট্রিটিয়ামের পরিমাণ যত থাকবে, অন্যান্য দেশের ফেলা এসব পানিতে রয়েছে তার অনেক বেশি।
যা বলছে আইএইএ
ফুকুশিমার পানি নিষ্কাশনের ব্যাপারে নিরপেক্ষ তদন্ত করতে ২০২১ সালে জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থাকে (আইএইএ) অনুরোধ করে জাপান। বিষয়টি দুই বছর পর্যালোচনা করে সংস্থাটি।
পর্যালোচনার পর সম্প্রতি আইএইএ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। তাতে বলা হয়, তেজস্ক্রিয় পানি নিষ্কাশনের জন্য জাপান যে পরিকল্পনা করেছে, তা আন্তর্জাতিক মানদণ্ড মেনেই করা। এতে পরিবেশ কিংবা মানুষের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব পড়বে না।
জাতিসংঘের সংস্থাটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে, এখন থেকে জাপানে তারা একটি কার্যালয় চালু করবে। যে সাইটে পানি নিষ্কাশন করা হবে, এর কাছেই হবে সেই কার্যালয়। যতদিন এ কার্যক্রম চলবে, ততদিন পর্যবেক্ষণ করা হবে। নিয়মিত জানাবে আপডেট।
জাতিসংঘের পারমাণবিক পর্যবেক্ষক সংস্থাটির প্রধান রাফায়েল গ্রসি সম্প্রতি টোকিওতে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘পানি সাগরে ছাড়া নিয়ে যে সংশয় আর সন্দেহ রয়েছে, আমি এর ম্যাজিক সমাধান দিতে পারব না। তবে আমরা একটা কাজ করতে পারি, সেখানে দশকের পর দশক থেকে দেখতে পারি।’
সমালোচনার ঝড়
স্বাভাবিকভাবেই মনে হচ্ছে, সবকিছুই তো ঠিক আছে। কারও ক্ষতি তো হওয়ার কথা নয়। কিন্তু সংকট যখন তেজস্ক্রিয় পদার্থ নিয়ে, উদ্বেগ তো তখন থাকবেই। কেননা, চেরনোবিলের বিপর্যয়ের কথা বিশ্বাবাসী কখনো ভুলবে না।
আর ঘটনা যখন জাপানকে ঘিরে, তখন হিরোশিমা আর নাগাসাকির সেই ভয়াবহতা তো চোখের সামনে ভাসবেই। এবার তাই ফুকুশিমার পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে পানি নিষ্কাশনের এই প্রক্রিয়ার সমালোচনা হচ্ছে ব্যাপক।
বিশ্বের প্রথম সারির কয়েকজন বিজ্ঞানী পরামর্শ দিয়েছেন, এখনই পানি নিষ্কাশন কার্যক্রম শুরু না করতে। এ নিয়ে আরও বিস্তর গবেষণা দরকার। এমনকি এও বলা হচ্ছে, এ পরিকল্পনা স্বচ্ছভাবে পরিচালনা করছে না জাপান ও টেপকো।
কারা করছেন এসব সমালোচনা?
দূরে পরে যাওয়া যাবে। আগে জাপানের কথাই বলা যাক। সাগরে মাছ ধরার সঙ্গে যুক্ত জাপানের অনেক ফিশারিজ অ্যাসোসিয়েশন এ ব্যাপারে উদ্বেগ প্রকাশ করছে।
ফুকুশিমার ইওয়াকি শহরের মেয়র হিরোইউকি উচিদা বলেন, ‘নিরাপত্তা ও আশ্বাস এক জিনিস নয়। প্রতিবেদনে শুধু নিরাপত্তার কথাই বলা হয়েছে, আশ্বাসের কোনো বালাই নেই। কিন্তু আমাদের নাগরিক ও জেলেরা এখনো বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগেই আছে।’
জাপানের এ সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছে চীন। এমনকি জাতিসংঘের পারমাণবিক পর্যবেক্ষক সংস্থা আইএইএর পর্যবেক্ষণ নিয়েও সন্দিহান বলে জানিয়েছে দেশটি। বেইজিং বলছে, বিকল্প ভাবনা না ভেবেই জাপানের পক্ষে মত দিয়েছে আইএইএ। এ কারণে জাপানের অনেক খাদ্যপণ্য আমদানিতেও নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে চীন।
#DYK? The #Fukushima Daiichi treated water is filtered to remove almost all radionuclides but cannot remove #tritium.
🇯🇵 decided to dilute it until an extremely low level, 1/7 of @WHO standards for drinking water.
Click here to read our #FAQs on this https://t.co/X9QyDwZFtw pic.twitter.com/Sc9ZftDRBg
— IAEA – International Atomic Energy Agency ⚛️ (@iaeaorg) July 5, 2023
দক্ষিণ কোরিয়ার সুর অবশ্য নরম। দেশটির সরকার জাপানকে সমর্থন দিয়েছে। কিন্তু দক্ষিণ কোরিয়াবাসী সরকারের সুরে সুর মেলায়নি। ফুকুশিমার পানি নিষ্কাশনের প্রক্রিয়ার বিরোধিতা করেছে। শুধু বিরোধিতা করেই ক্ষান্ত হয়নি, অনেকবার নেমেছে রাস্তায়ও।
ঝুঁকি আসলে কেমন
কানাডার পরমাণু নিরাপত্তা কমিশন বলছে, মানুষের চামড়ায় প্রভাব ফেলার মতো এতটা মারাত্মক নয় ট্রিটিয়াম। তবে বেশি পরিমাণ শরীরে প্রবেশ করলে ক্যানসারের ঝুঁকি তৈরি হয়। যুক্তরাষ্ট্রের পরমাণু নজরদারি কমিশন বলছে, যেকোনো ধরনের তেজস্ক্রিয়তা স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। ফুকুশিমার পানি নিষ্কাশনে প্রতিদিন মানুষের দেহে এই ট্রিটিয়াম প্রবেশ করবে, এটি নিশ্চিত।
পুরো প্রক্রিয়ার যাচাইকারীরা কী বলছেন?
যারা এ প্রক্রিয়ার পুরোটা যাচাই করেছেন, তাঁদের একজন হলেন হাওয়াই বিশ্ববিদ্যালয়ের সামুদ্রিক গবেষণা কার্যক্রমের প্রধান রবার্ট এইচ রিচমন্ড। তিনি বলেন, ট্রিটিয়াম সাগরে পড়বে, এটা সত্যি। জলবায়ু বিপর্যয়ের কারণে এমনিতেই সমুদ্র আছে ঝুঁকিতে। এখন ঝুঁকি তো থেকেই যাবে। এখন এটি আবর্জনা রাখার জায়গা হিসেবেই ব্যবহার করা হচ্ছে।
চীনের সংবাদমাধ্যম সিজিটিএনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, একবারের বিপর্যয়েই এখনো আতঙ্কের নাম হয়ে আছে ফুকুশিমা। আবারও কি বিপর্যয় আসবে? এবার সত্যিই বিপর্যয় শুরু হলে শুধু জাপানের জেলেরাই ক্ষতিগ্রস্ত হবে, এমনটি নয়। প্রতিবেশী দেশগুলোও রেহাই পাবে না। কিন্তু জাপান তাদের সিদ্ধান্তে অনড়।
ট্রিটিয়ামের কারণে মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হলেও সেটি সঙ্গে সঙ্গে বোঝা যাবে-এমন নয়। ৩০ বছর চলবে পানি নিষ্কাশন কার্যক্রম। আর এর মধ্যে ক্যানসার হয়ে কারা মারা গেছে, আর এ ট্রিটিয়ামের কারণেই কি ক্যানসার হলো কিনা- এসব কি জাতিসংঘের প্রতিনিধি দল যাচাই করবে?
এমন আরও অনেক প্রশ্ন এখনও খোলাসা করেনি জাপান। এ কারণে জাপান ছাড়াও বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রায়ই দেখা যাচ্ছে প্রতিবাদ। প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে, জাপান থামবে না। আর সেটি হলে বিপর্যয়ের শঙ্কা তো থাকছেই।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।