আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ইরান-যুক্তরাষ্ট্র বৈরিতার ইতিহাস বেশ পুরানো। ১৯৭৯ সালে আয়াতুল্লাহ আলি খামেনিপন্থি ছাত্ররা ৫২ মার্কিন নাগরিককে ৪০০ দিনের বেশি সময় জিম্মি রাখে। এর জেরে প্রথমবারের মতো ইরানের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্র।
২০২০ সালে ইরাকে মার্কিন ড্রোন হামলায় ইরানের সামরিক কমান্ডার কাসেম সোলাইমানিকে হত্যার পর দুই দেশের সম্পর্ক আবারও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। সবশেষ গাজায় ইসরাইলের আগ্রাসন মুখোমুখি অবস্থানে দাঁড় করিয়েছে ইরান-যুক্তরাষ্ট্রকে। আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের শঙ্কা, ভবিষ্যতে দুই দেশের মধ্যকার চলমান প্রক্সি লড়াই সরাসরি যুদ্ধে রূপ নিতে পারে।
ইরান-যুক্তরাষ্ট্রের বৈরিতার শুরু ১৯৫৩ সালে। সে সময় ইরানের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ মোসাদ্দেক তেল সম্পদকে সরকারিকরণ করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু এক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে তিনি ক্ষমতাচ্যুত হন। এরপর যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনে মোহাম্মদ রেজা শাহ ইরানের ক্ষমতা গ্রহণ করেন। এমন পরিস্থিতিতে তার প্রধান প্রতিপক্ষ হয়ে ওঠেন ইসলামপন্থি নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি।
১৯৭৯ সালে ইরানের ওপর প্রথমবারের মতো নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্র। ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ খামেনিপন্থি ছাত্ররা তেহরানে মার্কিন দূতাবাসে ঢুকে পড়ে। ৫২ মার্কিনিকে ৪৪৪ দিন জিম্মি করে রাখে তারা। এই ঘটনার জেরে প্রথমবারের মতো ইরানের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্র। মূলত তখন থেকেই যুক্তরাষ্ট্র-ইরান চরম বৈরিতার শুরু।
১৯৮০ সালে ইরানে হামলার মাধ্যমে যুদ্ধ শুরু করে ইরাক। সেই যুদ্ধে ইরাককে নানাভাবে সাহায্য করে যুক্তরাষ্ট্র। এতে আরও তিক্ত হয় তেহরান-ওয়াশিংটন সম্পর্ক। টানা আট বছর পর যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হন খামেনি। ইরান ইঙ্গিত দেয়, যুক্তরাষ্ট্র এবং ইসরাইল তাদের প্রধান শত্রু।
২০০০ সালের শুরুতে যুক্তরাষ্ট্রের নজর পড়ে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির ওপর। সেসময় আন্তর্জাতিক চাপ বাড়ায় ইরানের তেল রফতানি ও অর্থনীতিতে ব্যাপক প্রভাব পড়ে। এর জেরে ২০১৫ সালে একটি চুক্তির মাধ্যমে ইরান তাদের পরমাণু কার্যক্রম কমিয়ে আনতে রাজি হয়। আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের পরিদর্শনের অনুমতি দেয়া হয়। তবে শর্ত ছিল ইরানের ওপর থেকে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়া হবে।
কিন্তু, তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ২০১৮ সালে এ চুক্তি থেকে সরে দাঁড়ান। তিনি বলেন, পরমাণু কর্মসূচি কমিয়ে আনা ও ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি স্থগিত করতে ইরানকে একটি নতুন চুক্তিতে বাধ্য করবেন। তবে ইরান তার এ বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করে ঘোষণা দেয়, তারা আর ২০১৫ সালের পরমাণু চুক্তির বিধিনিষেধ মানবে না।
২০২০ সালে ইরাকে ড্রোন হামলায় ইরানের সর্বোচ্চ ক্ষমতাধর সামরিক কমান্ডার জেনারেল কাসেম সোলাইমানিকে হত্যা করে যুক্তরাষ্ট্র। এতে চরম পর্যায়ে পৌঁছায় ইরান-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক। সোলাইমানি হত্যার কঠিন প্রতিশোধ নেয়ার ঘোষণা দেয় তেহরান। ইরাকে অবস্থিত মার্কিন সামরিক ঘাঁটি আইন আল-আসাদসহ দু’টি ঘাঁটিতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় তারা। এতে ১২০ মার্কিন সেনা নিহতের দাবি করে ইরানের বিপ্লবী গার্ডস বাহিনী।
গাজায় ইসরাইলের যুদ্ধ শুরুর পর থেকেই মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা বেড়েছে। এর প্রতিক্রিয়ায় ইরান সমর্থিত বিভিন্ন সশস্ত্র গোষ্ঠী যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইলের বিভিন্ন স্থাপনায় হামলায় চালিয়ে আসছে। পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর ঘাঁটি লক্ষ্য করে বিমান হামলার মতো পদক্ষেপ নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা।
সবশেষ জর্ডানে মার্কিন সামরিক ঘাঁটিতে ড্রোন হামলায় তিন সেনাসদস্য নিহত হওয়ার পর পরিস্থিতি আরও জটিল আকার ধারণ করেছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ইরানের বিরুদ্ধে কোনো বড় আকারের যুদ্ধের সম্ভাবনা নাকচ করে দিলেও অদূর ভবিষ্যতে দুই দেশের মধ্যকার চলমান প্রক্সি লড়াই সরাসরি যুদ্ধে রূপ নিতে পারে বলে মনে করছেন আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।