স্পোর্টস ডেস্ক : রেকর্ড স্পর্শ করা হলোনা নোভাক জকোভিচের। রোববার হাই-ভোল্টেজ পাঁচ সেটের ফাইনালে সার্বিয়ান এই তারকাকে ফাইনালে পরাজিত করে প্রথমবারের মত উইম্বলডনের শিরোপা ঘরে তুলেছেন বিশ্বের এক নম্বর খেলোয়াড় কার্লোস আলকারাজ। ফাইনালে জিততে পারলে জকোভিচ ২৪তম গ্র্যান্ড স্ল্যাম জয়ের পাশাপাশি অষ্টম উইম্বলডন শিরোপা জয়ের রেকর্ড স্পর্শ করতে পারতেন।
প্রথম সেটে পরাজয়ের পরেও দারুনভাবে ঘুরে দাঁড়িয়ে স্প্যানিশ তরুণ আলকারাজ চার ঘন্টা ৪২ মিনিটের লড়াইয়ে জকোভিচকে ১-৬, ৭-৬ (৮/৬), ৬-১, ৩-৬, ৬-৪ গেমে পরাজিত করে শিরোপা নিশ্চিত করেন।
গত বছর ইউএস ওপেন বিজয়ী ২০ বছর বয়সী এই স্প্যানিয়ার্ডের ক্যারিয়ারের এটি দ্বিতীয় গ্র্যান্ড স্ল্যাম শিরোপা। উইম্বলডনের ইতিহাসে তৃতীয় কনিষ্ঠ খেলোয়াড় হিসেবে আলকারাজ শিরোপা জয় করলেন।
এই ফলাফল একইসাথে নতুন প্রজন্মের হাতে পরবর্তী টেনিস যুগের সূচনার ইঙ্গিতও দিয়ে দিয়েছে। ৩৬ বছর বয়সী জকোভিচ এতদিন পর্যন্ত ‘বিগ থ্রি’ প্রতিনিধিত্ব করে আসছিলেন। জকোভিচের আগে রজার ফেদেরার গত বছর অবসরের ঘোষনা দিয়েছেন, আরেক তারকা রাফায়েল নাদাল ইনজুরিতে রয়েছেন। ধারনা করা হচ্ছে নাদাল হয়তো আর কোর্টে ফিরতে পারবেন না।
অস্ট্রেলিয়ান ওপেন ও ফ্রেঞ্চ ওপেন বিজয়ী জকোভিচ ফেদেরারের রেকর্ড অষ্টম উইম্বলডন ও মার্গারেট কোর্টের সর্বকালের সর্বোচ্চ ২৪তম গ্র্যান্ড স্ল্যাম শিরোপা থেকে একটি শিরোপা দুরে রয়েছেন। একইসাথে অল ইংল্যান্ড ক্লাবে সবচেয়ে বেশী বয়সী খেলোয়াড় হিসেবে ট্রফি জয়ের হাতছানিও ছিল জকোর সামনে।
২০০৮ সালে জকোভিচ যখন অস্ট্রেলিয়ান ওপেন জয়ের মাধ্যমে ক্যারিয়ারের প্রথম শিরোপা জয় করেছিলেন তখন আলকারাজ তার পঞ্চম জন্মদিনের থেকে তিন মাস দুরে ছিলেন। ১৯৬৬ সালে ম্যানুয়েল সান্তানা ও ২০০৮ এবং ২০১০ সালে নাদালের পর তৃতীয় স্প্যানিশ হিসেবে উইম্বলডনের শিরোপা জেতা আলকারাজ কাল ট্রফি হাতে জকোভিচকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন, ‘তুমি আমাকে অনেক অনুপ্রানীত করেছো।
তোমাকে দেখেই আমি টেনিস খেলা শুরু করেছি। আমি যখন জন্মগ্রহণ করি তখন তুমি টুর্নামেন্ট জয় করা শুরু করে দিয়েছো। বিষয়টি সত্যিই চমৎকার। আমি এখন ঘাসের কোর্টের প্রেমে পড়ে গেছি। এই ধরনের সার্ফেসে খেলতে অনেকটাই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছি।’ সার্বিয়ান তারকার বিরুদ্ধে আলকারাজ ৬৬টি উইনিং শট খেলেছেন।
স্প্যানিশ সাবেক নাম্বার ওয়ান নাদাল ম্যাচ শেষের সাথে সাথে টুইটারে আলকারাজকে শুভেচ্ছা জানাতে ভুল করেননি। তরুণ আলকারাজকে মুহূর্তটি উপভোগের পরামর্শ দিয়ে নাদাল স্প্যানিশ টেনিসে দুর্দান্ত আনন্দের উপলক্ষ্য উপহার দেবার জন্য প্রশংসা ও ধন্যবাদ জানিয়েছেন।
এনিয়ে নবম উইম্বলডন ও ৩৫তম মেজর ফাইনাল খেলতে নেমেছিলেন জকোভিচ। অন্যদিকে ইউএস ওপেনের শিরোপার পর এটা ছিল আলকারাজের দ্বিতীয় গ্র্যান্ড স্ল্যাম ফাইনাল।
এনিয়ে টানা পঞ্চম উইম্বলডন শিরোপার লক্ষ্যে কোর্টে নামা জকোভিচ বলেছেন, ‘যোগ্য খেলোয়াড় হিসেবেই আলকারাজ এই শিরোপা জয় করেছে, এটা তার প্রাপ্য ছিল। ম্যাচের শেষটা সে যেভাবে করেছে তাতেই সবকিছুর প্রমান পাওয়া যায়। বড় মঞ্চে খেলতে এসে সেভাবেই আলকারাজ সবকিছুকে মানিয়ে নিয়েছে, যা সত্যিই অসাধারন। আমার দিক থেকে বলতে হয়, এভাবে ম্যাচে পরাজিত হওয়াটা মেনে নেয়া যায়না। যখন সব আবেগ শেষ হবে তখন হয়তো আরো ভালভাবে সব বুঝতে পারবো।’
উইম্বলডনে জকোভিচ টানা ৩৪ ম্যাচে জয়ের পথে ছিলেন। ২০১৩ সালের পর থেকে সেন্টার কোর্টে কখনো পরাজিত হননি।
জুনে ফ্রেঞ্চ ওপেনের সেমিফাইনালে ইনজুরির কারনে জকোভিচের বিরুদ্ধে পেরে উঠেননি আলকারাজ। প্রথম সেটের শুরুতেই ব্রেক পয়েন্ট পেয়ে যান জকোভিচ।
আধিপত্য দেখিয়ে পরপর দুটি ব্রেক পয়েন্ট পেয়ে ৫-০ ব্যবধানে এগিয়ে যান। প্রথম সেটের সেই আধিপত্য দ্বিতীয় সেটে আর ছিলনা। ২-১ ব্যবধানে লিড নিয়ে আলকারাজ পরের সেট জয়ের ইঙ্গিত দেন শুরুতেই। চতুর্থ গেমে ২৯টি শটের র্যালিতে জয়ী হয়ে জকোভিচ ব্রেক পয়েন্ট রক্ষা করেন। ৮৫ মিনিটের ম্যারাথন সেটটিতে শেষ পর্যন্ত জকোভিচ টাই ব্রেকে পরাজিত হলে আলকারাজ সমতা ফেরান।
তৃতীয় সেটের প্রথম গেমেই আলকারাজ ব্রেক পান। আবারো ২৬ মিনিটের লম্বা পঞ্চম গেমটি জিতে নেন। ১৩ বার ডিউসের গেমটিতে জকোভিচ ছয়বার ব্রেক পয়েন্ট রক্ষা করেন। কিন্তু সপ্তম গেমে আর পেরে উঠেননি। দুর্দান্ত সার্ভিস দিয়ে মাত্র দুই মিনিটে গেমটি জয় করে বর্তমান চ্যাম্পিয়নের বিরুদ্ধে ২-১ সেটে এগিয়ে যান আলকারাজ।
চতুর্থ সেটে জকোভিচ দুইবার ব্রেক পয়েন্ট নিশ্চিত করেন। আলকারাজের সপ্তম ডাবল ফল্টের সুবাদে সেটটি জয় করে সমতায় ফিরেন জকোভিচ। কিন্তু পঞ্চম সেটে জকোভিচ ২-০ ব্যবধানে এগিয়ে যাবার সুবর্ন সুযোগ হাতছাড়া করেন । সেই সুযোগে আলকারাজ ২-১ ব্যবধানে এগিয়ে যান। পরের গেমেও জয়ী হওয়ায় আলকারাজের জন্য চ্যাম্পিয়নশীপ সময়ের ব্যপার হয়ে দাঁড়ায়। শেষ পর্যন্ত সেই ব্রেক পয়েন্ট আর কভার করতে পারেননি জকোভিচ।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।