মোজাম্মেল হক চঞ্চল : কমনওয়েলথ গেমস কভার করতে বার্মিংহাম যাচ্ছি। ঢাকা ছাড়ার আগে সরকারের এক সাবেক অতিরিক্ত সচিবের টেলিফোন, ‘আমার কথা ভুইলেন না, ডাকটিকিট চাই আমার।’ বন্ধু ইশতিয়াক বলেছিল, ‘দোস্ত কোটপিন কিন্তু আনবি।’ ক্রীড়া সাংবাদিকতার জীবনে যতবারই বিদেশ গিয়েছি ইশতিয়াককে কোটপিন এনে দিতে হয়েছে। আর সদ্য সাবেক অতিরিক্ত সচিবকে ডাকটিকিট।
ছোটবেলা আমি আর ইশতিয়াক একসঙ্গে স্ট্যাম্প সংগ্রহ করতাম। কলেজের গণ্ডি পেরোনোর আগেই আমার শখ মিটে যায়। আমার স্ট্যাম্পগুলো দিয়ে ইশতিয়াক ওর সংগ্রহশালা সমৃদ্ধ করেছে। এখনো নেশা কাটেনি। মাঝেমধ্যে ওর বউ বিরক্ত হয়ে বলে, ‘আপনার বন্ধুকে বলেন এসব জঞ্জাল পরিষ্কার করতে’, ইশতিয়াক টিকিটের চেয়ে এখন কোটপিনের দিকেই বেশি ঝুঁকেছে।
গেমসে যে শুধু অ্যাথলেটরাই দৌড়ান তা কিন্তু নয়। আরেক দলও দৌড়াচ্ছেন অবিরাম। তারা ডাকটিকিট, বিভিন্ন দেশের মুদ্র, পিনসহ গেমসের বিভিন্ন স্যুভেনির সংগ্রাহক। কাক্সিক্ষত কোটপিন, স্ট্যাম্প পেলে তাদের হাসি বলে দেয়, যেন পদক জিতেছেন।
বার্মিংহাম আসার পর বিভিন্ন ভেন্যু, গেমস ভিলেজসহ বেশ কয়েকটি জায়গায় সংগ্রাহকদের খুঁজছি। অন্যান্য গেমসে তাদের দেখা যেত পসরা সাজিয়ে বসতেন। কিন্তু এখানে কোথাও খুঁজে তাদের পেলাম না। মনটা খারাপ। জানতে পারলাম অতিরিক্ত নিরাপত্তার জন্য বাইরের কাউকে ভেন্যুর আশপাশে বসতে দেওয়া হচ্ছে না। সেইসঙ্গে করোনার জন্যও এবার নাকি তাদের দেখা পাওয়া যাচ্ছে না।
মঙ্গলবার আলেকজান্ডার স্টেডিয়ামে দেখা পেলাম স্কটিশ জিম টানেলকে। বয়সের ভারে ন্যুব্জ। এই ভদ্রলোকের পেশা কিংবা নেশা দুটোই হলো বিভিন্ন গেমসের স্যুভেনির সংগ্রহ। ম্যানচেস্টার কমনওয়েলথ গেমসে দেখা পেয়েছিলাম। তারপর থেকে প্রত্যেক কমনওয়েলথ গেমসেই জিমের সঙ্গে দেখা হয়। একটা সখ্যও গড়ে উঠেছে। বেইজিং অলিম্পিকেও ছিলেন জিম। অন্যান্য গেমসের সময় দেখতাম রীতিমতো পসরা সাজিয়ে স্যুভেনির বিনিময় করতেন। কিন্তু এবার আর তেমনটা করেননি। কাঁধে একটা ছোটখাটো ঝোলা। বোঝা গেল বার্মিংহামে তেমন সুবিধা হচ্ছে না।
জিম ছোটবেলা থেকেই স্ট্যাম্প, পিন সংগ্রহ করতেন। অনেক গেমসে গিয়েছেন। এসব কাজে আগে তার স্ত্রীর সহযোগিতা পেতেন। এখন দুজনেরই বয়স ৭৫ ছুঁই ছুঁই। তার নাতি এখন দাদাকে সহায়তা করেন।
কথা প্রসঙ্গে জানালেন, তিনিও এবার কোটপিন সংগ্রহ করতে পারেননি। আমি চাইলে তার সঙ্গে গেমস ভিলেজে যেতে পারি।
সেখানে বিভিন্ন দেশের অ্যাথলেটদের কাছ থেকে পিন বিনিময় করবেন। সানন্দে রাজি হলাম। আমি আর জিম ভিলেজে যাই। কিন্তু ভিলেজেও কাউকে পেলাম না পিন বিনিময় করব। একটু অপেক্ষা করতেই কিছু আফ্রিকান ক্রীড়াবিদ পেলাম। দেখলাম গলায় ঝোলানো অ্যাক্রিডিটেশন কার্ডের ফিতার সঙ্গে কিছু পিন আটকানো। সমস্যা হলো আমার কাছে বাংলাদেশ থেকে আনা যতগুলো কোটপিন ছিল, তা বিলিয়ে দিয়েছিলাম আগেই।
কী দিয়ে পিন বিনিময় করব? হঠাৎ বুদ্ধি এলো, দেশ থেকে আসার সময় দুই টাকার নোটের ৩ হাজার টাকা নিয়ে এসেছিলাম। বিশ্বের সবচেয়ে সুন্দর নোটের পুরস্কার পাওয়া এই নোট এর আগে বিভিন্ন গেমসে দারুণ কাজে এসেছিল। প্রবাসী বাংলাদেশি বাচ্চাদের বাইরেও নানাজনকে উপহার দিতাম। বার্মিংহামেও সমানে বিলাচ্ছি দুই টাকার নোট। সুন্দর স্যুভেনির পেয়ে বড্ড খুশি ভলান্টিয়ার ও বিদেশিরা।
সেই দুই টাকার নোট দিয়ে বিদেশি অ্যাথলেটদের সঙ্গে পিন বিনিময় করলাম। তবে একটা পিনের বিপরীতে ২টা করে নোট দিতে হয়েছে। অ্যাথলেটরা এখন আমার দিকে ছুটছে। জিমের সঙ্গে কেউ পিন বিনিময় করছে না। এরই মধ্যে অন্যান্য দেশের আরও কয়েকজন যোগ হয়েছে। সবাই চায় দুই টাকার নোট। তাদের উৎসাহের সঙ্গে আমার সংগ্রহ বাড়ছে। জিমের মন খারাপ। অভয় দিলাম, বন্ধু চিন্তা করো না। তোমাকেও ভাগ দেব। জিমের হাতে কিছু দুই টাকা ধরিয়ে দিলাম, সে-ও পিন সংগ্রহ করায় নেমে গেল। প্রত্যাশার চেয়েও বেশি পিন পেলাম দুজনে। দুই টাকার প্রশংসা করল জিম। আমার কাছ থেকে কিছু চেয়ে নিল। মনে মনে ধন্যবাদ দিলাম বন্ধু ইমরানুলকে। এনসিসি ব্যাংকের এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট ইমরানুল এয়ারপোর্টে আসার ঠিক আগ মুহূর্তে টাকাগুলো পাঠিয়েছিল। সেই টাকাতেই যেন জয় করলাম বার্মিংহাম।
এমন সময় ফোন পেলাম। মেইন প্রেস সেন্টার থেকে জলির ফোন। বার্মিংহাম বাংলা টিভি আমার সাক্ষাৎকার চায়। ছুটলাম মেইন প্রেস সেন্টারের দিকে। পেছনে পরে রইল স্ট্যাম্প, কয়েনের সঙ্গে শৈশবের স্মৃতি।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।