ধর্ম ডেস্ক : বিয়ের বিধান সৃষ্টির শুরুলগ্ন থেকেই পালন হয়ে আসছে। বিয়ে মহান আল্লাহপ্রদত্ত বিশেষ এক নেয়ামত। রাসুল (সা.)-এর গুরুত্বপূর্ণ সুন্নত। ঈমানের পূর্ণতার সহায়ক। বিয়ে প্রতিটি মানুষের স্বভাবজাত চাহিদাও পূরণ করে। ফলে চাহিদা পূরণার্থে ও চারিত্রিক আত্মরক্ষার জন্য ইসলাম শরিয়ত বিয়ের বিষয়াদি সহজ করেছে।
এছাড়াও বিয়ে আদর্শ পরিবার গঠন, জৈবিক চাহিদা পূরণ এবং মানসিক প্রশান্তি মানসিক প্রশান্তি ও বংশ বৃদ্ধির প্রধান উপকরণ। তবে বিয়ে যেহেতু শরিয়তের নিয়ম ও বিধি— তাই এক্ষেত্রে শরিয়তের নিয়ম অবশ্যই মান্য করতে হয়। শরিয়ত যেসব নিয়ম-বিধি নির্ধারণ করে দিয়েছে, সেগুলো অনুসরণ না করলে বিয়ে বৈধ হয় না।
যেসব নারীকে বিয়ে করা হারাম
নিম্নে বর্ণিত ১৩ প্রকার নারীকে বিয়ে করা হারাম—
১. আপন মা, বাবা ও দাদা-নানার স্ত্রীরা এবং তাদের কামভাব নিয়ে স্পর্শকৃত নারী। এরূপ ঊর্ধ্বতন সব দাদা-নানার স্ত্রীরা।
২. মেয়ে এবং ছেলে ও মেয়ের ঘরের সব নাতনি।
৩. সহোদরা, বৈপিত্রেয়-বৈমাত্রেয় ফুফু।
৪. সহোদরা, বৈপিত্রেয়-বৈমাত্রেয় খালা।
৫. সহোদরা, বৈপিত্রেয়-বৈমাত্রেয় বোন ও তাদের সন্তানাদি।
৬. সহোদরা, বৈপিত্রেয়-বৈমাত্রেয় ভ্রাতৃকন্যা ও তাদের সন্তানাদি।
৭. দুধমাতা, তার মাতা, দাদি, নানি—এমনিভাবে ওপরের সব নারী।
৮. স্ত্রীর মেয়ে, যদি স্ত্রীর সঙ্গে সহবাস হয়ে থাকে।
৯. পুত্রবধূ, আপন ছেলের হোক বা দুধছেলের হোক।
১০. আপন শাশুড়ি, দাদিশাশুড়ি, নানিশাশুড়ি এবং ওপরে যারা রয়েছে।
১১. দুই বোন একত্রীকরণ, এমনিভাবে ফুফু ও তার ভাতৃকন্যা, খালা ও তার ভাগ্নিকন্যাকে একসঙ্গে বিয়ের মধ্যে রাখা।
১২. উল্লিখিত রক্ত সম্পর্কের কারণে যারা হারাম হয়েছে, দুধ সম্পর্কের কারণেও তারা সবাই হারাম হয়।
১৩. যে মেয়ে অপরের বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ রয়েছে। এছাড়াও অন্য সব নারীকে বিয়ে করা হালাল। (দেখুন : সুরা নিসা, আয়াত : ২৩-২৪)
আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তোমাদের ওপর হারাম করা হয়েছে তোমাদের মাতাদের, মেয়েদের, বোনদের, ফুফুদের, খালাদের, ভাতিজিদের, ভাগ্নিদের, তোমাদের সেই সব মাতাকে যাঁরা তোমাদের দুধ পান করিয়েছেন, তোমাদের দুধবোনদের, তোমাদের শাশুড়িদের, তোমরা যেসব স্ত্রীর সঙ্গে মিলিত (দৈহিক সম্পর্ক স্থাপন) হয়েছ সেই সব স্ত্রীর অন্য স্বামী থেকে যেসব কন্যা তোমাদের কোলে রয়েছে তাদের, আর যদি তোমরা তাদের সঙ্গে মিলিত না হয়ে থাকো, তবে তোমাদের ওপর কোনো পাপ নেই এবং তোমাদের ঔরসজাত পুত্রদের স্ত্রীদের এবং দুই বোনকে একত্র করা (তোমাদের ওপর হারাম করা হয়েছে)। তবে অতীতে যা হয়ে গেছে তা ভিন্ন কথা। নিশ্চয়ই আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। আর (হারাম করা হয়েছে) নারীদের মধ্য থেকে অন্যের বিবাহিতদের।
তবে তোমাদের ডান হাত যাদের মালিক হয়েছে (দাসী) তারা ছাড়া। এটি তোমাদের ওপর আল্লাহর বিধান এবং এরা ছাড়া সব নারীকে তোমাদের জন্য হালাল করা হয়েছে, তোমরা তোমাদের অর্থের বিনিময়ে তাদের চাইবে বিয়ে করে, অবৈধ যৌনাচারে লিপ্ত হয়ে নয়। ’ (সুরা নিসা, আয়াত : ২৩-২৪)
স্ত্রীর বর্তমানে স্ত্রীর আপন বোন বিয়ে অবৈধ
কোনো নারী কারো বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ থাকাকালীন তার বোনের সঙ্গে বিয়ে সম্পূর্ণ হারাম। প্রথম বোনের সঙ্গে তালাক হয়ে গেলে মহিলার ইদ্দত শেষ হওয়ার পর অথবা বোন মারা গেলে তখন তার বোনের সঙ্গে বিয়ে বৈধ। (ফাতাওয়া হিন্দিয়া : ১/২৭৭)
পরস্পর লেগে থাকা যমজ দুই বোনের বিয়ের বিধান
জন্মগতভাবে পরস্পর জড়ানো যমজ দুই বোনের জন্ম হলে দুই বোনকে এক ব্যক্তি একত্রে বিয়ে করতে যেমন পারবে না, তেমনি দুই বোনকে দুই ব্যক্তির কাছে বিয়ে দেওয়াও সম্ভব নয়। শুধু এক বোনকে একজন লোকের কাছে বিয়ে দিলেও পর্দার বিধান রক্ষা করে তাকে নিয়ে সংসার করা সম্ভব হবে না। তাই এ সমস্যার একমাত্র সমাধান হবে, অপারেশনের মাধ্যমে দুই বোনকে আলাদা করার চেষ্টা করা, যা বর্তমান যুগে ব্যয়বহুল হলেও সম্ভব। অতঃপর দুই বোনকে পৃথক দুই ব্যক্তির কাছে বিয়ে দেওয়া। আর পৃথক করা কোনোভাবে সম্ভব না হলে তাদের চিরকুমারী থাকা ছাড়া কোনো উপায় নেই। (বাদায়েউস সানায়ে : ২/২৬২; ইমদাদুল ফাতাওয়া : ২/২৩৯)
দুধবোন ও তার মেয়েকে বিয়ে করা হারাম
শরিয়তের আলোকে দুধবোনকে বিয়ে করা সম্পূর্ণ হারাম ও নিষেধ। বংশীয় সম্পর্কে সহোদর বোনের মেয়েকে বিয়ে করা যেমন হারাম, দুধবোনের মেয়ে বিয়ে করাও তেমনি হারাম। (বুখারি, হাদিস : ২৬৪৫; বাদায়েউস সানায়ে : ৪/২)
তালাক গ্রহণ ছাড়া অন্যজনের সঙ্গে বিয়ে
আগের স্বামীর তালাক প্রদান ছাড়া অন্য কোনো বিয়ে শরিয়তের দৃষ্টিতে গ্রহণযোগ্য নয়। ওই বিয়ে বাতিল বলে গণ্য হবে। তেমনি আগের স্বামীর ইদ্দত চলাকালেও বিয়ে বাতিল হবে। (তাফসিরুল জালালাইন, পৃষ্ঠা ১০৪; রদ্দুল মুহতার : ৩/৫১৯)
অবৈধ শয্যাসঙ্গিনীর মেয়েকেও বিয়ে করা হারাম
যার সঙ্গে অবৈধ শারীরিক সম্পর্ক হয়েছে তার মেয়েকে বিয়ে করাও অবৈধ। কেননা ওই মেয়ের সঙ্গে এখন তার কন্যার সম্পর্ক হয়ে গেছে। (বাদায়েউস সানায়ে : ২/২৬০)
ইহুদি-খ্রিস্টান মেয়ে বিয়ে করা
বর্তমান যুগের ইহুদি-খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী বলে যারা পরিচিত, নির্ভরযোগ্য মতানুসারে তারা ইহুদি-খ্রিস্টানদের মূলনীতির অবিশ্বাসী। বর্তমানে বাস্তব আহলে কিতাব নেই বললেই চলে। এ ছাড়া বর্তমানে তাদের নারীদের বিয়ে করা অনেক ফিতনার কারণ হয়ে থাকে বিধায় তাদের বিয়ে করা বৈধ নয়।
তবে এ ধরনের নারীদের সঙ্গে বিয়ে হয়ে গেলে তার ব্যাপারে খোঁজ নিতে হবে যে সে প্রকৃত অর্থে মুসা (আ.) ও ঈসা (আ.)-এর আনীত ধর্মে বিশ্বাসী কি না। তাওরাত বা ইঞ্জিলে বিশ্বাসী কি না। এবং আল্লাহকে বিশ্বাস করে কি না। যদি সত্যিই তা হয় তাহলে তাকে দাওয়াতের মাধ্যমে মুসলমান বানানোর চেষ্টা করার শর্তে ওই বিয়েকে বাতিল বলা যাবে না। আর যদি প্রমাণিত হয় যে সে নাস্তিকতায় বিশ্বাসী, তাহলে এই বিয়ে বাতিল বলে গণ্য হবে। (রদ্দুল মুহতার : ৩/৪৫; ফাতাওয়া দারুল উলুম : ৭/২৬১)
হিন্দু-মুসলিম বিয়ের বিধান
শরিয়তের দৃষ্টিতে মুসলিম পুরুষ কোনো হিন্দু মহিলাকে, তেমনি মুসলিম নারী হিন্দু পুরুষকে বিয়ে করতে পারে না, যতক্ষণ তারা ইসলাম গ্রহণ না করে। ইসলাম গ্রহণ ছাড়া বিয়ে অবৈধ। এ ধরনের বিয়ে শরিয়তে বিয়ে বলে গণ্য হবে না। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তোমরা মুশরিককে বিয়ে কোরো না, যতক্ষণ তারা ঈমান না আনে।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ২২১)
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।