স্পোর্টস ডেস্ক : ক্রিকেটকে বলা হয় ভদ্রলোকের খেলা অন্যদিকে ভারতের মত বড় ক্রিকেটিং দেশে ক্রিকেটকে ধর্ম হিসেবেই দেখা হয়। কিন্তু আসলে কিছু ক্রিকেট প্লেয়ার ক্রিকেটের মত সাফসুতরো খেলার ভাবমূর্তিকে খারাপ করে দিয়েছেন। মাঠে অভদ্র ব্যবহার, খেলা চলাকালীন বলের সঙ্গে ট্যাম্পারিং হোক বা ম্যাচ ফিক্সিং কিংবা মাঠের বাইরে স্ক্যান্ডল এমন বেশ কিছু কারণেই এই সমস্ত ক্রিকেটাররা বিতর্কিত খবরের শিরোনামে থাকেন। আজকের এই প্রতিবেদনে আমরা ক্রিকেট জগতের ১০ চমকে দেওয়ার মত স্ক্যান্ডলের কথা জানব।
১. শেন ওয়ার্ন : ক্রিকেটের কিংবদন্তী লেগ স্পিনার শেন ওয়ার্নের সঙ্গে বিতর্কের বেশ পুরোনো সম্পর্ক রয়েছে। বৃটিশ নার্স ডোনা রাইটের সঙ্গে অসভ্যতাই হোক বা মিডলসে ক্সে র বিরুদ্ধে ইংলিশ কাউন্টি ম্যাচের আগে ২৫ বর্ষীয় বৃটিশ মডেলের সঙ্গে ফুর্তির মামলা, ওয়ার্ন আর বিতর্কের সবসময়ই সম্পর্ক থেকেছে। ২০১১ সালে আইপিএল চলাকালীন নিজের গার্লফ্রেন্ড এলিজাবেথ হার্লের সঙ্গে ক্রিকেট স্টেডিয়ামে সার্বজনিকভাবে ‘কিস’ করার কারণে ওয়ার্ন বিতর্কে জড়িয়েছিলেন শুধু এটাই নয়, ২০০৬ এ ওয়ার্নের টেপও পাওয়া গেছে যেখানে ওয়ার্নকে দু’দুটি মেয়ের সঙ্গে আপত্তিজনক অবস্থায় পাওয়া গিয়েছিল। নিজের এই ভুল আচরণের কারণেই শেন ওয়ার্নের হাত থেকে অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেট দলের সহঅধিনায়কত্ব ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছিল।
২. ক্রিস গেইল : ক্রিকেট দুনিয়ার সবচেয়ে আক্রামণাত্মক ব্যাটসম্যানদের মধ্যে একজন হলেন ক্রিস গেইল। গেইলেরও বিতর্কের সঙ্গে যথেষ্ট পুরোনো সম্পর্ক রয়েছে। ক্রিস গেইল এমন একজন মানুষ যার ভাবমূর্তি মাঠের ভেতরে এবং বাইরে দু’জায়গাতেই যথেষ্ট আকর্ষক। গেইলকে মাঠের বাইরে হামেশাই পার্টি করতে দেখা যায়। ২০১২য় ওয়ার্ল্ড টি২০ চলাকালীন গেইলকে শ্রীলঙ্কার এক হোটেল রুমে তিনজন বৃটিশ মেয়ের সঙ্গে ভীষণই সন্দিগ্ধ অবস্থায় পাওয়া যায়। কিন্তু ঠিক তারপরেই ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের বডিগার্ড পুলিশকে ডেকে ওই তিনটি মেয়েকে তাদের হাতে তুলে দেন এবং গেইলের নাম খারাপ হওয়া থেকে বেঁচে যায়। সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়ায় হওয়া বিগব্যাশ লীগেও গেইলকে একজন টিভি সঞ্চালিকার সঙ্গে ফ্লার্ট করতে দেখা যায়। সেই সময় মেল ম্যাকলিন নামের ওই সঞ্চালিকাকে গেইল বলেন, “আমি এই জন্যই রান করি যাতে তোমার সঙ্গে কথা বলতে এবং তোমাকে কাছ থেকে দেখার সুযোগ আমি পাই”। গেইল ২০১৫ বিশ্বকাপের সময়ও হোটেল স্টাফ একজন মেয়েকে তার সঙ্গে সম্পর্ক বানানোর কথাও বলেন।
৩. কেভিন পিটারসেন : কেভিন পিটারসেন ইংল্যান্ডের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর ক্রিকেট প্লেয়ারদের একজন। ক্রিকেট দুনিয়ার তার ভাবমূর্তি খুব একটা পরিস্কার নয়। পিটারসেনের নামও বিগ ব্রাদার ফেম থাকা বিউটি কুইন বনেসসা নিম্মোর সঙ্গে জড়িয়েছিল। পিটারসেনের সঙ্গে সম্পর্ক থাকা এই মডেল অভিনেত্রীকেকে না চেনে। দুজনের বেশ কিছু মাস ধরে অ্যাফেয়ার চলে। পরে নিম্মো এক ইন্টারভিউ চলাকালীন স্বীকার করে নেন যে তিনি একজন নামী ক্রিকেটারকে বদনাম করতে চেয়েছিলেন। তিনি পিটারসেনের বদনাম করে বলেছিলেন, “ কেভিন আমাকে করার জন্য বাধ্য করত এবং পুরো দিন ধরে আমার শরীরকে কষ্ট দিত”। পিটারসেন তাকে ছেড়ে দেওয়ার পর তিনি এইসব কথা স্বীকার করে নেন।
৪. শাহিদ আফ্রিদি : বুম বুম নামে বিখ্যাত প্রাক্তন পাকিস্থান অধিনায়ক শাহিদ আফ্রিদিও কারও চেয়ে কম যান না। তার নামও ক্রিকেটের বাইরে কলঙ্কের কারণে যথেষ্ট বদনাম। ২০০০ সালে সিঙ্গাপুরে একটি বড় টুর্নামেন্টে যাওয়ার আগে আফ্রিদি নিজের সতীর্থ হাসান রাজা এবং আতিক উর জামানের সঙ্গে করাচির একটি হোটেলে কামরায় ভীষণই যৌবনবতী এবং আকর্ষক মহিলাদের সঙ্গে আপত্তিজনক অবস্থায় ধরা পড়েন। পরে এই তিন ক্রিকেটারই সংবাদমাধ্যমে বদনাম হওয়ার ভয় থেকে বাঁচার জন্য এটা বলেছিলেন যে ওই সমস্ত মহিলারা শুধুমাত্র তাদের অটোগ্রাফ নেওয়ার জন্য হোটেলের রুমে এসেছিলেন, অন্য কোনও কারণে নয়। যদিও পাকিস্থান ক্রিকেট বোর্ড তাদের কথা না মেনে ওই তিন ক্রিকেটারকে কেনিয়ায় আয়োজিত চ্যাম্পিয়নস ট্রফি খেলার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল। এছাড়াও ভারতীয় মডেল আরশি খান প্রকাশ্যে জানিয়েছিলেন যে তিনি শাহিদ আফ্রিদির সঙ্গে সহবাস করেছেন এবং তার বাচ্চার মা হতে চলেছেন। যা নিয়ে আফ্রিদি আরশিকে চেনেন না বলে মিডিয়ায় মন্তব্য করেন। এর পরেই বেশ কয়েকবার ভিডিয়ো ম্যাসেজের মাধ্যমে আরশি আফ্রিদির সঙ্গে নিজের সম্পর্কের কথা ঘোষণা করেন। এছাড়াও আরশি টুইটারে ম্যাসেজ করে জানান, “ হ্যাঁ আমি আফ্রিদির সঙ্গে করেছি। কারও সঙ্গে শোয়ার জন্য আমাকে কি ভারতীয় মিডিয়ার অনুমতিনিতে হবে? এটা আমার ব্যক্তিগত ব্যাপার। আমার কাছে এটা ভালবাসা”। পরে অবশ্য রাজীব খান্ডেলওয়ালের চ্যাট শো জ্যাজবাটে আরশি জানান, তার ভুল হয়ে গেছে এইভাবে সর্বসমক্ষে এই কথা বলা তার উচিত হয় নি। তিনি বলেন, “ আমি মিস্টার আফ্রিদিকে ভীষণ সম্মান করি। তিনি আমার জন্য অনেক কিছু করেছেন। ওই টুইটটা করা আমার ভুল ছিল, এভাবে ওপেনলি এসব কথা বলা ঠিক হয় নি। আফ্রিদি সাহেবেকে বহুত এহসান হ্যায় মুঝ পর (আফ্রিদি সাহেবের আমার উপর অনেক ঋণ আছে)”।
৫. হার্সেল গিবস : বদনাম খেলোয়াড়দের নিয়ে কথা হবে আর হার্সেল গিবসের নাম থাকবে না তা কি করে হয়। তিনিও যথেষ্ট রঙিন মেজাজের ব্যাটসম্যান ছিলেন। গিবস ১৯৯৯ সালের বিশ্বকাপের নিজের আত্মজীবনী ‘দ্য পয়েন্টে’ নিজের সমস্ত স্ক্যান্ডালের কথা খুলে লিখেছিলেন। তিনি লিখেছিলেন, “ অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ম্যাচের আগে আমার মনে হয়েছিল যে আজ আমি সেঞ্চুরি করব। কারণ ম্যাচের ঠিক একদিন আগেই একটি মেয়ে আমার বিছানায় ছিল এবং ও আমাকে ভীষণই প্রেরণা দিয়েছিল। ম্যাচের জন্য, ও ওই হোটেলে কাজ করত। তখন আমার মনে হয়েছিল ওই মেয়েটি আমার জন্য লাকী চার্ম। যখন আমি ব্যাটিং করার জন্য নামলাম, তখন ও মাঠেও উপস্থিত ছিল। কিন্তু যখন আমি ফিল্ডিং করার সময় ক্যাচ ছাড়ি তখন ও মাঠে ছিল না”। গিবস আরও জানিয়েছে দলের বাকি খেলোয়াড়রাও তার সঙ্গে হোটেল রুমে অনেক মেয়েদের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন। যদিও গিবস তাদের নাম বলেন নি।
৬. ডারেল টাফি : কিউয়ি দলের প্রাক্তন জোরে বোলার ডারেল টফির নামও রয়েছে এই তালিকায়। টাফি ২০০৫ এ বিতর্কে জড়ান যখন দুজন ইংলিশ যাত্রী মোবাইলে তার একটি ভিডিয়ো বানায়। সেই সময় ওই ভিডিয়োতে টাফিকে একজন ২৩ বছর বয়েসী সেলস গার্লের সঙ্গে করতে দেখা গিয়েছিল। পড়ে যখন ওই ভিডিয়ো লীক হয়ে যায় তখন টাফি এবং সেই মেয়েটি একে অপরকে চিনতে অস্বীকৃত হন।
৭. আসাদ রাউফ : পাকিস্থানের অ্যাম্পায়ার আসাদ রাউফের নামও এই তালিকায় শামিল রয়েছে। আসাদ রাউফ ভারতীয় মডেল লীনা কাপুরের সঙ্গে সম্পর্ক করতে গিয়ে ধরা পড়েন। স্বয়ং লীনা কাপুর এই কথা স্বীকার করেন যে আসাদ রাউফের তার সঙ্গে অনেক দিন ধরেই অ্যাফেয়ার ছিল। তিনি জানিয়েছিলেন যে আসাদ তাকে বিয়ে করবে বলে প্রতিশ্রুতিও দিয়েছিল। পরে আসাদ মিডিয়ায় বলেন, “ আমি ৫৬ বছরের লোক আর আমার দুটি বাচ্চাও আছে। আমি নিজের পারিবারিক জীবনে খুশিতে রয়েছি। আমি কারও সঙ্গেই করি নি আর না তো বিয়ের জন্য বলেছি”।
৮. মহম্মদ আক্রম এবং সাকলিন মুস্তাক : বদনাম খেলোয়াড়দের তালিকায় পাকিস্থানের নাম সবার উপরে মানা হয়। আক্রম এবং মুস্তাকের নামও এই তালিকায় রয়েছে। সাউথ আফ্রিকা সফরে ১৯৯৮এর ফেব্রুয়ারি মাসে এই দুজনকে দোষী হিসেবে পাওয়া গিয়েছিল। এই দুই পাকিস্থানী বোলারকে হোটেলের রুমে গড়বড় করতে গিয়ে ধরা পড়েন। আসলে এই দুজনের ব্যাপারে এটা বলা হয়েছিল যে এই দুজন কোনও মেয়ের জন্য হোটেল রুমে কোনও কথা নিয়ে ভীষণই মারপিটে জড়িয়ে পড়েছিলেন। কিন্তু পরে এই দুজন ব্যাপারটাকে মিথ্যে বলে জানিয়েছিলেন।
৯. অ্যান্দ্রে নেইল : দক্ষিন আফ্রিকার প্রাক্তন জোরে বোলার অ্যান্দ্রে নেইলও কারও থেকে পিছিয়ে নেই। নেইলের নামও বিতর্কে জড়ায়। নেইল স্বীকারও করেছিলেন যে তিনি একজন দারুণ ফর্সা শরীর এবং নীল চোখের মেয়ের চক্করে পড়েছিলেন। যার নাম জিলানা কুতলিওসোভা। নেইল জানিয়েছিলেন যে তিনি ওই মেয়েটিকে কখনওই জানান নি যে তিনি বিবাহিত এবং তার সঙ্গে সম্পর্কে জড়ান। পরে জিলানাও ২০১০ এ স্বীকার করেন যে নেইলের সঙ্গে তার অ্যাফেয়ার ছিল এবং তার সঙ্গে ইন্টারনেটেই তার প্রথম পরিচয় হয়েছিল।
১০. মাইক গ্যাটিং : মাইক গ্যাটিংকে কে না জানে। তিনি সেই ইংলিশ ব্যাটসম্যান যাকে শেন ওয়ার্ন ‘ বল অফ দ্য সেঞ্চুরি’র মাধ্যমে আউট করেছিলেন। মাইক গ্যাটিংকে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে ট্রেন্টব্রিজে হতে চলা টেস্টের আগে একটি বারে কাজ করা মেয়ে লোইস শিম্পনের সঙ্গে হোটেল রুমে আপত্তিকর অবস্থায় দেখা গিয়েছিল। যার পরে গ্যাটিং এই ব্যাপারটাকে সম্পূর্ণ অস্বীকার করে যান। সেই সময় গ্যাটিং ইংল্যান্ডের অধিনায়ক ছিলেন। মাইক শুধু মেয়েদের সঙ্গে মেলামেশার কারণেই জনপ্রিয় ছিলেন না, অনেক বেশি খাবার খাওয়ার কারনেও জনপ্রিয় ছিলেন তিনি।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।