জুমবাংলা ডেস্ক : প্রচণ্ড গরম পৃথিবীর বেশিরভাগ অংশে ছড়িয়ে পড়ছে। একটি বিশ্লেষণ বলছে, গত ২৯ জুন থেকে ৫ জুলাই সাতদিন ছিল ৪৪ বছরের ইতিহাসে পৃথিবীর গড় তাপমাত্রায় সবচেয়ে উষ্ণতম সপ্তাহ। এটিকে জলবায়ু পরিবর্তনের চরমসীমার সর্বশেষ ভয়াবহ মাইলফলক বলা হচ্ছে।
গত বুধবার (৫ জুলাই) পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা অনানুষ্ঠানিকভাবে সর্বোচ্চ ৬২ দশমিক ৯ ডিগ্রি ফারেনহাইট (১৭ দশমিক ১৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস) রেকর্ড করা হয়েছে। এমনটাই তথ্য পাওয়া গেছে মেইন বিশ্ববিদ্যায়লের ‘ক্লাইমেট রিঅ্যানালাইজার’-এর মাধ্যমে। এ ক্ষেত্রে স্যাটেলাইটের তথ্য এবং কম্পিউটার স্টিমুলেশন ব্যবহার করে বিশ্বের আবহাওয়া সংক্রান্ত পরিস্থিতি জানা সম্ভব হয়।
ক্লাইমেট রিঅ্যানালাইজারের তথ্য অনুযায়ী, ২৯ জুন থেকে ৫ জুলাই সাত দিনের সময়কালে দৈনিক গড় তাপমাত্রা ৪৪ বছরের সংরক্ষণ করা রেকর্ডের সব সপ্তাহের চেয়ে .০৮ ডিগ্রি ফারেনহাইট (.০৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস) বেশি ছিল।
আমেরিকান বৈজ্ঞানিক সংস্থা মহাসাগরীয় ও বায়ুমণ্ডলীয় প্রশাসন (এনওএএ) এক বিবৃতিতে বলছে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে আমরা একটি উষ্ণ সময়ের মধ্যে রয়েছি। আমরা বিশ্বের অনেক জায়গায় রেকর্ড পরিমাণ তাপমাত্রা দেখতে পাচ্ছি।
জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, সর্বশেষ পরিসংখ্যান বলে দেয় জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। প্রয়োজনীয় গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপগুলো নিতে দেরি হচ্ছে, যার ফলে আমরা একটি বিপর্যয়কর পরিস্থিতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছি।
এদিকে ঘন ঘন এবং গ্রমাগত বাড়তে থাকা তীব্র তাপপ্রবাহ বিশ্বজুড়ে জীবনকে ব্যাহত করছে। প্রাণঘাতী পরিবেশ সৃষ্টি করছে তাপমাত্রা। সাহারা মরুভূমির প্রবেশদ্বার মালির টিম্বুকটুতে ৫০ বছর বয়সী ফাতুমাতা আরবি বলেন, এ ধরনের তাপ নতুন। সাধারণত গরমের মৌসুমে রাতে কিছুটা শীতল থাকে। কিন্তু এই বছর রাতেও গরম ছিল। আমি কখনও এমন দেখিনি।
সম্প্রতি মিশরে গ্রীষ্মকালীন তাপপ্রবাহ বয়ে যায়। তাপমাত্রা ১০০ ডিগ্রি ফারেনহাইট (৩৭.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস) ছাড়িয়ে গিয়েছিল সে সময়। গরম ও আর্দ্রতা থেকে বাঁচতে দেশটির শিশুরা নীল নদে ঘুরে বেড়ায় এবং পথচারীরা ছায়া খুঁজে বেড়ান।
আটলান্টিক মহাসাগরের তীরে মৌরিতানিয়ার রাজধানী নোয়াকচোট শহরের মানুষও তীব্র তাপ অনুভব করছে। বাগানে কাজ করা ৫৬ বছর বয়সী কৃষক আবদুল্লাহি সাই’র মতে, পরিবেশগত নানা পরিবর্তনের কারণে আমার আয় কমে গেছে। গরমের কারণে আমি কার্যত নড়াচড়া করতে পারছি না। গরমের কারণে সার ও শাকসবজি কিনতে বিকেল ৫টা বা তার পরে গ্রাহকরা বাইরে বের হন।
মেরিল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়ুমণ্ডলীয়, মহাসাগরীয় ও আর্থ সিস্টেম সায়েন্সের অধ্যাপক এবং ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজির ভিজিটিং ফ্যাকাল্টি রঘু মুর্তুগুদ্দে বলেন, এই সপ্তাহে মহাসাগরে এবং বিশেষত অ্যান্টার্কটিকায় তাপমাত্রা অস্বাভাবিক ছিল।
১০ বছর ধরে আর্কটিক এবং অ্যান্টার্কটিক নিয়মিত পরিদর্শন করা মেরু অনুসন্ধানকারী এবং শিক্ষাবিদ চারি বিজয়রাঘবন বলেন, বৈশ্বিক উষ্ণতা পৃথিবীর উভয় মেরুতেই সুস্পষ্ট। এটি বন্যপ্রাণীদের হুমকির মুখে ফেলেছে। উষ্ণ জলবায়ু অ্যান্টার্কটিকায় এভিয়ান ফ্লু (পক্ষী ইনফ্লুয়েঞ্জা) ছড়িয়ে পড়ার মতো ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলতে পারে। এর ফলে এই অঞ্চলের পেঙ্গুইন এবং অন্যান্য প্রাণীদের জন্য বিধ্বংসী পরিণতি বয়ে আনবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।