আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ক্রিপ্টোকারেন্সি জালিয়াতির ঘটনায় গত ১০ বছর ধরে বিশ্বজুড়ে আলোচনা-সমালোচনার শীর্ষে ছিলেন ড. রুজা ইগনাতোভা। যুক্তরাষ্ট্রের তদন্ত সংস্থা এফবিআইর ‘মোস্ট ওয়ান্টেড’ তালিকায় থাকা এই নারীকে শেষ পর্যন্ত তার বিশ্বস্ত লোকেরাই হত্যা করেছেন বলে জানা যায়।
সোমবার (৩ জুন) সংবাদমাধ্যম বিবিসির এক প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা যায়।
জার্মান উদ্যোক্তা ড. রুজা ইগনাতোভা ক্রিপ্টোকারেন্সি জালিয়াতির ঘটনায় আলোচনায় আসেন ১০ বছর আগে। বুলগেরিয়ান এই নারী বিশ্বের লাখ লাখ মানুষের সম্পদকে জিম্মি করে ২০১৭ সালে একেবারে লাপাত্তা হয়ে যান। এতদিনেও ‘ওয়ান কয়েন’ নামের ক্রিপ্টোকারেন্সির এই উদ্ভাবকের কোনো খোঁজ মিলেনি হাজার চেষ্টা করেও।
জানা যায়, ১৭৫টি দেশের অসংখ্য মানুষের গচ্ছিত ৪০০ কোটি ডলার নিয়ে উধাও হয়ে যাওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রের তদন্ত সংস্থা এফবিআইর কাছে মোস্ট ওয়ান্টেড ছিলেন ইগনাতোভা। লাপাত্তা হওয়ার পর এই রহস্যময়ী নারীর কপালে আসলে কী ঘটেছিল তা নিয়ে চলে ব্যাপক অনুসন্ধান। ইগনাতোভার বিষয়ে প্রায় ১ বছরের বেশি সময় ধরে অনুসন্ধান চালায় বিবিসি। সংবাদমাধ্যমটি জানতে পারে, বুলগেরিয়ার একটি মাফিয়া সংগঠনের প্রধান হিস্তোফোরস নিকোস আমানতিদিসের সঙ্গে ইগনাতোভার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। হিস্তোফোরস ‘তাকি’ নামেই বেশি পরিচিত।
এফবিআইর পাশাপাশি মার্কিন অভ্যন্তরীণ রাজস্ব পরিষেবার পক্ষে ‘ওয়ান কয়েন’ নিয়ে তদন্ত করছিলেন রিচার্ড রেইনহার্ড। মাফিয়া নেতার সঙ্গে ইগনাতোভার সম্পর্কের বিষয়ে বর্তমানে অবসরে থাকা এই কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা জানতে পেরেছিলাম, একসময় ক্ষমতাধর এক মাদক কারবারি ইগনাতোভার নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিলেন। ইগনাতোভা তার দেহরক্ষী সেই মাদক কারবার করা তাকিকে নিয়ে বুলগেরিয়ার বিমানে চড়ে গ্রিসের এথেন্সে গিয়েছিলেন। সেখান থেকে পরে দেহরক্ষী ফিরে এলেও, ইগনাতোভা আর ফেরেননি।
এই বিষয়ে একজন সহকারী অ্যাটর্নি জানান, ‘আমাদের কাছে প্রমাণ আছে, বুলগেরিয়ার সর্বকালের সবচেয়ে বড় মাদক পাচারকারী ওয়ান কয়েনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত ছিল। রুজা ইগনাতোভার ব্যক্তিগত নিরাপত্তারক্ষী হিসেবে তিনি কাজ করেছিলেন।’
তাকি বুলগেরিয়ায় একটি আলোচিত নাম। অনেকটা মেক্সিকোর মাদক সম্রাট এল চ্যাপো কিংবা কলম্বিয়ার মাফিয়া বস পাবলো এসকোবারের মতোই তার পরিচিতি আছে বুলগেরিয়ায়। বুলগেরিয়ার সংঘটিত অপরাধ চক্রের প্রধান এবং একজন মাদক চোরাচালানি হিসেবে তাকিকে সন্দেহ করা হয়। জানা যায়, মাদকের অর্থ পাচারের জন্য তাকি ওয়ান কয়েনের নেটওয়ার্ক ব্যবহার করতেন বলে সন্দেহ করে পুলিশ।
তাকির সম্পর্কে বুলগেরিয়ার সাবেক উপমন্ত্রী ইভান রিস্তানভ বলেন, ‘তাকি অনেকটা ভূতের মতো। তাকে কখনোই খুঁজে পাওয়া যায় না। আপনি কেবল তার সম্পর্কে শুনতে পাবেন। তিনি আপনার সঙ্গে অন্য লোকদের মাধ্যমে যোগাযোগ করবেন। যদি তার নির্দেশ অমান্য করেন, তবে আপনি পৃথিবী থেকে গায়েব হয়ে যাবেন। তিনিই ছিলেন একমাত্র ব্যক্তি যিনি তদন্ত এবং বিদেশি সংস্থাগুলোর কাছ থেকে ইগনাতোভাকে রক্ষা করতে পারতেন।’
দুর্ধর্ষ মাফিয়া তাকি এখন দুবাইতে থাকেন বলে ধারণা করা হয়। বুলগেরিয়ার অভ্যন্তরীণ সূত্রগুলো জানায়, ইগনাতোভা নিজের সুরক্ষার জন্য তাকিকে প্রতি মাসে ১ লাখ ইউরো দিতেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ইগনাতোভার এই রক্ষকই হয়তো ক্ষেপে ওঠেন ইগনাতোভার ওপর।
বুলগেরিয়ার অনুসন্ধানী সাংবাদিক দিমিতার স্তোয়ানভের ২০২২ সালের একটি প্রতিবেদনের বরাতে জানা যায়, নিখোঁজ হওয়ার এক বছর পর ইগনাতোভাকে হত্যা করা হয়। এ ব্যাপারে সেই সাংবাদিক একটি পুলিশ প্রতিবেদন অনুসারে উল্লেখ করেন, তাকির শ্যালক মাতাল অবস্থায় শুনেছিলেন, ২০১৮ সালের শেষের দিকে তাকির নির্দেশে ইগনাতোভাকে খুন করা হয়। পরে তার দেহটি টুকরো টুকরো করে একটি প্রমোদতরি থেকে আইওনিয়ান সাগরে ফেলে দেয়া হয়েছিল।
তাকির সঙ্গে অতীতে কাজ করেছেন এমন কিছু সহযোগী দাবি করেছেন, ইগনাতোভা নিখোঁজ হওয়ার পর তার বেশ কয়েকটি সম্পত্তি এখন তাকির সঙ্গে সম্পৃক্ত লোকেরা ভোগ করছেন।
ইগনাতোভাকে হত্যা করা হয়েছে- এমন দাবিতে তাকিকে কখনও গ্রেফতার করা হয়নি। ইগনাতোভার মরদেহেরও কোনো খোঁজ মেলেনি। তদন্তকারীরা বলছেন, তাকির বিচার করার জন্য তাদের কাছে যথেষ্ট প্রমাণ নেই।
তবে অনেকে আবার এটাও দাবি করেন, ইগনাতোভা আসলে বেঁচে আছেন। মূলত তার ওপর থেকে তদন্ত সংস্থাগুলোর দৃষ্টি সরাতেই মৃত্যুর খবর ছড়ানোর কৌশল সাজানো হয়েছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।